অশরীরী বউ
অপরিচিত মেয়েলি কণ্ঠে কেউ পিছন থেকে বলে উঠল,
অপরিচিতাঃ - জয়।
আমি
পিছনে থাকালাম কেউ নেই আশেপাশে। তাহলে কে আমার নাম ধরে ডাকল?
দূর মনে হয়
ভুল শুনেছি। আসলে একটা ফ্রেন্ডের বাসা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম।
রাত প্রায় ৯ঃ০০
টা হবে। আর এই রাস্তাটা অনেকটাই নির্জন।
তবে রাস্তার পাশে হেড লাইটের
সোডিয়াম আলোয় সব কিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
আর আমার কখনো এমন দেরী হয় না।
আজ একটু দেরী হল।
বাসায় গিয়ে আম্মু-আব্বুর বকা খেতে হবে। অবশ্য তার
প্রস্তুতি নিয়েই বাড়ি ফিরছি।
আর কিছু না ভেবে আবার পথ চলা শুরু করলাম।
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।
আম্মু চিন্তা করছে। সাথে আমার কুত্তি বোনটাও।
আর
এমনিতেই এতো রাতে আমি বাইরে বের হইনা তাই ভয়ও করছে।
ভাবতে ভাবতেই আবার কারো
ডাক শুনলাম। সেই আগের অপরিচার গলায়,
অপরিচিতাঃ - জয়। আমি তাড়াতাড়ি করে পিছনে থাকালাম। কেউ নেই।
এবার একটু ভয় পেলাম। তাড়াতাড়ি করে চলতে শুরু করলাম।
অপরিচিতাঃ - জয় সাহেব। একটু দাড়ান।
এখন আমি প্রায় অস্থির হয়ে যাবো এমন ভাব
নিয়ে পিছনে থাকালাম।
এখন অবশ্য সেই অপরিচিতার দেখা মিলল। একটা মেয়ে।
ভয়ঙ্কর সুন্দরী ।
এমন সুন্দরী মেয়ে আমি কখনো দেখিনি। তাই এক দৃষ্টিতে
থাকিয়ে থাকলাম।
মেয়েটার একটা লেহেঙার মতো কিছু পড়া। মুখে সাজ নেই।
ঠোঁটে
লিপ্সটিক নেই, চুলগুলো লম্বা।
সচরাচর এমন সুন্দরী মেয়েকে এমন সাধাসিধে দেখা
যায় না।
আমিঃ - জি বলুন। আর আপনি আমার নাম জানলেন কি করে? ( ভ্রু কুঁচকে বললাম)
অপরিচিতাঃ - সেটা যে করেই হোক আমি জেনেছি। মেয়েটি কন্ঠ কেমন যেনো।
আমিঃ - আচ্ছা, কি জন্য ডেকেছিলেন বলেন?
অপরিচিতাঃ - আপনি একা একা যেতে ভয় পাচ্ছিলেন তাই এগিয়ে দিতে আসলাম।
মেয়েটির কথায় আমি বিস্ময়ের চোখে তাকালাম,
আমিঃ - আমি ভয় পাচ্ছি আপনি জানলেন কি করে?
অপরিচিতাঃ - সেটা আপনার না জানলেও চলবে। চলুন আপনাকে এগিয়ে দিই।
মেয়েটি
আমার পাশে এসে দাঁড়াল। ওর গায়ে একটা পারফিউম এর ঘ্রানের আভাস পাচ্ছি।
খুব
পরিচিত মনে হচ্ছে। অনেক আগে ঘ্রানটা অনুভব করেছিলাম।
মেয়েটির আচার-আচরন
আমার মোটেও ভালো ঠেকছে না। ছিনতাইকারী না তো।
সাথে সাথে মেয়েটি আমার মনে
মনে বলা কথাটির জবাব দিয়ে দিলো,
অপরিচিতাঃ - নাহ, আমি কোনো ছিনতাইকারী
না। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
এই মেয়েটি আমার মনের কথা গুলো জানতে পারছে কি
করে? আমি এবার আরো ভয় পেয়ে গেলা।।
অপরিচিতাঃ - ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
আমি আপনার পাশে আছি তো। চলুন। (ঠান্ডা কন্ঠে বলল)।
আমি হাটা শুরু করলাম।
কোনো কথা বলছি না। মেয়েটির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম।
আমার দিকে অদ্ভুত
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
মেয়েটির গায়ের রঙ একেবারে সাদা।
মনে হচ্ছে গা দিয়ে সাদা কিছু উপচে পড়ছে আগুনের লাভার মতো। ফ্যাকাশে মুখ।
আমিঃ - আচ্ছা, আপনি আমার মনের কথা জানতে পারছেন কি করে?
অপরিচিতাঃ - বললাম না এটা জিজ্ঞেস করবে না। (আগুন জড়ানো কন্ঠে)।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
আমিঃ - জি আচ্ছা।আর কিছু বললাম না। অনেকপথ এগিয়ে এসেছি।
আর কিছু পথ গেলেই আমাদের বাসা। আসলে গাড়ি নিয়ে আসিনি।
তাই হেটে যেতে হচ্ছে।
আমিঃ - পরিচয়তো জানতে পারি। ( আস্তে করে বললাম)।
মেয়েটি আমার দিকে তাকাল।রেগে তাকায়নি অবশ্য।
অপরিচিতাঃ - হুম, আমি নিনেন। আর কিছু জানার প্রয়োজন নেই।
আমিঃ - নিনেন! ! এটা কোনো নাম হলো। কি অদ্ভুদ?
নিনেনঃ - এটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
আমিঃ - আচ্ছা। আমি জয়। আর কিছু বলতে না দিয়ে মেয়েটি বলে উঠল,
নিনেনঃ - জানি বলতে হবে না।
আমি অবাক হলাম আবারও। মেয়েটি প্রতিটি কাজে আমি অবাক হচ্ছি।
আমি আর কোনো কথা বললাম না। কিছুক্ষণ পর আবার বললাম,
আমিঃ - এতো রাতে আপনি একা এই রাস্তায় কি করেন?
নিনেনঃ - তোমাকে এগিয়ে দিতে আসলাম। বাহ!! কি শুনলাম?
ডিরেক্ট আপনি থেকে তুমি।
আমিঃ - আপনি জানেন কি করে আমার সাহায্যের দরকার?
নিনেন আমার কান টেনে ধরল।
নিনেনঃ - এইভাবে। আমি ব্যাথা পেয়ে, আউউউ। বলে উঠলাম।
নিনেন আমার কান ছেড়ে
দিলো। খুব রেগে আছে বোধ হয়।
এই মেয়েকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই রেগে যায়।আমি আর
কোনো কথা বললাম না।
মেয়েটাকে আমার ভয় করছে। আমি ভয়ে ভয়ে আড় চোখে তাকালাম
নিনেনের দিকে।
মেয়েটা এখনো আমার দিকে এক দৃষ্টতে তাকাচ্ছে। কি করবো ভাবছি?
দৌড় দিবো নাকি।
নিনেনঃ -দৌড় দিয়ে লাভ নেই। (ওর নিজের মতো করে বলল।
যেন
কিছুই হয়নি)। আমি কান্না করে দিবো এমন ভাব। এই মেয়েটা কি?
আমার মনের সব কথা
জেনে যায় কিভাবে? আমি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নিনেনের দিকে।
নিনেন এখন
আমার দিকে এখন তাকাচ্ছে না।
নিনেনঃ - তাড়াতাড়ি চলো। তোমার আম্মু
নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে।
আমি তাড়াতাড়ি করে চলা শুরু করলাম। নিনেনের প্রতি
আমার মায়া জন্মে যাচ্ছে।
ওর চেহারায় যাদু আছে। একটা লোকালয়ে চলে এলাম।
মানুষের বেশ সমাগম চলছে এখানে।
এখন আর চিন্তা নেই। যেতে পারবো।
নিনেনঃ -
তাহলে যাও। আমি নিনেনের দিকে তাকালাম। কোথায় গেলো?
এখানে তো নেই দেখি।
চারপাশে খুজলাম নেই। কোথায় গেলো তাহলে। অদ্ভুত! !
আর কোনো কিছু না ভেবে
চলতে শুরু করলাম। বাসায় এসে দেখলাম দড়জা খুলা।
মানে আব্বু-আম্মু জেগে আছে।
তবুও আস্তে আস্তে ঘরে ডুকলাম।
কেউ নেই দেখে আমি আস্তে আস্তে দৌড়ে রুমের
দিকে যেতে লাগলাম।
সিড়ি দিয়ে উঠবো এমন সময়,
আম্মুঃ - দাড়াও। আমি ষ্টেচুর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। এই ধরা পড়লাম।
কি করি এখন?
আমিঃ - আম্মুউ, হয়েছে কি.. (আদুরে স্বরে বললাম) আম্মু আমাকে আঠকে দিয়ে বলল,
আম্মুঃ - চুপ কর তুমি। তুমি এতক্ষণ বাহিরে ছিলে কেনো?
তোমাকে না বলেছি সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে। ( রেগে গিয়ে)।
আমিঃ - আসলে আম্মু একটু দেরী হয়ে গেছে। আর হবে না। (মাথা নিচু করে বললাম)
আম্মুঃ - মনে থাকে যেন। আর এমন দেরী হলে তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
আব্বুঃ - কে আমার ছেলেকে শাস্তি দিবে দেখি। বলে আব্বু আমার কাছে আসল,
আমি
আব্বুকে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলাম। সাথে সাথে আম্মুর ধমক,
আম্মুঃ -
চুপপ! ! তুমি এসেছো ওকালতি করতে। বাপ-ব্যাটা দুজনকেই মেরে বাড়ি ছাড়া করবো।
আব্বু আম্মুর ধমক শুনে ঢোক গিলল। আব্বু আম্মুকে ভয় পায়।
শুধু আব্বু না সবাই
আম্মুকে ভয় পায়।
জয়াকে দেখলাম উপরে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে যে আমি
আম্মুর বকা খাচ্ছি
আর সাথে মুচকি মুচকি হাসছে। জয়া আমার একমাত্র বোন (গল্প
সুত্রে)।
আম্মুঃ - আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, যাও তুমি রুমে যাও।
আর
রাতের খাবারও তো খাওনি। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো আমরা কেউ এখনো খাইনি।
আমি সিড়ি
দিয়ে উপরে উঠলাম। জয়াকে দেখে মাথায় টোকা দিলাম।
চুলমুঠি ধরে বললাম,
আমিঃ - কি, এতোক্ষণ দাত কেলিয়ে হাসছিলি কেনো? এখন হাস দেখি।
জয়াঃ - বেশ করেছি। আমি খুব খুশি হয়েছি আম্মু তকে বকা দিয়েছে।
আমিঃ - তাই না। বলে জয়ার চুলে ঠান দিলাম। জয়া আউউ করে উঠল,
জয়াঃ - ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু ছেড়ে দে। উফফ! ভাইয়া ব্যাথা পাচ্ছি ছেড়ে দে।
আমিঃ - দেবো তার আগে বল আমার মাথা টিপে দিবি, চুল টেনে দিবি।
জয়াঃ - দিবো, দিবো ভাইয়া এখন ছেড়ে দে।
আমি ছেড়ে দিলাম সাথে সাথে ভেঙচি
কেটে দিলো দৌড়।
আমি রুমে গেলাম। শার্ট খুলে ফ্রেশ হতে গেলাম ওয়াসরুমে।
হাত
মুখ ধুয়ে বের হলাম। টাওয়ার দিয়ে মুখ মুচছিলাম।
কারো নিশ্বাস এসে পড়ল আমার
গাড়ে। আমি পিছনে তাকালাম কেউ নেই।
ভয় পেয়ে গেলাম। সাথে গরম একটা বাতাস
আমাকে জরিয়ে ধরল মনে হয়।
আমি লাফিয়ে উঠলাম। এমনিতেই জয়া আমাকে ভিতু বলে
ক্ষেপায় তাই চিৎকার দিলাম না।
ভয়ে ভয়ে শার্ট পড়ে রুম থেকে বের হলাম। নিচে
গিয়ে খাবার টেবিলে বসলাম।
খাবার খেয়ে আবার রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ
মোবাইল টিপলাম।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাগানটা দেখছিলাম।
তখনি
অনুভব করলাম কেউ আমাকে পিছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে।
আমি আমার বুকের
দিকে তাকালাম কারো হাত তো নেই।
পিছন দিকে মাথা ঘোড়ালাম কেউ নেই। আমার শরীর
ভয়ে শিহরিত হয়ে উঠল।
তখনি কেউ মনে হয় সেটা বুঝে ছেড়ে দিলো।
আমি বারান্দায়
রডের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। কি হচ্ছে এসব?
আমি ঘেমে গেছি এইটুকুতেই। ভয় পেলে
তো চলবে না।
এমনিতেই বন্ধুরা আর পরিবারের সহ আত্বীয়-স্বজন সবাই আমাকে আম্মু
বাবু বলে ক্ষেপায়।
আমি নাকি ভয় পাই। তাই ভয় না পেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে
পড়লাম।
কোলবালিশটা জরিয়ে ধরে ঘমিয়ে পড়লাম।
কখন ঘুমিয়েছি
মনেই নেই। রাতে ঘুম ভাঙল কারো জরিয়ে ধরার উষ্ণ আবেশে।
আমি সোজা হয়ে শুয়ে
আছি আর বুকে ভারী কিছুর অনুভব হচ্ছে।
খুব কোমল একটা শরীর আমাকে জরিয়ে ধরে
আছে।
আমি উঠতে চাইলাম পারলাম না। খুব জোরে জরিয়ে ধরেছে কেউ।
টেবিল
ল্যাম্পটাও অফ করা সাথে ঘরের বাতিও।
খুব অন্ধকার কিছুই দেখছি না। আস্তে
আস্তে চোখ পরিষ্কার হল।
বুকের দিকে তাকালাম কেউ নেই। আমি বিস্ফোরিত হলাম।
এটা কি কেউ নেই তো? তাহলে কে আমাকে জরিয়ে ধরে আছে।
আবার উঠতে চাইলাম পারলাম
না। আমি একটা অবিশ্বাস্য শক খেলাম।
এবার আর নিজেকে ধমাতে পারলাম না।
চিৎকার দিবো এমন সময় কারো মিষ্টি ঠোঁট এসে আমার ঠোঁটটা দখল করে নিলো।
আমি
ভেসে গেলাম অন্য জগতে।
এক অতুলনীয় অনুভুতি। আমার এখন মনে হচ্ছে না যে, আমি
পৃথিবীতে রয়েছি।
মনে হচ্ছে অন্য কোনো এক জগতে ভাসছি আমি।
তারপর
হঠাৎ কোনো এক মসজিদ থেকে আজানের স্বর ভেসে আসলো।
সাথে সাথে আমি নিজেকে
হালকা অনুভব করলাম। আর এই জগতে ফিরে এলাম।
আমি ঘেমে একাকার। একি টেবিল
ল্যাম্পটা তো জ্বালানো।
তাহলে একটু আগে যে দেখলাম অফ করা। আর কিছু ভাবতে
পারছি না।
ঠোঁটে এখনো সেই আগের মিষ্টি আবেশটা রয়ে গেছে।
অস্তির লাগছে খুব।
চোখ ভারী মনে হচ্ছে।
আস্তে আস্তে রাজ্যের সব ঘুম এসে ভর করল চোখে।
( পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।)
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com