কালো মেয়ের বিয়ে | আকাশ আহম্মেদ
গাঁও গ্রামের মেয়ে অনিকা…. ছোট বেলা থেকে একটু চন্ধল স্বভাবের ….বাবা মায়ের আদরের একমাএ মেয়ে…..কিন্তু একটা সমস্যার কারনে কেউ তার দিকে ঘুরে ও তাকায় না ….সবাই আজেবাজে কথা শুনায়….কারন মেয়েটি কালো…..কলেজের সুন্দরী মেয়েদের পিঁছনে হাজারো ছেলে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু এই অনিকার সাথে কেউ কথা ও বলে না……কেনো এতো অবহেলা কিসের এতো অহংকার মানুষের ….. খুব মেধাবী আর ইনোসেন্ট একটা মেয়ে তবুও বিয়ের জন্য পাএ পক্ষরা এসে তোলপাড় সৃষ্টি করে…..এই পর্যন্ত কতবার না মেয়েটা শাড়ী পরে লোকের সামনে উপস্থিত হয়েছে……কারো তার প্রতি নজর পড়ে না কারন সে কালো মেয়ে ……সবাই তার রূপের সৌন্দর্যটা দেখতে চায়…..কালো বলে কেউ ভালো ভাবে ব্যাবহার করে না ওর সাথে……..কিন্তু কি এমন হলো যার জন্য এই কালো মেয়েটি নতুন করে বাঁচতে শিখেছে…….সেই বিষয়ে পরে বলি আগে পরিচয় টা দেওয়া যাক…..
আমি আকাশ আহম্মেদ…. পড়ালেখা শেষ করেছি কিছু দিন আগে…..বাবার ব্যাবসায় সামলানোই এখন আমার বড় দায়িত্ব ঈদের ছুটিতে সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাই…..আর তখনই এক স্নিগ্ধ বিকালে অনিকার সাথে আমার দেখা হয়….. মেয়েটা দেখতে অতোটা কালো না শ্যামলা বর্ণের …..প্রথম দেখাতেই আমার অনিকা কে খুব ভালো লাগে……আমার ছোট বেলা থেকে শ্যামলা মেয়েদের খুব ভালো লাগতো…..এবার মনের মতো কাউকে খুঁজে ও পেয়ে গেলাম…….অনিকা গ্রামের একটা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছে……
বাসায় শুয়ে আছি আর অনিকার কথা ভাবতেছি…..কালো তো কি হইছে ওর চোখের কোনে লুকিয়ে থাকা কাজলে যে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি……ওর খোকা কালো কেশের মধ্যে যে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছি……অনেক দিন ধরে বাবা মা আমাকে বলতেছে…..আকাশ পড়ালেখা শেষ করলি এবার তো বিয়ে করে নে…..এই বার মনে হয় তাদের বকা খাওয়া থেকে বেঁচে যাবো….
যাই হোক ……বাসা থেকে বেরিয়ে একটু নদীর তীরে আসলাম…..কি সুন্দর মন মুগ্ধকর আবহাওয়া…..
আহ কত রোমান্টিক…..সত্যি কথা বলতে শহরে এসব খুঁজে পাওয়া দায়……যা আছে সব কিছু তো চোখে বুড়িগঙ্গার পানির মতো পরিস্কার….যাই হোক মনোরম আবহাওয়া আর মনমুগ্ধ কর বাতাসে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে…..দুহাত তুলে ধরে আকাশের পানে চেয়ে আছি…… একটু পর লক্ষ্য করলাম একটু দূরে একটা মেয়ে ছাগল নিয়ে খেলা করতেছে….. আমি একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখি অনিকা…..অনিকা কে দেখে আমি গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরি…..আর লুকিয়ে লুকিয়ে ওর দুষ্টুমি দেখতেছি…..দেখেই বুঝা যায় মেয়েটা খুব ভালো মনের মানুষ তা না হলে কেউ এমন করে দুষ্টুমি করে পাগলি একটা…….নদীর তীরে অনেকক্ষন ঘুরার পরে বাসায় আসলাম……বাসায় আসার পর আবার বাবা মায়ের ঐ একই ভজনালাপ…আকাশ বিয়ে কর আকাশ বিয়ে কর.….আর পারি না বাবা এদের জ্বালায় মরেই যাবো……অনিকা কে খুব ভালো লাগে কিন্তু সাহস পাচ্ছি না বাবা মা কে বলার…..
বিছানায় শুয়ে আছি…..অনিকা তো আমার ভাবনা জুড়ে বিচরন করতেছে…..এই মেয়ের মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি বুঝতে পারতেছি ওর থেকে দুরে থাকা টা সম্ভব না বিকালে বাসার ছাঁদে বসে আছি এমন সময় আম্মু আসলো…….
আম্মু:গ্রামে অনেক মেয়ে আছে … একটা তো বিয়ে করে নে বাপ…..
আমি:অই তোমরা এমন বিয়ে বিয়ে করতেছো কেনো বিয়ে আমি করবো আর মেয়ে ও পেয়ে গেছি…… আম্মু:তাই নাকি রে কে সে আমাকে বল আমি কথা বলবো মেয়ের বাবার সাথে….
আমি:না মানে…..
আম্মু:কি মানে মানে করছিস……
আমি:আমাদের পাশের গ্রামের করিম চাচার মেয়ে অনিকা আছে না ওকে আমার খুব ভালো লাগে……
আম্মু:আগে বলবি তো মেয়েটাকে আমার ও খুব ভালো লাগে…. খুব ভালো মনের মেয়ে…. আমি তোর বাবার সাথে কথা বলবো…..
পরদিন বাসায় শুয়ে আছি এমন সময় মা ডাকতেছে…..
মা:এই আকাশ তোর বাবা কথা বলেছে ….তাদের কোন আপওি নেই……
আমি:তাহলে তো ভালোই…
আম্মু:তাহলে কালকে দেখতে যাই …..
আমি: হুম যদি ভালো লাগে তো চলো…
রাতে বিছানায় শুয়ে আছি আর ভাবতেছি আমার মনের মানুষটাকে বুঝি আমি পেয়ে যাবো …..এতো সহজে কি পাওয়া যাবে……জানিনা কি হয় মেয়ের বাবা তো রাজি তাহলে আর আপওি কিসের ….. মেয়েটা যদি না করে দেয় এই টেনসেনে আর ঘুম আসতেছে না……
যাক সকাল সকাল মায়ের ডাকে ঘুম ভাংলো…..
মা:কি রে আকাশ আর কত ঘুমাবি তারাতারি উঠ আর রেড়ি হয়ে নে ….ভুলে গেলি আজকে মেয়ে দেখতে যাবার কথা আছে…..
আমি ঘুম থেকে উঠলাম আর ফ্রেস হয়ে নিলাম…..দেখি বিছানায় একটা পান্জাবি রাখা আছে…..কিন্তু আমি আমার জীবনে ও কখনো পান্জাবি পরি নি …..কেমন জানি অস্বস্তিকর……যাক অবশেষে পান্জাবি টা পরে নিলাম……আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখি ….বাহ বেশ মানিয়েছে তো …..যাক এবার যাওয়া যাক…..বাবা মা আর আমি চললাম শুশুর বাড়ির উদ্দেশ্য ….থুক্ক অনিকাদের বাসার উদ্দৈশ্যে……আমার খুব ভালো লাগতেছে আবার ভয় ও করতেছে মেয়েটা যদি না করে দেয় তো কি করবো…..এসব ভাবতে ভাবতে অনিকাদের বাসায় চলে আসলাম……
বাসায় আসার পর আমাদের কে বসতে বলা হলো….. আমি সৌফায় বসে আছি….. একটু পর অনিকার আম্মু আসলো দেখা করতে আমি সালাম দিলাম……কিছুক্ষন পর অনিকাকে নিয়ে আনা হলো…..অনিকা সমাল দিলো সবাইকে….. এই প্রথম ওর কন্ঠস্বর শুনলাম ……মন কাড়ানো অনুভূতি……অনিকার বান্ধবি ওর গোমটা সরাতে লক্ষ্য করলাম মেয়েটা খুব একটা সাজে নি ….তবুও খুব সুন্দর লাগতেছে…..কত মায়াবি…..ওর চোখের কোনের কাজলে সব সময় নিজেকে হারাই…..কিন্তু অনিকার মুখে হতাসার চাপ… একটু পর বাবা মা বললো মেয়ে আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে…..
কিন্তু ওদের মতামতটা খুব গুরুত্ব পূর্ণ….ওরা রাজি থাকলে আর আমাদের কোন আপওি নেই….এই কথা শুনে সবাই খুব খুশি হলো…….যাই হোক আমাকে আর অনিকাকে একটা রুমে কথা বলার জন্য পাঠানো হয়েছে…..
আমার খুব ভয় করতেছে…..দুজন দুদিকে দাড়িয়ে কারো কোন কথা নেই জানিনা কি বলবো আমি……তবুও নিরবতা ভেংগে বললাম….
আমি:কি নাম আপনার??
অনিকা:অনিকা আহিয়ান
আমি:নামটা বেশ সুন্দর…. আমি আকাশ আহম্মেদ…
আপনার কি কোন লাভার আছে….
অনিকা:কালো মেয়েদের প্রেম করতে নেই জানেন না….(মুখে হতাসার চাপ নিয়ে…)
আমি:না মানে এর আগে প্রেম করিনি তো তাই জানিনা আরকি….. আচ্ছা….আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোন আপওি আছে…..?
অনিকা: হুম আপনাকে বিয়ে করতে আমার আপওি আছে….থাকবে না কেনো……অবশ্যই আপওি আছে……
আমি:আপওি কেনো….. please এই বিয়েতে আপনি অমত করবেন না …..
অনিকা:কেনো….? আপনি শহরের শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত একটা ছেলে অনেক ম্মার্ট আর আধুনিক….কি দেখলেন আমার মাঝে গ্রামের এই কালো মেয়েটাকে কেনো বিয়ে করতে চান…..
আমি:আমি এতো কিছু জানি না আমি তো বিয়ে করতে চাই……
অনিকা:আপনার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাবে…… আমি পারবো না ক্ষমা করবেন আমায়…..
আমি:কেনো সমস্যা কোথায়….
অনিকা:আমি আপনার যোগ্য না….আমার প্রতি আপনার যে মোহটা তা অল্প কয়দিনে কেটে যাবে…..কালো মেয়েদের ভালোবাসা অন্যায় …..
আমি:এমন কেনো মনে হয় আপনার আর আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি আর আপনার আপওি থাকুক আর মত থাকুক বিয়ে তো আমি আপনাকেই করবো……
অনিকা:তা করতে পারেন ….কিন্তু কোন লাভ হবে না…..
অনিকার সাথে কথা বলে আবার সবার সামনে আসলাম …..বাবা মা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো….
আমি:আমার কোন আপওি নেই তোমাদের যা ভালো মনে হয় তোমরা তাই করো…….
এর পর বাবা মা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলো আর সবাই বাসায় চলে আসলাম……
বিকালে বাসার ছাঁদে মুক্ত আকাশের নিচে বসে এককাপ রং চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম এমন সময় লক্ষ্য করলাম………
.
.
চলবে…..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com