স্যার যখন স্বামী | পার্ট-৭ | লিখা: জান্নাতুল ফেরদৌস
"মেঘ!!"
"আন্টি আপনি?"
"মেঘ তুই?"
সত্যিই অনেক অবাক হয়ে গেছি।কত বছর
হয়ে গেল উনাকে দেখি না।এভাবে
আবারও যে উনার সাথে দেখা হবে সেটা
আমি ভাবতেই পারি নি।উনাকে দেখে খুব
খুশি লাগছে।দৌড়ে গিয়ে উনাকে
জড়িয়ে ধরলাম।
"আন্টি কেমন আছেন?আপনাকে আমি
আবার পেয়ে যাব তা ভাবতেই পারি নি।"
"এইরে দেখ মেয়েতো দেখি কান্না করে
দিচ্ছে।এতো কাদিস কেন তুই হ্যা?আমার
চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,মেঘ আমি
ভালো আছিরে মা।তুই কেমন আছিস,,"
"ভালো,,"
"কিন্তু মেঘ তুই এখানে কিভাবে?"
কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না কি
বলব,আন্টির পিছনে স্যার দাঁড়িয়ে ছিল
আমি সেটা এতক্ষণ খেয়াল করি নি।
তিনিই নিজ থেকে বললেন,মা ওই হচ্ছে
তোমার বৌমা যাকে দেখার জন্য তুমি
গ্রাম থেকে শহরে এসেছ।
আমি আর আন্টি স্যারের দিকে তাকিয়ে
আছি।
"কি বললি তুই,মেঘ আমার বৌমা?"
"হ্যা মা"
আর আমিও মনে মনে ভাবছি তন্ময় স্যার
আন্টির ছেলে। আন্টির দিকে তাকিয়ে
আছি এবার,আর ভাবছি ওনি কি আমাকে
মেনে নিবেন?
"তন্ময় তোকে আমি মেঘের কথা প্রায়
বলতাম না দেখ এই সে মেঘ।আর মেঘ
তোর
মনে আছে আমি তোকে প্রায়ই বলতাম
যদি আল্লাহ চাই আমি তোকে আমার
ছেলের বউ বানাবো।দেখেছিস
মা,আল্লাহ আমার কথা শুনেছে।শেষ
পর্যন্ত তুই আমার ছেলের বউ হয়েছিস।
আমি তন্ময়ের থেকে সব শুনেছি,ও
আমাকে সব বলেছে।আল্লাহ যা করে
মানুষের মঙ্গলের জন্য করে।ওই শয়তানটার
সাথে তোর বিয়ে হয়ে গেলে ও তোর
জীবনটা একেবারে শেষ করে দিতো।
ভালোই হয়েছে ওর সাথে তোর বিয়ে
হয়নি।মা,আমার ছেলেটা বাইরের দিকে
রাগি কিন্তু ভিতরের দিকে খুব নরম।
দেখবি ও তোকে খুব সুখে রাখবে।"
.
.
"আরে বাইরে দাঁড়িয়ে সব কথা বলবে
নাকি?এতদূর থেকে এসেছ একটু রেস্ট
নাও।"
"রেস্ট অনেক নেওয়া যাবে।অনেকদিন পর
আমার মেয়েটাকে পেয়েছি।কতদিন হল
ওর সাথে গল্প করি না এখন ওর সাথে গল্প
করব।"
"হ্যা কর ওর সাথে গল্প তাহলে আজকে না
খেয়ে থাকা লাগবে,"
"কেন?"
"কারণ আপনার এই মেয়ের হাতের রান্না
কাঁচা। আপনার মেয়েকে বলেছি আজকে
ওকে সারপ্রাইজ দিবো আর সেই
সারপ্রাইজটা দেওয়ার জন্য আপনাকে
নিয়ে এসেছি যাতে আপনার বৌমা মানে
আপনার মেয়েকে দেখতে পারেন আর
মেঘও আমার সারপ্রাইজটা দেখতে
পারে।আর ওকে একটু রান্নাবান্না
শিখিয়ে দিবেন যাতে ওর হাতের রান্না
খাওয়ার একটু উপযোগী হয়।বউ থাকতে
নিজে রান্না করে কেন খাব?ওকে ভালো
করে রান্না শিখাবে মা,যাতে ওর হাত
থেকে প্রতিদিন ভালো ভালো আইটেমের
রান্না খেতে পারি।"
(ইসসিরে,,দিলোতো আন্টির সামনে
আমার প্রেস্টিজ নষ্ট করে)...
"আচ্ছা আচ্ছা শিখিয়ে দিবোনে,মেঘ
চলতো মা রান্নাঘরে চল।কিছু রেঁধে নি
আজকে আমি রাঁধব আর তুই দেখবি।"
"আন্টি এখন!আপনি আগে রেস্ট নেন পরেও
শিখিয়ে দিতে পারবেন,"
"ওই আন্টি কি হুম আগে ডাকতি মানা যেত
এখন আর আন্টি ডাকবি না।তোর মাকে
কি বলে ডাকস তুই?"
"আম্মু।"
"তো তাহলে আমাকেও তুই আম্মু বলে
ডাকবি।তুই আমার বউ না আমার মেয়ে।
আমারতো মেয়ে নেই তোকে দিয়ে
আমার
মেয়ের আশা পূরণ করব।আমার রেস্ট
নেওয়া লাগবেনা তোকে দেখে আমার মন
এমনিতেই ভালো হয়ে গেছে।চল চল
তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার
কাজটা শেষ করে আসি,"
.
.
রান্না শেষ করে আমার রুমে গিয়ে দেখি
স্যারের হাতে সাগরের ছবি,ও শিট এই
ছবিটা এখানে রেখে চলে গেছি।জানিনা
এখন উনি কি রিয়েক্ট করবেন?
"মেঘ,,এই ছবিটা এখানে কেন?"
.....
"মেঘ কিছু জিজ্ঞাস করছি,"
"এইটটা আম্মার লাক্কেজ থেক্কে,,"
"একদম তোতলাবে না যা বলার ক্লিয়ার
করে বল,তুমি লাকেজ থেকে ছবিটা বের
করেছ,"
"হ্যা,"
"মেঘ এতকিছুর পরও তুমি কি এখনো
সাগরকে ভালবাস,"
(তার উত্তর আমি নিজেও জানি না।
জানি ওকে আমার ঘৃণা করা উচিত কিন্তু
প্রথম ভালবাসা বলে কথা,কিছুটা মায়া
এখনো ওর জন্য আছে।এর উত্তর আমি কি
দিব জানি না)...
তোমার চুপচাপ থাকাটা আমি কি ধরে
নিবো,
তার মানে এতকিছুর পরেও তুমি..এই বলে
আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন,মেঘ
কেমন করে ওকে তুমি এখনো ভালবাসতে
পার? ও একটা প্রতারক,ও তোমাকে আর
তোমার পরিবারের সাথে প্রতারণা করে
সবাইকে কষ্ট দিয়েছে তারপরও তুমি।তুমি
যেই বোকা সেই বোকাই রয়ে গেল,যে
তোমাকে ভালবাসে তাকে তুমি বুঝনা
আর যে তোমাকে ভালবাসার মিথ্যা
স্বপ্ন দেখিয়ে তোমার সাথে প্রতারণা
করেছে তাকে তুমি..এই বলে তিনি
আমাকে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে
চলে
গেলেন।আমার হাতটা টেবিলে রাখা
কাঁচের জগের সাথে লাগায় কাঁচের জগটা
ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে যায় আর সেই
কাচের টুকরো আমার হাতে লেগে হাত
কেটে যায়,
রাতে তিনি খুব সামান্য খেলেন।মায়ের
সাথে হাসিমুখে কথা বললেন কিন্তু
আমার সাথে একটাও কথা বললেন না।
জানি উনার সেই প্রশ্নের জবাবে আমার
চুপ থাকাটা তাকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু
আমারি বা কি করার সাগরকে ভুলতে
আমার সময় লাগবে।ওর মায়া কাটাতে
হলে একটু সময় আমার দরকার।
.
.
"আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন,"
....
"দেখুন আমি চাইনি,"
"মেঘ আমি কোন কিছু শুনতে চাচ্ছি না,যা
বুঝার আমি বুঝে গেছি আমাকে আর বুঝ
দিতে এসো না,,"
খুব রেগে আছেন উনি জানি না কি কথা
বলে উনাকে মানাতে হবে।এখন যতই
বুঝানোর চেষ্টা করি সব বৃথা যাবে,,
"কিছুক্ষণ পর,,মেঘ,,"
"জ্বী,,"
"এদিকে তাকাও"
"এরকম কেন তুমি?এত কেয়ারলেস কেন
নিজের প্রতি।হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে
তারপরও তুমি হাতে বেন্ডেজ করে নিতে
পারোনি,"(চিল্লিয়ে কথাটা বললেন)
তোমাকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে যখন
রুম
থেকে বের হলাম তখন কিছু একটা পড়ে
যাওয়ার আওয়াজ পেলাম।একটু আগে
এখানে হাটতে গিয়ে আমার পায়ে
কাচের টুকরা ফুটল।আর তাতে মনে হল
তোমাকে যেভাবে ধাক্কা দিয়েছি
তাতে নিশ্চয় তোমার হাত পায়ে কাচের
টুকরা লেগে তোমার হাত পা নিশ্চয়
কেটে গেছে।দেখ এখন হাত দিয়ে ফিনকি
রক্ত পড়ছে আর তুমি এখনো হাত চেপে
ধরে আছো?
(কেঁদে)"আসলে"
"আসলে নকলে আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না।
তুমি কি চাও বলত?তোমার কারণে আমি
কষ্ট পায় সেটাই চাও?খুব ভালো লাগে
আমাকে কষ্ট দিতে,চুপ একদম চুপ তোমার
কাঁন্নার একটা শব্দও যাতে আমি কানে
না আসে,"
স্যারের বকা খেয়ে আমি আগের থেকেও
আরও বেশি করে কান্না করে দিলাম।
কত্তগুলো বকা দিল।এত বকা খেয়ে কেমন
করে চুপ থাকা যায়? খুব খারাপ
উনি,আমার পুরো কথা না শুনে কত্তগুলো
বকা দিলো,(কেঁদে)
উনি ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স এনে
আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দিলেন।
আরেকদিকে আমার কান্না চলছেই।তিনি
বিরক্ত হয়ে আবার বললেন মেঘ কান্না
বন্ধ কর।
.
.
কান্না কিছুতেই থামতেই চাইছে না।খুব
চেষ্টা করছি থামাবার কিন্তু তারপরও
অনবরত চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে আর
কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে।
"লক্ষ্মীটি প্লিজ কান্না বন্ধ কর এই বলে
আমাকে তার বুকে টেনে নিলেন। মেঘ
যেই কাজ আমার পছন্দের না তারপরও
তুমি সেই কাজ কেন কর বলত?হাত দিয়ে
কত্তগুলো রক্ত বের হল অথচ তুমি হাতে
ব্যান্ডেজটাও পর্যন্ত বাধো নি।তোমার
এইরকম কাজে কার না রাগ উঠবে বল?"
"আ..মি আ..মি ফুঁপিয়ে,আমি হাতে
ব্যান্ডেজ করতে চেয়েছি..লাম।কিন্তু
আমি এই বাসায় মাত্র ১দিন হল এসেছি
কোথায় কি আছে তা কেমন করে জানব।
ফাস্ট এইড বক্স কত খুঁজেছি কিন্তু
কোথাও পায়নি।আপনি আম..মার কোন
কথা না শুনে কিছু না জেনে আম..মাকে
কত্তগুলো বকা দিয়েছেন।"(কান্নার
কারণে কথাগুলো এইরকম শুনাচ্ছিল,কত
বকা দিলেন এই পর্যন্ত উনি আমাকে। এত
বকা আমার বাবার বাড়িতে থাকতেও
আমি কখনো খায়নি যতগুলো এখানে
আসার পর ওনার কাছ থেকে খেয়েছি)
"ও,,এই কথা আমাকে আগে বলোনি কেন?
যাই হোক তারপরও দোষ তোমারি।
আমাকে আগে এই কথাগুলো বললে আমার
থেকে এত কথা তোমাকে শুনতেও হত না
আর তোমাকে কাঁদতেও হত না।"
"কি!!??কতটা খারাপ উনি।নিজে এত দোষ
করেও ভুলটা স্বীকার করছেন না আর
আমাকে সরিটাও পর্যন্ত বললেন না।
আবার বলছেন আমার দোষে এইসব
হয়েছে।
এখনো আমার দোষ দেখছেন।"
.
.
"চল,ঘুমাবে,"
"না,আমি আপনার সাথে ঘুমাবোনা,"
"আজকে এত দোষ করেও না বলছ।তোমার
কোন কথা আমি শুনতে চাইনি,,শুধু বলেছি
ঘুমাতে আসো।না আসলেই তো জানো কি
করব আমি,,"
"কি করবেন আবার আমাকে কোলে তুলে
নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিবেন।কি!কোলে!
উনার কোলে উঠব কাভি নেহি।আজকে
উনার উপরে খুব রাগ করেছি। স্যার
হয়েছেন বলে কি আমার মাথা কিনে
নিয়েছেন নাকি।যখন তখন শুধু বকা আর
ধমক দিবেন।আজকে উনার কোলে
কিছুতেই উঠব না।এত বোকা আমি না(মুখ
বেকিয়ে)।মনে হয় যেন কিছুই বুঝিনা
আমি,তাই না?এই মেঘ সব না বুঝলেও একটু
হলেও বুঝে আমাকে কোলে নেওয়ার
ধান্দা সেই সুযোগ আজ দিচ্ছি
না,হিহিহি।দৌড়ে বিছানায় গিয়ে চোখ
বন্ধ করে শুয়ে গেলাম,এইবার বুঝো ঠেলা
স্যার, হিহিহি।"
"ওমা এটা কি আমার লক্ষ্মীমন্ত্র বউ
নাকি?একেবারে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে
গেছে।যাক ভালোই হয়েছে আজকে আর
আমাকে এত কষ্ট পোহাতে হল না।
তোমাকে কোলে নিতে আমার যে কষ্ট
হয়,আমি তোমাকে কোলে তুলে নিয়েছি
তাই একমাত্র আমিই ভালো জানি এত
ভারি ওজনের একটা হাতিকে কোলে
তুলে নেওয়ার কি কষ্ট।"
"কি আমি হাতি!আমার ওজন
বেশি?" (কাঁদুনে মুখে)
"এমা তুমি না ঘুমিয়ে গেছ,জেগে উঠলে
কেমন করে?"
"আমি ঘুমায় নি,সবেমাত্র চোখ বন্ধ
করেছি।এখন চোখ বন্ধ করলেই কি
সাথেসাথে ঘুম এসে যাবে।"
"ও তাই বল?আর আমিতো ভাবলাম আমার
বউটা ঘুমিয়ে গেছে তাই মনের কথাগুলো
খুলে বললাম।"
"তাই না?তার মানে আমি ঘুমিয়ে গেলে
আমার গোপনে এইসব কথা বলে বেড়াবেন।
আমি হাতি, আমার ওজন বেশি।আপনি
জানেন আমার ওজন কত?"
"ওমা জানবো না কেন?কমপক্ষে ৫৫ তো
হবে।"
"কি!!"
"আমার ওজন ৫৫ কেজি না,মাত্র ৪৮
কেজি।আর তাতেই আপনি আমাকে হাতি
বলে ফেললেন।"
"এরে এই মেয়ে তো দেখি কান্না করে
দিচ্ছে। কান্না ছাড়া কি কিছুই পারো
না।আমি জাস্ট মজা করলাম।এই মেয়েতো
মজাও বুঝে না।এ কেমন বউ জুটল আমার
কপালে।আচ্ছা আচ্ছা কাঁদে না লক্ষ্মীটি
এখানে আস।"
"না,"
"উফ সারাক্ষণ শুধু না,না,তোমার আসা
লাগবে না আমিই আসছি।এই বলে আমাকে
নিজের বুকে টেনে নিলেন।"
(চলবে)
"আন্টি আপনি?"
"মেঘ তুই?"
সত্যিই অনেক অবাক হয়ে গেছি।কত বছর
হয়ে গেল উনাকে দেখি না।এভাবে
আবারও যে উনার সাথে দেখা হবে সেটা
আমি ভাবতেই পারি নি।উনাকে দেখে খুব
খুশি লাগছে।দৌড়ে গিয়ে উনাকে
জড়িয়ে ধরলাম।
"আন্টি কেমন আছেন?আপনাকে আমি
আবার পেয়ে যাব তা ভাবতেই পারি নি।"
"এইরে দেখ মেয়েতো দেখি কান্না করে
দিচ্ছে।এতো কাদিস কেন তুই হ্যা?আমার
চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,মেঘ আমি
ভালো আছিরে মা।তুই কেমন আছিস,,"
"ভালো,,"
"কিন্তু মেঘ তুই এখানে কিভাবে?"
কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না কি
বলব,আন্টির পিছনে স্যার দাঁড়িয়ে ছিল
আমি সেটা এতক্ষণ খেয়াল করি নি।
তিনিই নিজ থেকে বললেন,মা ওই হচ্ছে
তোমার বৌমা যাকে দেখার জন্য তুমি
গ্রাম থেকে শহরে এসেছ।
আমি আর আন্টি স্যারের দিকে তাকিয়ে
আছি।
"কি বললি তুই,মেঘ আমার বৌমা?"
"হ্যা মা"
আর আমিও মনে মনে ভাবছি তন্ময় স্যার
আন্টির ছেলে। আন্টির দিকে তাকিয়ে
আছি এবার,আর ভাবছি ওনি কি আমাকে
মেনে নিবেন?
"তন্ময় তোকে আমি মেঘের কথা প্রায়
বলতাম না দেখ এই সে মেঘ।আর মেঘ
তোর
মনে আছে আমি তোকে প্রায়ই বলতাম
যদি আল্লাহ চাই আমি তোকে আমার
ছেলের বউ বানাবো।দেখেছিস
মা,আল্লাহ আমার কথা শুনেছে।শেষ
পর্যন্ত তুই আমার ছেলের বউ হয়েছিস।
আমি তন্ময়ের থেকে সব শুনেছি,ও
আমাকে সব বলেছে।আল্লাহ যা করে
মানুষের মঙ্গলের জন্য করে।ওই শয়তানটার
সাথে তোর বিয়ে হয়ে গেলে ও তোর
জীবনটা একেবারে শেষ করে দিতো।
ভালোই হয়েছে ওর সাথে তোর বিয়ে
হয়নি।মা,আমার ছেলেটা বাইরের দিকে
রাগি কিন্তু ভিতরের দিকে খুব নরম।
দেখবি ও তোকে খুব সুখে রাখবে।"
.
.
"আরে বাইরে দাঁড়িয়ে সব কথা বলবে
নাকি?এতদূর থেকে এসেছ একটু রেস্ট
নাও।"
"রেস্ট অনেক নেওয়া যাবে।অনেকদিন পর
আমার মেয়েটাকে পেয়েছি।কতদিন হল
ওর সাথে গল্প করি না এখন ওর সাথে গল্প
করব।"
"হ্যা কর ওর সাথে গল্প তাহলে আজকে না
খেয়ে থাকা লাগবে,"
"কেন?"
"কারণ আপনার এই মেয়ের হাতের রান্না
কাঁচা। আপনার মেয়েকে বলেছি আজকে
ওকে সারপ্রাইজ দিবো আর সেই
সারপ্রাইজটা দেওয়ার জন্য আপনাকে
নিয়ে এসেছি যাতে আপনার বৌমা মানে
আপনার মেয়েকে দেখতে পারেন আর
মেঘও আমার সারপ্রাইজটা দেখতে
পারে।আর ওকে একটু রান্নাবান্না
শিখিয়ে দিবেন যাতে ওর হাতের রান্না
খাওয়ার একটু উপযোগী হয়।বউ থাকতে
নিজে রান্না করে কেন খাব?ওকে ভালো
করে রান্না শিখাবে মা,যাতে ওর হাত
থেকে প্রতিদিন ভালো ভালো আইটেমের
রান্না খেতে পারি।"
(ইসসিরে,,দিলোতো আন্টির সামনে
আমার প্রেস্টিজ নষ্ট করে)...
"আচ্ছা আচ্ছা শিখিয়ে দিবোনে,মেঘ
চলতো মা রান্নাঘরে চল।কিছু রেঁধে নি
আজকে আমি রাঁধব আর তুই দেখবি।"
"আন্টি এখন!আপনি আগে রেস্ট নেন পরেও
শিখিয়ে দিতে পারবেন,"
"ওই আন্টি কি হুম আগে ডাকতি মানা যেত
এখন আর আন্টি ডাকবি না।তোর মাকে
কি বলে ডাকস তুই?"
"আম্মু।"
"তো তাহলে আমাকেও তুই আম্মু বলে
ডাকবি।তুই আমার বউ না আমার মেয়ে।
আমারতো মেয়ে নেই তোকে দিয়ে
আমার
মেয়ের আশা পূরণ করব।আমার রেস্ট
নেওয়া লাগবেনা তোকে দেখে আমার মন
এমনিতেই ভালো হয়ে গেছে।চল চল
তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার
কাজটা শেষ করে আসি,"
.
.
রান্না শেষ করে আমার রুমে গিয়ে দেখি
স্যারের হাতে সাগরের ছবি,ও শিট এই
ছবিটা এখানে রেখে চলে গেছি।জানিনা
এখন উনি কি রিয়েক্ট করবেন?
"মেঘ,,এই ছবিটা এখানে কেন?"
.....
"মেঘ কিছু জিজ্ঞাস করছি,"
"এইটটা আম্মার লাক্কেজ থেক্কে,,"
"একদম তোতলাবে না যা বলার ক্লিয়ার
করে বল,তুমি লাকেজ থেকে ছবিটা বের
করেছ,"
"হ্যা,"
"মেঘ এতকিছুর পরও তুমি কি এখনো
সাগরকে ভালবাস,"
(তার উত্তর আমি নিজেও জানি না।
জানি ওকে আমার ঘৃণা করা উচিত কিন্তু
প্রথম ভালবাসা বলে কথা,কিছুটা মায়া
এখনো ওর জন্য আছে।এর উত্তর আমি কি
দিব জানি না)...
তোমার চুপচাপ থাকাটা আমি কি ধরে
নিবো,
তার মানে এতকিছুর পরেও তুমি..এই বলে
আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন,মেঘ
কেমন করে ওকে তুমি এখনো ভালবাসতে
পার? ও একটা প্রতারক,ও তোমাকে আর
তোমার পরিবারের সাথে প্রতারণা করে
সবাইকে কষ্ট দিয়েছে তারপরও তুমি।তুমি
যেই বোকা সেই বোকাই রয়ে গেল,যে
তোমাকে ভালবাসে তাকে তুমি বুঝনা
আর যে তোমাকে ভালবাসার মিথ্যা
স্বপ্ন দেখিয়ে তোমার সাথে প্রতারণা
করেছে তাকে তুমি..এই বলে তিনি
আমাকে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে
চলে
গেলেন।আমার হাতটা টেবিলে রাখা
কাঁচের জগের সাথে লাগায় কাঁচের জগটা
ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে যায় আর সেই
কাচের টুকরো আমার হাতে লেগে হাত
কেটে যায়,
রাতে তিনি খুব সামান্য খেলেন।মায়ের
সাথে হাসিমুখে কথা বললেন কিন্তু
আমার সাথে একটাও কথা বললেন না।
জানি উনার সেই প্রশ্নের জবাবে আমার
চুপ থাকাটা তাকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু
আমারি বা কি করার সাগরকে ভুলতে
আমার সময় লাগবে।ওর মায়া কাটাতে
হলে একটু সময় আমার দরকার।
.
.
"আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন,"
....
"দেখুন আমি চাইনি,"
"মেঘ আমি কোন কিছু শুনতে চাচ্ছি না,যা
বুঝার আমি বুঝে গেছি আমাকে আর বুঝ
দিতে এসো না,,"
খুব রেগে আছেন উনি জানি না কি কথা
বলে উনাকে মানাতে হবে।এখন যতই
বুঝানোর চেষ্টা করি সব বৃথা যাবে,,
"কিছুক্ষণ পর,,মেঘ,,"
"জ্বী,,"
"এদিকে তাকাও"
"এরকম কেন তুমি?এত কেয়ারলেস কেন
নিজের প্রতি।হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে
তারপরও তুমি হাতে বেন্ডেজ করে নিতে
পারোনি,"(চিল্লিয়ে কথাটা বললেন)
তোমাকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে যখন
রুম
থেকে বের হলাম তখন কিছু একটা পড়ে
যাওয়ার আওয়াজ পেলাম।একটু আগে
এখানে হাটতে গিয়ে আমার পায়ে
কাচের টুকরা ফুটল।আর তাতে মনে হল
তোমাকে যেভাবে ধাক্কা দিয়েছি
তাতে নিশ্চয় তোমার হাত পায়ে কাচের
টুকরা লেগে তোমার হাত পা নিশ্চয়
কেটে গেছে।দেখ এখন হাত দিয়ে ফিনকি
রক্ত পড়ছে আর তুমি এখনো হাত চেপে
ধরে আছো?
(কেঁদে)"আসলে"
"আসলে নকলে আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না।
তুমি কি চাও বলত?তোমার কারণে আমি
কষ্ট পায় সেটাই চাও?খুব ভালো লাগে
আমাকে কষ্ট দিতে,চুপ একদম চুপ তোমার
কাঁন্নার একটা শব্দও যাতে আমি কানে
না আসে,"
স্যারের বকা খেয়ে আমি আগের থেকেও
আরও বেশি করে কান্না করে দিলাম।
কত্তগুলো বকা দিল।এত বকা খেয়ে কেমন
করে চুপ থাকা যায়? খুব খারাপ
উনি,আমার পুরো কথা না শুনে কত্তগুলো
বকা দিলো,(কেঁদে)
উনি ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স এনে
আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দিলেন।
আরেকদিকে আমার কান্না চলছেই।তিনি
বিরক্ত হয়ে আবার বললেন মেঘ কান্না
বন্ধ কর।
.
.
কান্না কিছুতেই থামতেই চাইছে না।খুব
চেষ্টা করছি থামাবার কিন্তু তারপরও
অনবরত চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে আর
কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে।
"লক্ষ্মীটি প্লিজ কান্না বন্ধ কর এই বলে
আমাকে তার বুকে টেনে নিলেন। মেঘ
যেই কাজ আমার পছন্দের না তারপরও
তুমি সেই কাজ কেন কর বলত?হাত দিয়ে
কত্তগুলো রক্ত বের হল অথচ তুমি হাতে
ব্যান্ডেজটাও পর্যন্ত বাধো নি।তোমার
এইরকম কাজে কার না রাগ উঠবে বল?"
"আ..মি আ..মি ফুঁপিয়ে,আমি হাতে
ব্যান্ডেজ করতে চেয়েছি..লাম।কিন্তু
আমি এই বাসায় মাত্র ১দিন হল এসেছি
কোথায় কি আছে তা কেমন করে জানব।
ফাস্ট এইড বক্স কত খুঁজেছি কিন্তু
কোথাও পায়নি।আপনি আম..মার কোন
কথা না শুনে কিছু না জেনে আম..মাকে
কত্তগুলো বকা দিয়েছেন।"(কান্নার
কারণে কথাগুলো এইরকম শুনাচ্ছিল,কত
বকা দিলেন এই পর্যন্ত উনি আমাকে। এত
বকা আমার বাবার বাড়িতে থাকতেও
আমি কখনো খায়নি যতগুলো এখানে
আসার পর ওনার কাছ থেকে খেয়েছি)
"ও,,এই কথা আমাকে আগে বলোনি কেন?
যাই হোক তারপরও দোষ তোমারি।
আমাকে আগে এই কথাগুলো বললে আমার
থেকে এত কথা তোমাকে শুনতেও হত না
আর তোমাকে কাঁদতেও হত না।"
"কি!!??কতটা খারাপ উনি।নিজে এত দোষ
করেও ভুলটা স্বীকার করছেন না আর
আমাকে সরিটাও পর্যন্ত বললেন না।
আবার বলছেন আমার দোষে এইসব
হয়েছে।
এখনো আমার দোষ দেখছেন।"
.
.
"চল,ঘুমাবে,"
"না,আমি আপনার সাথে ঘুমাবোনা,"
"আজকে এত দোষ করেও না বলছ।তোমার
কোন কথা আমি শুনতে চাইনি,,শুধু বলেছি
ঘুমাতে আসো।না আসলেই তো জানো কি
করব আমি,,"
"কি করবেন আবার আমাকে কোলে তুলে
নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিবেন।কি!কোলে!
উনার কোলে উঠব কাভি নেহি।আজকে
উনার উপরে খুব রাগ করেছি। স্যার
হয়েছেন বলে কি আমার মাথা কিনে
নিয়েছেন নাকি।যখন তখন শুধু বকা আর
ধমক দিবেন।আজকে উনার কোলে
কিছুতেই উঠব না।এত বোকা আমি না(মুখ
বেকিয়ে)।মনে হয় যেন কিছুই বুঝিনা
আমি,তাই না?এই মেঘ সব না বুঝলেও একটু
হলেও বুঝে আমাকে কোলে নেওয়ার
ধান্দা সেই সুযোগ আজ দিচ্ছি
না,হিহিহি।দৌড়ে বিছানায় গিয়ে চোখ
বন্ধ করে শুয়ে গেলাম,এইবার বুঝো ঠেলা
স্যার, হিহিহি।"
"ওমা এটা কি আমার লক্ষ্মীমন্ত্র বউ
নাকি?একেবারে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে
গেছে।যাক ভালোই হয়েছে আজকে আর
আমাকে এত কষ্ট পোহাতে হল না।
তোমাকে কোলে নিতে আমার যে কষ্ট
হয়,আমি তোমাকে কোলে তুলে নিয়েছি
তাই একমাত্র আমিই ভালো জানি এত
ভারি ওজনের একটা হাতিকে কোলে
তুলে নেওয়ার কি কষ্ট।"
"কি আমি হাতি!আমার ওজন
বেশি?" (কাঁদুনে মুখে)
"এমা তুমি না ঘুমিয়ে গেছ,জেগে উঠলে
কেমন করে?"
"আমি ঘুমায় নি,সবেমাত্র চোখ বন্ধ
করেছি।এখন চোখ বন্ধ করলেই কি
সাথেসাথে ঘুম এসে যাবে।"
"ও তাই বল?আর আমিতো ভাবলাম আমার
বউটা ঘুমিয়ে গেছে তাই মনের কথাগুলো
খুলে বললাম।"
"তাই না?তার মানে আমি ঘুমিয়ে গেলে
আমার গোপনে এইসব কথা বলে বেড়াবেন।
আমি হাতি, আমার ওজন বেশি।আপনি
জানেন আমার ওজন কত?"
"ওমা জানবো না কেন?কমপক্ষে ৫৫ তো
হবে।"
"কি!!"
"আমার ওজন ৫৫ কেজি না,মাত্র ৪৮
কেজি।আর তাতেই আপনি আমাকে হাতি
বলে ফেললেন।"
"এরে এই মেয়ে তো দেখি কান্না করে
দিচ্ছে। কান্না ছাড়া কি কিছুই পারো
না।আমি জাস্ট মজা করলাম।এই মেয়েতো
মজাও বুঝে না।এ কেমন বউ জুটল আমার
কপালে।আচ্ছা আচ্ছা কাঁদে না লক্ষ্মীটি
এখানে আস।"
"না,"
"উফ সারাক্ষণ শুধু না,না,তোমার আসা
লাগবে না আমিই আসছি।এই বলে আমাকে
নিজের বুকে টেনে নিলেন।"
(চলবে)
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com