Breaking News

বোনের ভালোবাসা



বোন”-
শব্দটা আমার কাছে খুব রহস্যময়, খুব প্রিয় একটি শব্দ। বোন জিনিসটা বোন
বিষয়টা ঠিক কি? কি রকম দেখতে? আমি জানিনা। কখনো জানাও হবেনা। কারণ, নির্মম
সত্য এটাই যে আমার কোন বোন নেই। তাই বোন শব্দটার মানে ঠিক বুঝিনা। জানিনা
বোন কাকে বলে?
.
তবে শুনেছি, যার কোন বোন নেই সে জীবনে অনেক কিছুই
মিস করে।বোনহীন জীবন, লবণহীন তরকারির মত। আপনাদের নিশ্চয়ই বলতে হবে না,
লবণহীন তরকারির স্বাদ কেমন? বোন ছাড়া জীবন সত্যিই খুব একঘেয়ে, কষ্টকর,
আনন্দ বিহীন। অন্তত আমার কাছে এটাই মনে হয়। ভাই-বোনের সম্পর্কের মত কোন
সম্পর্ক আদৌ এই পৃথিবীতে তৈরী হয়নি। আর কোনদিন ও হবেনা এই ব্যাপারে আমি
সুনিশ্চিত।
.
মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি, আমার একটা ছোট বোন আছে। খুব
কিউট। অন্নেক মায়াবী। সবসময় আমি ওর সাথে ঝগড়া করি। ওকে রাগাই। চেতাই। আমাকে
চকলেট এনে দিতে বলে। প্রতিদিন এনে দেই। তবে কখনো নিজহাতে দেইনা। ওর
বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখি। একদিন চকলেট না রাখলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। কথা
বলে না আমার সাথে। আমি গিয়ে কোলে নিয়ে নরম-কোমল দু গাল আলতো করে টেনে বলি, ”
আপুমনি, ও আমার বুড়ি, ভুল হয়ে গেছে আমার। আর ভুল হবেনা। এই দেখ কান ধরছি।
এই বার ক্ষমা করে দেও, পিলিজ। ” আপুমনিটি বলবে(মুখ বাঁকা করে),”সত্যি তো?”
মাঝে মাঝে আমার সোনা


আপুটার চুল আঁচরে দেই। আপুটাও আমার অনেক খেয়াল রাখে। মাথা ব্যাথা করলে
টিপে দেয়। গ্লাসে করে পানি এনে দেয়। নিজ হাতে খাবার মুখে তুলে দেয়। মাঝে
মাঝে ঝড়িয়ে ধরে বলে, “ভাইয়্যা!” ইশ! প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। কিছুদিন পর পর ই
তার শত শত আবদার। “ভাইয়্যা, আমার এটা লাগবে, ওটা লাগবে? এটা এনে দেও, ওটা
এনে দাও। “আরো কত কি? আমিও মুচকি হাসি দিয়ে ছোট্ট বোনের আবদারগুলো পূরণ করে
চলি। মাঝে মাঝে দুই একটা বকা দেই। কিন্তু আবদারগুলো সবসময়ই পূরণ করি।
সবসময় যে আমার ছোট লক্ষী বোনটা এডভান্টেজ নেয় তা নয়। অও আমাকে অনেক বিষয়ে
হ্যাল্প করে। বিশেষ করে বাবার বকুনি, মায়ের ঝাড়ি থেকে আমাকে বাঁচানোর
ক্ষমতা একমাত্র অই রাখে। তাইতো আমার ছোট্ট সোনা
লক্ষী আপু মনি টাকে এত্তো ভালোবাসি। এইগুলা চিন্তা করতে করতেই ঘুম ভেঙ্গে
যায়। সাথে স্বপ্ন ও। অনেক কষ্ট হয় তখন,, কষ্টের মাঝে অাবার ঘুমিয়ে পড়ি
.
আবার স্বপ্নে একটা বোনকে খুঁজে পাই। কিন্তু এবার বড় বোন। এই বোনকে আমার
চকলেট কিনে দিতে হয় না। বোনটাই আমার জন্যে প্রতিদিন তার টিফিন খরচ বাঁচিয়ে
চকলেট নিয়ে আসে। আমাকে অনেক আদর করে আমার আপুটা। আদর যেমন করে ঠিক তেমন
শাসনও করে। রোজ সকাল বেলা ওর ডাকেই আমার এতো সুখের ঘুমটা ভাঙ্গে। যদি ডাক
দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতে না পারে, তাহলে শরীরে পানি ডেলে দেয়। কি আজব মেয়ে রে
বাবা! সত্যি। আমার বোন বলে কথা তো। ঘুম ভাঙ্গার পরই অর মিষ্টি হাতের অসম্ভব
ভালো এক কাপ চা। এতো ভালো চা মানাতে পারে আমার বোনটা। কলেজ থেকে ফিরে এসে
আমার সব কাপড় ধুয়ে দেয়। আমার ঘর পরিষ্কার করে। আমাকে খেতে দেও। ভাই-বোন
একসাথে বসে খাই। বিকেল বেলা একটা জম্পেশ আড্ডা ছাদের উপর।

আপুকে আমার মনের
সব কথা শেয়ার করি। ও ছাড়া তো আমার কেউ নেই। “আপু, আজ এটা করেছি, ওটা করেছি।
আপু জানিস, আমাদের সাথে অহনা বলে একটা মেয়ে পড়ে না? অই যে রাকিবের বোন।
হুম। ওকে না আমার খুব ভালো লাগে। প্লিজ তুই একটা কিছু কর। ” আপু মন দিয়ে
আমার কথা শোনে। প্রাণ খুলে হাসে। আপুর হাসিটা আমার খুব ভালো লাগে। আমার সব
সমস্যার সমাধান আপুর কাছে পাই। মাঝে মাঝে দুই একটা বকা খেতে হয়। কিন্তু
ঠিকই পরে আমার কাজগুলো হয়ে যায়। আপু ও তার সব কথা আমার সাথে শেয়ার করে।
ঈদের সময় নিজে ভালো ড্রেস না কিনে ছোট ভাইকে কিনে দেয়। 

আমার অনেক ছোট ছোট
আবদার আমার আপুটা পূরণ করে। শুধু একবার মুখ ফোটে বলতে হয়। “আপু, একটা বল
লাগবে। আপু, ব্যাট টা ভেঙ্গে গেছে। আপু, আমার একটা ফ্রেণ্ডের বার্থডে। আপু,
অনেকদিন বার্গার খাই না” আমার সব ছোটখাটো চাহিদা আমার মিষ্টি বোনটা পূরণ
করে। নিজের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে আমাকে দেয়। 

রাত করে ঘরে ফিরলে বাবার হাত
থেকে অই রক্ষা করে। খেতে না চাইলে জোড় করে নিজ হাতে তুলে খাওয়ায়। তার পর,
টিচারের হোম ওয়ার্ক, কনফিউশন ম্যাটার (যেমন:- চুল কাটা, কাপড় কিনা) সব
কিছুর সমাধান আমার আপুই দেয়। বিনিময়ে এই আপুর জন্য কি ই বা করতে পারছি আমি।
তার দুই একটা কথা শোনা ছাড়া। মাঝে মাঝে তো সেটাও শুনিনা। 

হঠাৎ, উচ্ছ্বাসের
মুহূর্ত গুলোতে নীরবতা, নিস্তব্ধতা চলে আসে একটা কথা ভেবে যে, এই আপুকে
একদিন চলে যেতে হবে। আমাকে ছেড়ে। তখন, আমি কীভাবে থাকবো? কীভাবে বাঁচবো?
চোখের কোণে জল এসে যায়। গাল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ওহ! আবার স্বপ্নটা ভেঙ্গে
যায়। আর একটা দীর্ঘশ্বাস।


আল্লাহতায়ালা যা দেননি, তা পেতে চাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল ভাই বোনের পবিত্র ভালোবাসা।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com