Breaking News

ডাক্তার বউ | বান্দরনীর ভাই | ২য় পর্ব

আব্বু আম্মুকে তুলিদের বাসায় পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তুলির বাবা রাজি হয়নি।তুলির বাবা নাকি অনেক আগেই ওই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো।আমার মাথায় কিছু আসছেনা এই মুহুর্তে কী করা উচিত।আব্বু অনেক অনুরোধ করেও তুলির বাবাকে রাজি করাতে পারেনি।
:-আব্বু আমি তুলিকে ছাড়া বাঁচবোনা।আমার তুলিকে চাই চাই।(আমি)
:-পাগল ছেলে একটা মেয়ে গেছেতো কী হয়েছে।ওর থেকে অনেক ভালো মেয়ে তোর জন্য খুজে নিয়ে আসবো।(আব্বু)
:-আমি আর কাউকে চাইনা।শুধু তুলিকে চাই।ওকে না এনে দিতে পারলে আমি মরে যাবো।(অনেকটা আবেগ নিয়ে বললাম)
:-বুঝার চেষ্টা কর।তুলির আগে থেকেই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
আমি আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসলাম।খুব কান্না পাচ্ছে।বালিশে মুখ চেপে কান্না করছি।চোখে খুব ব্যাথা করছে।এখনো পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়ে ওঠিনি তাই কান্না করার ফলে এমন হচ্ছে।আমি শুয়ে শুয়ে কান্না করছি এমন সময় তুলির ফোন
:-সরি আমি আপনার জন্য কিছু করতে পারলাম না।আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।(তুলি)
:-তুলি আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা।আমি সত্যিই মরে যাবো।(আমি)
:-দেখুন পাগলামি করবেন না।আমার থেকেও অনেক ভালো মেয়ে পাবেন আপনি।
:-আমি ভালো মেয়ে চাইনা শুধু তোমাকে চাই।
:-আমি জানতাম না আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো।জানলে কখনোই আমি আপনার সাথে কথা বলতাম না।সব দোষ আমার।
:-আমার সাথে পালাবে?
:-আমি পারবোনা।আমি আমার বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবোনা।তাদের জন্য যদি আমার জীবনটাও দিয়ে দিতে হয় তাতেও আমি রাজি।আপনি আমার থেকে ভালো মেয়ে পাবেন।
:-আমার দরকার নেই কাউকে।শুধু তোমাকে চাই।
:-আমি রাখছি এখন।আপনার আব্বু আম্মু যাওয়ার পর ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিলো।৩দিন পর বিয়ে।নিজের খেয়াল রাখবেন।ঠিকমত ওষুধ খাবেন।
:-আমি কিছুই করবোনা।
:-আমাকে আপনি সত্যিই ভালোবাসেন?
:-হ্যাঁ।
:-আমাকে যদি সত্যিই ভালোবাসেন তাহলে আপনি সবকিছু ঠিকঠাক মত করবেন।আর যদি কিছু না করেন তাহলে বুঝবো আপনি আমাকে কখনো ভালোবাসেন নি।
:-প্লিজ এই কথা বলোনা।
:-আমি যেটা বলেছি সেটাই।আমাদের ভালোবাসার কসম দিলাম।আপনি যদি সবকিছু ঠিকঠাক মত না করেন তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন।
তুলি আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলো।আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন ব্যাক করলাম কিন্তু বন্ধ।আবারো চেষ্টা করলাম এবারো বন্ধ।
তুলি তুমি তোমার কসম ফিরিয়ে নাও।আমি সত্যিই তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা।এসব বলছি আর কান্না করছি।
কান্না করতে করতে কখন ঘুড়িয়ে পড়েছিলাম জানিনা।আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।আম্মু আমার সামনে ওষুধ আর পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
:-নে বাবা ওষুধটা খেয়ে নে।(আম্মু)
:-আমি ওষুধ খাবোনা।(আমি)
:-দেখ পাগলামি করিস না।এখনকার যুগের ছেলেরা এমন করেনা।একটা মেয়ে গেলে কিছুক্ষণ পরেই আরেকজনকে ধরে নেয়।এভাবে শুধু শুধু একটা মেয়ের জন্য কেনো নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবি?
:-তুমিতো জানো আমি অন্য ছেলেদের মত না।আমি শুধু তুলিকে চাই আর কাউকেই না।
:-তোর বাবা এখনো চেষ্টা করছে।ওষুধটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
আম্মুর জোরাজুরিতে ওষুধ খেতে হলো।ওষুধ খাওয়ার পর কেমন জানি চোখটা আটকে আসছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম।
যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ৯টা বাজে।মনে হয় আম্মু ওষুধের নাম করে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলো তাই এতক্ষণ এক নাগারে ঘুমিয়েছি।
৩দিন পর।
আমি অনেক বদলে গেছি।এখন আর কারো সাথে কথা বলিনা।সারাক্ষণ রুমের দরজা আটকিয়ে বসে থাকি।ভালো লাগেনা কারো সাথে কথা বলতে।তুলির সাথে সেদিনের পর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।আমি ফোন দিয়েছি অনেকবার কিন্তু কখনো ফোন অন পায়নি।নিজের কষ্টগুলোকে ভুলে থাকার জন্য সিগারেট বেছে নিয়েছি।সিগারেটের ধোঁয়া কিছুক্ষণের জন্য হলেও কষ্টটাকে ভুলিয়ে রাখে।আজ তুলির বিয়ে।হয়তো এতক্ষণে বর পক্ষও চলে এসেছে।কিছুক্ষণ পরেই তুলি অন্য আরেকটা মানুষের হয়ে যাবে।
আবার কষ্টগুলো বেড়ে যাচ্ছে।সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করতে গেলাম কিন্তু প্যাকেটে হাত দিয়ে দেখি একটা সিগারেটও নাই।বাইরে গিয়ে আবার আনতে হবে।
একটা শার্ট গায়ে জরিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।আমাদের বাসা থেকে দোকান একটু দুরে।আজ রোদের তেজ একটু বেশি বেশিই মনে হচ্ছে।
সামনে একটা ছেলেকে দৌঁড়াতে দেখে থমকে দাঁড়ালাম।এতো তুলির ছোট ভাই।তুলির সাথে একবার হাসপাতালে দেখেছিলাম।ও এভাবে কোথায় দৌঁড়াচ্ছে।আমার কাছাকাছি আসতেই ও থেমে গেলো।হাঁপাতে হাঁপাতে বললো
:-ভাইয়া ভাইয়া আপু আপনাকে এখনি একবার ডেকেছে। (তুলির ছোট ভাই)
:-আমাকে কেনো ডেকেছে তোমার আপু?তোমার আপুর না আজ বিয়ে?(আমি)
:-বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।আব্বু স্টক করেছে।আপু তাড়াতাড়ি আপনাকে ডেকেছে।
:-চলো।
আমি আর রনি(তু্লির ছোট ভাই) দুজনে দৌড় শুরু করলাম।১০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম।বাড়ির চারপাশ খুব সুন্দর করে সাঁজানো।কিন্তু এই মূহুর্তে বাড়িটা থমথমে হয়ে আছে।আমি বাসার মধ্যে ঢুকে দেখি সবাই ওঠোনের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।তুলির বাবাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে তুলি চিকিৎসা করছে।আমি গিয়ে তুলির পিছনে দাঁড়ালাম।তুলির পড়নে লাল বেনারসি ভিজে একাকার। মনে হয় ওর বাবার মাথায় পানি দিতে গিয়ে এই অবস্থা হয়ছে।
আমি তুলির আম্মুকে জিঙ্গেস করলাম এসব কেমন করে হলো
:-ছেলে পক্ষ আগে ৫ লক্ষ টাকা চেয়িছিলো যৌতুক হিসেবে কিন্তু আজ সকালে হঠাৎ করে ১০ লক্ষ টাকা চেয়ে বসে।তোমার আঙ্কেল বলেছিলো ১০ লক্ষই দিবে কিন্তু একটু দেরী হবে।এসব নিয়ে কথা কাটাকাটি হতে হতে হঠাৎ করে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।(কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বললো তুলির আম্মু)
আমি আব্বুকে ফোন করে তুলিদের বাসায় আসতে বললাম।আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আজই তুলিকে বিয়ে করবো।
রাতের দিকে তুলির আব্বু অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠলো।তুলির বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে আব্বু আম্মু বিয়ের সব ব্যস্থা করে ফেললো।রাতেই আমাদের বিয়ে হলো।কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।রাতে তুলিকে নিয়ে বাসায় আসলাম।ও আসতে চাইছিলো না ওর আব্বুকে রেখে কিন্তু ওর ভাইয়েরা পাঠিয়ে দিলো।আমিও একবার বলেছিলাম থাকতে কিন্তু নতুন বউকে শুশুর বাড়িতে যেতে হয় সেই নিয়ম মেনেই তুলিকে আসতে হলো।
আমি আর তুলি এখন বাসর ঘরে বসে আছি।ও এখনো কাঁদছে।আমি চেষ্টা করছি ওর কান্না থামানোর কিন্তু পারছিনা।
:-ওই তুমি কান্না থামাবে?(আমি)
:-নিশ্চুপ।
:-কীহলো?প্লিজ কান্না থামাও।সকালেই তোমাদের বাসায় আব্বুকে দেখতে যাবো।এবারতো কান্না থামাও?
:-সত্যি নিয়ে যাবেতো?
:-হ্যাঁ যাবো।
:-মনে থাকে যেনো।
:-থাকবে।এবার একটু হাসো।কান্না করলে তোমাকে একদম পেত্নীর মত লাগে।
:-আমিতো পেত্নীই।
:-দেখেছো আল্লাহ যার সাথে যার লিখে রেখেছে তার সাথেই তার বিয়ে হবে।কেউ এই লেখন মুছতে পারবেনা।
:-হুম।
:-তবে তোমাকে বিয়ে করে ভালোই হলো ফ্রিতে ডাক্তারের সেবা পাওয়া যাবে।
:-তবেরে দুষ্টু দিচ্ছি তোমার সেবা।
এই বলপ তুলি আমার বুকে কিল ঘুসি মারতে শুরু করলো।আমিও তুলির সাথে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠলাম।
২ মাস পরের কথা।
তুলি এখন আমাদের পরিবারের একজন সদস্য।তুলি সকালে হাসপাতালে চলে যায় আর আমি অফিসে।সারাদিন দুজন অফিস করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি তবুও দুজনের মাঝে কোনো ভালোবাসার কমতি ছিলোনা।আম্মু হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।আব্বু আগে থেকেই কিছুটা অসুস্থ ছিলো।আম্মুকে অসুস্থ হতে হতে দেখে টেনশনে আব্বুও অসুস্থ হয়ে পড়ে।আমি তুলিকে বলি হাসপাতাল থেকে কয়েকদিনের ছুটি নিতে।ও বলে একজন নার্সকে আব্বু আম্মুর দেখাশুনার জন্য রাখবে।আমি মেনে নিই।
এরপর ১সপ্তাহের মত কেটে যায়।আম্মু তবুও সুস্থ হচ্ছেনা।সেদিন রাতে তুলিকে বললাম
:-দেখো এভাবে আব্বু আম্মুকে অবহেলা করা আমাদের ঠিক হচ্ছেনা।তুমি কয়েকদিন ছুটি নিয়ে আব্বু আম্মুর পাশে থাকো এরপর আমি কয়েকদিন ছুটি নিয়ে পাশে থাকবো তাহলে আব্বু আম্মু দুজনেই ভালোভাবে সুস্থ হয়ে ওঠবে।(আমি)
:-দেখাশুনার জন্যতো লোক আছেই।সুস্থ যখন হচ্ছেনা তখন হাসপাতালে ভর্তি করে দিলেই হবে।(তুলি)
:-তুমি থাকতে আব্বু আম্মুকে হাসপাতালে থাকতে হবে এটা বলতে পারলে?
:-কেনো খারাপ কিছু বলেছি আমি?
:-থাক তোমার আর চাকরিই করতে হবেনা।তুমি কালই রিজাইন দিবে।আমার এত টাকার দরকার নেই।তুমি আব্বু আম্মুর পাশে থাকলেই হবে।
:-দেখো এটা নিয়ে আমি নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করতে চাইনা।সারাদিন পর এখন আমি অনেক ক্লান্ত ঘুমোতে দাও আমাকে।
:-তোমার শুশুড় শাশুড়ি দুজনেই অসুস্থ আর তুমি আরামে ঘুমাতে চাচ্ছো?
:-ধুর ভালো লাগেনা।আমি কী করতে পারি উনাদের জন্য?সারাদিন কাজ করে এখনতো আর সারারাত উনাদের জন্য জেগে থাকতে পারিনা।আমিওতো মানুষ।আমারো বিশ্রামেরর প্রয়োজন আছে।
:-তুমি শেষ কবে আব্বুকে নিজের হাতে ওষুধ খেতে দিয়েছিলে মনে আছে তোমার?
:-আমি আর কেনো কথা বলতে চাচ্ছিনা।তোমার বাবা মাকে তুমি দেখো।আমাকে শান্তিতে ঘুমোতে দাও।
এবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম তুলির গালে।তুলি গালে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো
:-তুমি আমাকে গায়ে হাত তুললে?থাকো তুমি তোমার বাবা মাকে নিয়ে।আমি আর এই বাড়িতে থাকবোনা।
আমি রাগের মাথায় বলে দিলাম
:-যা তুই।এখনি যা।
সেই রাতেই তুলি ব্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেলো।আমার থাপ্পর মারাটা ঠিক হয়নি।পরেরদিন সকালে তুলিকে আনতে গেলাম ওদের বাড়িতে কিন্তু তুলি আমাকে অনেক অপমান করলো ওদের বাসার সবার সামনে।আমি কিছু না বলে চলে আসলাম।আব্বু আম্মু দিনে দিনে বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে তাই ভালো ডাক্তার দেখালাম।ডাক্তার বললো উনাদের ঠিকমত যত্নের অভাবেই দিনে দিনে বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।বাসায় ছোট দুইটা ভাই আছে ওদেরও ঠিকমত আদর যত্ন হচ্ছেনা।আমি তুলির কাছে আবার গেলাম ওকে ফিরিয়ে আনার জন্য।কিন্তু ও এবারো আগের মতই খারাপ ব্যবহার করলো। আর এবার সরাসরি বলে দিবো ও আর আমার কাছে আসবেনা।ডিভোর্স দিয়ে দিবে।আমি এবারো মুখ বুজে সহ্য করে নিলাম সব।এখন আমাকে ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা।আমি ভেঙ্গে পড়লে আব্বু আম্মু আর ছোট ভাইদের দেখার কেউ থাকবেনা।
-(চলবে)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com