বিয়ের পরে প্রেম | লেখক: আকাশ আহম্মেদ | প্রথম পর্ব

সকাল সকাল মায়ের চেঁছামেছিতে ঘুম ভাংলো....... ঘুম থেকে উঠে দেখি মা গোমরা মুখ নিয়ে বসে আছে....
আমি:কি হইছে মা ? তোমার কি মুড় খারাপ....?
মা:মুড় খারাপ মানে কথা বলবি না তুই আমার সাথে কবে থেকে বলতেছি বিয়ে কর বিয়ে কর তোর কানে কথাই যায় না .....
আমি:আরে বাবা এখনো তো আমি বাচ্চা বিয়ের বয়স হোক তারপর করবো নি....

এবার আমরা পরিচয়টা দেওয়া যাক..... আমি:আকাশ আহম্মেদ...বাবা মায়ের বর্তমান বেকার সন্তান....মাস্টার্স কম্পিলিট করছি এক বছর কিন্তু এখনো চাকরি নামের সোনার হরিণের দেখা এখনো পাই নি
অবশেষে গতকাল রাতে বাবার অনুরোধে তার বন্ধুর অফিসে একটা চাকরির সুযোগ পেয়েছি‌.....ফ্রেস হয়ে রুমে আসলাম...মা খাবার বেড়ে দিলো...খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম......
বাসা থেকে বের হয়ে রিকসায় উঠলাম....এমন সময় ফোনটা টুংটাং শব্দ শুরু করলো বুঝতে বাকি রইলো না কারো কল এসেছে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি আমার জানটা কল দিয়েছে ....কি ভাবতেছেন আমার গার্লফেন্ড আরে না ও আমার বেস্ট ফেন্ড আদনান......কলটা ধরে....
আমি:কি রে শালা এতো সকাল সকাল দুলাভাইয়ের খোঁজ ....কি ব্যাপার .....
আদনান: পাইজলামী রাখ ...আর শুন বিকালে একবার আমার সাথে দেখা করবি....
আমি:আচ্ছা ঠিক আছে তা না হয় করবো.....

আদনান:আচ্ছা এখন রাখি ...বাই...
টুটুট কলটা কেটে দিলো.... আমি ও আপন গতিতে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ....বিশ মিনিট পর অবশেষে অফিসে পৌছালাম.....না আমার সার্টিফিকেট গুলো দেখলো আর বললো....
বস:চাকরি তো হয়ে যাবে ...... বেতন কত চাও ??
আমি:একটা কিছু হলেই হবে কিন্তু বেকারত্বের উপাধি থেকে মুক্তি পেতে চাই....
বস:হা হা হা ....আচ্ছা 1 তারিখ থেকে জয়েন করো.....
আমি:মুচকি হাসি দিয়ে.....থাংকু স্যার থাংকু সো মাচ.....অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম একসপ্তাহ পর থেকে আমার জন শুরু ওহ ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে দুপুরে খেয়ে লম্বা করে একটা ঘুম দিলাম.....বিকালে ঘুম ভাংলো আদনানের ফোনের শব্দে ..... ঘুম ঘুম চোখে কলটা ধরলাম...
আদনান:কি রে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস তোকে না বললাম বিকালে দেখা করতে....
আমি:এইতো আসতাছি একটু অপেক্ষা কর......
ঘুম থেকে উঠে আদনানের কাছে যাচ্ছি আমাদের আড্ডা দেবার জন্য একটা জায়গা আছে দুজনের পছন্দের তাই আমরা সব সময় ওখানেই দেখা করি.....
দেখা করার পর .....
আদনান:আসছিস....শুন আগামী পরশু থেকে সিমরানের বিয়ে.... হঠাৎ করে বিয়েটা ঠিক হয়ে গেলো .... আর হুম তুই কিন্তু অবশ্যই কালকে সকালে চলে আসবি.....
আমি:কস কি শালা তোর বোনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ....আহারে আমার কি হবে.....
আদনান:হি হি হি তুই দেবদাস হইয়া বইসা থাক....আর সকালে তারাতারি চলে আসবি .... আমি এখন আসি বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে....

আমি:আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যাস.....
আদনানের সাথে দেখা করে বাসায় ফিরলাম.....ও আপনাদের তো বলাই হয়নি আদনানের একটা বোন আছে .....সিমরান....এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে....বাসায় এসে মাকে বলে রাখলাম কাল থেকে দুদিন আদনানের বোনের বিয়েতে যাবো‌‌... জবাবে মা যা বললো.... হি হি হি...মা :যদি কোন মেয়ে পছন্দ হয় তো বিয়ে করে নিয়ে আসিস ..... আমি বুকে টেনে ঘরে তুলে নেবো‌‌.‌...... আমি:আচ্ছা চেষ্টা করবো ....এখন ঘুমাই.......সকালে তারাতারি উঠতে হবে না হলে পাগলটা রাগ করবে তাই
রাতে খেতে তারাতারি ঘুমিয়ে পরলাম.......
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে আদনানের বাসায় আসলাম.....আজকে সিমরানের গায়ে হলুদ....বাসায় মেহমানের আগমন শুরু হয়েছে.... আমি ও এসে উপস্থিত হলাম.......বাসায় আসার পর সিমরানের মা মানে আন্টির সাথে দেখা.....
আমি: আসসালামু আলাইকুম.....
আন্টি: ওয়ালাইকুম আসসালাম....কেমন আছো বাবা..?আসো ভেতরে আসো.....
আমি: আলহামদুলিল্লাহ ভালো.....ভেতরে আসলাম.... সৌফায় বসে আছি.....ও বলাই হয়নি আন্টি আমাকে খুব ভালোবাসে নিজের ছেলের মতো আদর করে.....সারাবাড়িতে মেহমান বাসায় ভালো লাগতেছে না..... তাই একটু বাসার ছাঁদে আসলাম .....দেখি সিমরান আর তার বান্ধবিরা আড্ডা দিতেছে.....আমাকে দেখেই ....
সিমরান:আরে আকাশ ভাইয়া যে....কেমন আছেন???
আমি:এইতো ভালোই .... তুমি????
সিমরান:মুচকি হেসে.... আলহামদুলিল্লাহ...ভালো...!!
কিছুক্ষন ওদের সাথে দুষ্টুমি করে মনটা ভালো হয়ে গেলো...... একটু পর আদনান আসলো....
আদনান:কি রে হারামি তুই এখানে আর আমি তোকে সারাবাড়িতে খুঁজে বেডাচ্ছি‌....নিচে চল অনেক কাজ পড়ে আছে.....
আমি:আচ্ছা চল..... মি আসি সিমরান তোমরা চালিয়ে যাও....
সিমরান:ওকে ভাইয়া ....
নিচে এসে কাজে লেগে পরলাম......হলুদটা অনেক আনন্দের সাথে শেষ হলো ...সবাই মিলে অনেক দু্ষ্টুমি করলাম.....অনেক মজা করেছি.....
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সব কিছু ঠিক আছে কি না দেখলাম সব কাজ সেরে বারোটার দিকে গোসল করে রেড়ি হয়ে নিলাম...... আমি আর আদনান বর যাএীর জন্য অপেক্ষা করলাম ....বেলা দেড়টা কিন্তু বর যাএী এখনো আসতেছে না.....দুইটা বাজলো বর যাএী আসলো না...... অতঃপর আমি আদনানকে বলি বরের বাড়িতে কল দিতে.........বরের বাবার সাথে কথা বলার পর আদনান কেমন যেনো নিশ্চুপ হয়ে গেছে আমি জানতে চাইলাম কিন্তু ও কিছু বলতেছে না .....দশ মিনিট পর....

আদনান:আকাশ ওরা বলতেছে ....রায়হান (মানে সিমরানের সাথে যার বিয়ে হবার কথা ছিলো) ছেলেটা একটা মেয়েকে ভালোবাসতো কিন্তু ওর বাবাকে খুব ভয় পেতো তাই কিছু বলতে পারে নি আর কালকে রাতে ছেলেটা তার প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে ওরা বলতেছে ওরা আসবে না ....আমাকে ফোন করে হুমকি ও দিচ্ছে আর ওরা বলতেছে বিয়ের সব ব্যায় ওরা দিয়ে দেবে ...... আমি এখন কি করবো আকাশ তুই বল.....বিয়েটা যদি না হয় গ্রামে মানসম্মান থাকবে না ...বাবা তো কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবে না ....আর আমার বোনটার কি হবে ...ওর মুখের হাসিটা তো হারিয়ে যাবে আর ও যদি এই কথা শুনতে পারে তাহলে তো আত্নহত্যা করবে......
আমি:চিন্তা করিস না কিছু একটা উপায় তো বের করতে হবে.......
আদনান নিশ্চুপ বসে আছে কি বলবো ওকে আমি নিজে ও জানিনা ....চারদিকে আনন্দের সমারোহ আর এই কথাটা যদি জানা জানি হয়ে যায় তাহলে সব আনন্দ এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যাবে ‌......

আমি:এই আদনান কান্না করতেছিস কেনো তুই...... তুই একদম কাঁদবি না সিমরানের বিয়ে হবে আমি সিমরান কে বিয়ে করবো.....
আদনান:সত্যি...?
আমি হুম....মা অনেক দিন ধরে বিয়ের জন্য বকতেছে ....আর একটা চাকরি ও পেয়ে গেছি সিমরান কে বিয়ে করলে মন্দ হবে না ...আর তুই ও সারাজীবন আমার শালা হয়ে থাকবি......
আদনানের চোখ দিতে অশ্রু ঝরতেছে দেখতে পাচ্ছি..... আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিয়েছে.......
আমি:এই পাগল কান্না করিস কেনো....
আদনান:সত্যি রে তোর মতো বন্ধু হয় না .....
আমি:বাদ দে ওসব বেলা বাড়তেছে তারাতারি বিয়েটা করে বাড়িতে যেতে হবে.....
আদনান:এক মিনিট দারা ... আমি বাবার সাথে কথা বলে এক্ষুনি আসতেছি ......
সব কিছু বলার পরে পরিস্থিতি হিসেবে সবাই মেনে নিয়েছে আর আমি ও বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় আসলাম......

.
চলবে ......