ছোট বেলার সেই ভালোবাসা| 3য় পর্ব
ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতেছি এমন সময় একটা চলতি রিকসার উপর আমার নজর পড়লো..কোন কিছু না ভেবে দৌড়াতে শুরু করলাম………..
রিকসায় করে ঐ মেয়েটা মানে যার সাথে আমার জগড়া হয়েছিলো সে যাচ্ছে কিন্তু তার ওরনাটা রিকসার চাকার সাথে ঝুলতেছে যে কোন সময় পেঁছিয়ে যেতে পারে আর ঘটতে পারে মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা…..
আমি দৌঁড়ে গিয়ে রিকসার চাকার মাজে ঝুলে থাকা ওরনাটা চিনিয়ে নিজের কাছে নিলাম…..মনের মধ্যে এবার কিছু টা শান্তি লাগতেছে… একটা মেয়েকে এক্সিড়েন্টের হাত থেকে বাঁচলাম…..কিন্তু পরক্ষনে যা ঘটলো তার জন্য আমি কখনোই প্রস্তুত ছিলাম না ….
মেয়েটা রিকসা থেকে নেমই ঠাসসসস আমার গালে কষে একটা চড় মারলো একটু পর আবার ঠাসসস আরেকটা ….. তারপর আমার হাত থেকে ওড়নাটা ছিনিয়ে. নিয়ে মেয়েটা অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিলো….
মেয়েটা:কুওা তোর বাসায় মা বোন নেই নাকি যেখানে সেখানে মেয়েদের সাথে এমন নোংরামী করিস….পার্ক কলেজ রাস্তা সব জায়গায় মেয়েদের হয়রানী করিস…..তোর মতো চরিএহীন জীবনে একটা ও দেখি নি ….রাস্তার কুকুরের থেকে ও অদম তুই…. ছিহ লজ্জা করে না রাস্তার মাঝে এসব করতে…..আরো কত কি
বললো…..
আমি:আরে আপনি শুশুন আগে … আমি ইচ্ছে করে এমন করিনি…..মানে….+++
পাশ থেকে কলেজের বড় এসে জুটলো আর আমার কিছুই বলা হলো না তারপর কি হয়েছিলো ইতিহাসই রয়ে গেলো সবার সামনে বলে নিজের মানসম্মানটা হারাতে চাই না……
মার খেয়ে কলেজে থেকে বাসায় আসলাম…….
বাসায় এসে রুমে শুয়ে আছি মাথাটা কেমন যেনো করতেছে ঢাকায় আসলাম সাফুকে খুঁজে বের করার জন্য একটা মেয়ের সাথে উল্টো পাল্টা ঘটনা ঘটে তো মহা বিপদে পড়তাছি ….আর পাবলিকের গব ধোলাই…
ইসসসস কি অবস্থা হয়েছে …..মেরে একদম পাটিয়ে দিয়েছে…..কি খায় এই মেয়ে কি জোররে বাবা ওর হাতে…..একদম খায়েল করে দিলো আমাকে…..
যাক একটু পর খালা এসে খেতে ডাকলো….. শুধু মার খেলে তো পেট ভরবে না তাই একটু খেয়ে নিলাম….খাওয়া শেষে দুপুরের ঘুম দিলাম……
ঘুম থেকে উঠলাম….বসে বসে গান শুন ছিলাম এমন সময় খালা এসে বললো ….বাবা আকাশ বাজার থেকে কিছু ডিম নিয়ে আয় তো…..
আমি খালার থেকে টাকা নিয়ে বাজারে আসলাম ডিম নিয়ে ….ডিম কিনে বাসায় ফিরতেছি …..বাসায় আসার সময় হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কেউ যেনো রাস্তা পার হওয়ার সময় এক্সিড়েন্ট করলো….. আমি দৌঁড়ে সামনে গেলাম গিয়ে দেখি রক্তাও গায়ে একটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে…..আরে এতো সেই মেয়ে যে আমাকে সকালে থাপ্পর মেরেছিলো……মেয়েটার পায়ের দিকে তাকাতেই দেখি একপায়ে নুপুর আর অন্য পা খালি….নুপুরটা দিকে তাকিয়ে আমি স্তব্দ হয়ে যাই পকেট থেকে আমার নুপুরটা বের করে দেখি এই তো আমার সাফু আর ওর পায়ে সেম নুপুর ….. কিছু না ভেবে তারাতারি মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই…..
হাসপাতালে আমার পর ডাক্তার চিকিৎসা করতেছে …..
আর আমি বাহিরে একটা চেয়ারে বসে আছি…..
এই তাহলে আমার সাফু যাকে আমি পাগলের মতো খুঁজতেছি অথচ সে আমার চোখের সামনেই ছিলো কিন্তু আমি বুঝতেই পারি নি ….যাই হোক ওরে তো পেলাম কিন্তু এভাবে পাবো কখনো কল্পনা ও করিনি…….
একটু পর ডাক্তার আসলো……
ডাক্তার : ইমারজেন্সি রক্তের প্রয়োজন রক্ত না পেলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব না…..
আমি :কোন গ্রুপের রক্ত লাগবে ডাক্তার…..
ডাক্তার :AB পজেটিভ……
আমি:স্যার আমার রক্তের গ্রুপ AB পজেটিভ….আমার শরীরের সব রক্ত দিয়ে হলে ও আমার পাগলিটাকে বাঁচান ডাক্তার……
ডাক্তার :আপনি তারাতারি আমার সাথে আসুন……
আমি: হুম চলুন…..
দুই ঘন্টা পর রক্ত দেওয়া শেষ হলো…..এই ফাঁকে খালাকে কল দিয়ে বললাম……
আমি :খালা আমার একটা বন্ধুর এক্সিড়েন্ট হলো বাসায় আসতে দেরী হতে পারে আবার না ও আসতে পারি টেনসেন করো না কিনু
খালা:আচ্ছা বাবা ঠিক আছে সাবধানে থাকিস……
বিকাল গড়িয়ে রাত হয়ে এলো কিন্তু এখনো সাফুর জ্ঞান ফিরলো না…..
সারারাত ওর পাশে বসে অপেক্ষা করতেছি কলিজাটা যেনো ছিড়ে যাচ্ছে কিন্তু পাগলিটা তো চোখ মেলে ও একবার তাকাচ্ছে না…..ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি কখন যে ভোর হলো বুঝতেই পারি নি…… একটু পর দেখি সাফু কি যেনো বলতেছে কিন্তু বুঝতে পারছি না…… একটু পর আওয়াজটা স্পষ্ট হলো আকশু ও আকশু কোথায় তুমি সোনা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে…..
মনের মধ্যে খুব ভালো লাগতেছে খুশিতে চোখ দিয়ে জল ঝরতেছে….
ও চোখ মেলার আগেই আমি ডাক্তার কে ডেকে বললাম ওর বাসায় একটা কল দেবেন আর ওর খেয়াল রাখবেন আমি একটু আসতেছি……
তারপর সকাল বেলা হাসপাতাল থেকে চলে আসলাম আর বাসায় এসে রেস্ট নিলাম…….সারারাত ঘুমাই নি তাই লম্বা করে একটা ঘুম দিলাম ঘুম থেকে উঠে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি 4 টা বাজে …… তারাতারি ফ্রেস হয়ে খেতে নিলাম……
এরপর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম একটু পর
হাসপাতালে এসে পৌঁছালাম ….সাফুর কেবিনে ঢুকতেই আমাকে দেখেই সাফু যেনো আকাশ থেকে পরলো পাশে সাফুর মা বসে আছে……
ডাক্তার :আসুন মিষ্টার আক…
আমি:থাক আর বলা লাগবে না আমি চলে এসেছি..
ডাক্তার:মিস সাফরিন ইনিই আপনাকে এক্সিড়েন্টের পর হাসপাতালে নিয়ে এসেছে আর রক্ত দিয়ে আপনার জীবন বাঁচিয়েছি..সত্যি কথা বলতে আপনাকে যদি ঠিক সময়ে নিয়ে না আসতো আর রক্ত না দিতো তাহলে আপনি …..
আর কিছু বলার আগেই আমি বললাম ডাক্তার এবার কিছু হবে না আমি তো আছি…..
একটু পরে ডাক্তার কেবিনের বাহিরে গেলো আর সাফুর মাবললো আমরা কথা বলতে তিনি নাকি কার সাথে কথা বলবে একটু বাহিরে গেলো…….
আমি সাফুর পাশে গিয়ে বসলাম ……
আমি :কিভাবে এক্সিড়েন্টটা হলো…….?
সাফু:মনটা খুব খারাপ ছিলো তাই না দেখেই রাস্তা পার হচ্ছিলাম এমন সময় একটা কার এসে ধাক্কা দেয় আমি মাটিতে গড়িয়ে পড়ি…….এরপর আর কিছু মনে ছিলো না জ্ঞান ফেরার পরে দেখি এখানে …….
আমি:আমাকে please ক্ষমা করে দেবেন আমি সত্যিই লজ্জিত …….. আমি আপনার সামনে যখনই পড়েছি বিপরীত কিছু হয়েছে…….বিশ্বাস করুন রিকসার চাকার মাঝে আপনার ওড়নাটা পেঁছিয়ে যেতে লেগেছিলো তাই এমন করেছি……. আমি সত্যি এতো বাজে ছেলে না……..
সাফু: please এভাবে বলে আমাকে আপনি আর লজ্জা দেবেন না দুই দুই বার আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন বিনিময়ে আপনাকে অপমান অপদস্ত করলাম……. please আমাকে ক্ষমা করে দেবেন…..
আমি কিছু মনে করি নি আর ক্ষমা করতে পারি একটা শর্তে ……….
.
.
.
চলবে ………..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com