সুন্দরী ভাড়াটিয়া | লেখক - Sobuj Islam Srabon
ঘরে বসে গেমস খেলছি। আর গান
শুনছি,, তখনই মা এসে ডাক দিল,,
– নীল, দেখতো বাবা কে আসছে,
– কই, কে আসলো?
– কলিং বেল চাপছে।
– আচ্ছা দেখছি।
.
অফিস বন্ধ, কই একটু নিজের ইচ্ছেমত কিছু
করবো, তা রেখে এখন যেতে হচ্ছে কে
আসছে সেটা দেখতে!!
দরজা খুললাম। দরজা খুলেই দেখি এক মধ্য
বয়স্ক মহিলা,,
– আসসালাম অলাইকুম আন্টি,,
– অলাইকুম আসসালাম,,
– আপনাকে তো চিনলাম!
– একি তুমি জানো না?
– কি জানবো।
– তোমাদের নিচতলায় ভাড়ায় আসছি
আমরা। আর আজকে আমাদের এ বাসায়
উঠার দিন, তাই দেরী না করে সকাল
বেলায়ই এসে পড়লাম।
– ওহ্,, হ্যাঁ, মা তো আমাকে বলছিল
কিন্তু আমারই মনে নেই। ভেতর আসুন।
.
তারপর আমার ক্লাশ অফ ক্লান গেমস
রেখে ওনাদের হেল্প করতে লাগলাম।
আমাদের বাড়ি টা দুতলা। আর আমরা
দুইতলায় থাকি। আমি মা আর বাবা।
তিন জনের পরিবার।
আমি আর বাবা দুজনেই চাকরি করি।
আমি কেবল ৩ মাস হলো জয়েন্ট করছি।
পড়াশুনা শেষ করে আর দেরী করিনি,
বাবার সাহায্য নিয়ে চাকরিতে
জয়েন্ট করছি।
.
এখন বাবা ছেলে দুজনেই চাকরি করি।
নিচতলাটি ফাকাঁ পরে আছে তাই
ওটা ভাড়া দিয়ে দিছে। আর শহর
অঞ্চলে এখন প্রায় সবাই বাসা খুজে,,
যারা অন্য জায়গায় থেকে আসে।
.
নতুন ভাড়াটিয়া মাত্র তিনজন দেখতে
পেলাম,, আন্টি, চাচা আর একটা
বাচ্চা মেয়ে,, ছোট ঐ সাত আট বছরের
হবে। মালপত্র গুছিয়ে দিতে দিতে
বললাম,,
– আন্টি আপনারা কি এই তিনজনই
থাকবেন?
– না বাবা!! আমার বড় মেয়ে আসবে
বিকেলে। তারপর আবার কালকে
এখানকার কলেজে ভর্তি হবে।
– ওহ্।
– তুমি একটু দেখো বাবা,, নতুন জায়গা
কাউকে চিনি না,, আর কলেজের
বেশী কিছু বুঝিও না। তুমি একটু
সাহায্য কইরো।
– আচ্ছা দেখা যাবে।
.
তারপর আমি বাকি কাজ করে আমি
আমার রুমে চলে আসলাম।
তিনদিনের ছুটি পাইলাম, তবুও এ কদিন
বোধ হয় ওনাদের কাজ করতে হইবো।
অফিসের কাজ আবার বাসার কাজ, শুধু
কাজ আর কাজ।
.
রুমে এসে কতখন টিভি দেখে আবার
শুয়ে পড়লাম। শুধু ঘুম আসে।
উঠলাম একেবারে বিকেল বেলা।
বিকেলে উঠে ভাবলাম একটু বাইরে
থেকে হাটাহাটি করে আসি। তাই
চললাম বাইরে ঘুরতে।
.
দরজা থেকে বেরিয়েই একটা ছোট্ট
ধাক্কা খেলাম। ধাক্কা টা আমার
কাছে ছোট মনে হলেই আরেক জনের
কাছে হয়তো বড় মনে হইছে। কারণ আমি
তো ইয়ং ম্যান,, আর ওটা হয়তো কোনো
মেয়ে থাকবে।
.
– ওই চোখে দেখেন না?
– দেখি তো।
– ঘোড়ার ডিম। কি দেখেন হ্যাঁ?
– আমার সামনের পরীটা দেখি।
– হোয়াট?
– সরি, কিছু না।
– যত্তোসব,, আপনি দেখেন না, আমি
দরজা দিয়ে ঢুকছি তবুও আপনি একসাথে
বের হলেন কেন?
– আপনি চোখে দেখেন না, আমি দরজা
দিয়ে বের হচ্ছি, তবুও ঢুকলেন কেন?
– ধ্যাত, পাগল কোথাকার, সরুন!!!
– আচ্ছা, জান।
– হোয়াট জান,,
– শুধু শুধু, হোয়াট হোয়াট করেন কেন?
আপনি কি আমার পারসোনাল কেউ
নাকি যে জান বলবো। আমি বলছি
যান।
– ওকে ওকে।
.
তারপর ওনাকে ভেতর যেতে দিয়ে
আমি বাইরে চলে গেলাম। মনে হয়
এটাই আন্টির বড় মেয়ে। অনেক সুন্দর
কিন্তু খুব রাগী টাইপের,, দেখেই
বোঝা যায়।
.
তারপর একটু বাইরে হাটাহাটি করে
বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে,
দরজার সামনে আসতেই আবার সেই নাম
হারা পরীর সামনে।
– এইযে চাপুন, দরজার সামনে কি করেন।
– আপনি এখানে এই সন্ধ্যা বেলা কি
জন্য আসছেন?
– ভেতর যাব তাই আসছি।
– ভেতর যাবেন কেন হ্যাঁ?
– ( আমার বেহুঁশ হবার অবস্থা, ভুল করে
আবার কার বাসায় চলে আসলাম)
আচ্ছা, চলে যাচ্ছি।
– যান।
.
তারপর আবার গেটের সামনে চলে
আসলাম। তখন গেটে তো ঠিক নামই
দেখলাম, আমার বাবার নাম দেওয়া
আছে,,, তারপর আবার দরজার সামনে
গেলাম। গিয়ে দেখি, ওই মেয়ে আর
মা বসে আছে দরজা থেকে একটু ভেতর,,
আমাকে দেখতে পেয়েই মা বললো,,
.
– নীল, এতো সময় কই ছিলি?
– বাইরে।
– এতখন বাইরে কি?
– বাসা খুজতে ছিলাম।
– কার বাসা?
– আমার।
– পাগল হইলি কবে?
– এই একটু আগে।
– চুপ, রুমে যা।
আচ্ছা,,
.
– আন্টি ওনি কে?
– আমার একমাত্র ছেলে।
– কিইইইই?
– কেন? আগে দেখোনি?
– বিকেলে দেখছিলাম বাসায়,,
বাসা থেকে বের হচ্ছিল তাই ভাবছি
অন্য বাসার কেউ হবে হয়তো।
– হিহিহি,,
.
মা আর ওই বজ্জাত মেয়ের এই টুকু কথা
শুনেই এসে পড়লাম। আমাকে বাইরের
ছেলে ভাবার কি আছে? আমাকে
দেখে কি এ বাসার ছেলে মনে হয় না?
.
এভাবে পাঁচ দিন চলে গেল। এই
পাঁচদিনে ওদের সাথে আমাদের খুব
ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেছে। ওই মেয়ে সবসময়
মার পেছনে পরে থাকে আর সবসময় কি
যেন গুজুর গুজুর করে দুজনে মিলে। কিন্তু
আমি এখন এগুলো তোয়াক্কা করি না,
আমার মতো আমি আছি।
.
তারপর শনিবার সকালে ঘুমিয়ে আছি।
ভাবছি আজ অফিসে যাব না, শরীর টা
একটু খারাপ লাগছে তাই। কিন্তু
কাউকে বলিনি।
– নীল, অফিস যাবি না।
– না মা।
– তাহলে একটা মহিলা কলেজে যা
তো।
– মহিলা কলেজে গিয়ে কি করবো?
আমি মহিলা নাকি?
– দিয়াকে নিয়ে যা।
– হেইডা আবার কেডা?
– ভালভাবে কথা বল।
– ওকে ওকে,,
– তোর আন্টির বড় মেয়ে।
– ওহ্, তাইলে ওই ঢংগীটার নাম দিয়া!!
– চুপ,, ওরে নিয়ে যা।
– কেন?
– ভর্তি হইবো তাই।
– সেদিন না ভর্তি হওয়ার কথা ছিলো?
– সেদিন হয় নাই,, আজকে হইবো।
– আচ্ছা, দেখা যাবে।
– তাড়াতাড়ি।
.
ও মাই গড, এখন কি এই মেয়ে মানুষ
ক্ষ্যাপাতে হইবো নাকি? একা যাইতে
পারে না। আবার আমারে সাথে
নিতে হইবো। এই কদিনে একেবারে
মার মাথায় চড়ে বসছে। কিভাবে যে
মেয়ে গুলো এতো তাড়াতাড়ি করে
আরেক জনের সাথে মিশতে পারে কে
জানে?
.
অনিচ্ছাকৃত ভাবে উঠতে হলো,,
ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে
দেখি সে আগেই রেডি হয়ে আছে আর
বসে বসে আমার প্লেটে রাখা ডিমে
ভাগ বসাইছে।
– আমার ডিম খাইলেন কেন?
– আমি আপনার ছোট, সো তুমি করে
বলাই বেস্ট।
– ওকে ওকে, ডিম কই?
– কই আবার,, আমি খাইছি।
– তোমার টা তো খাইছই আবার আমার
টায় ভাগ বসাইছো কেন?
– এমা আর কই পর থেকে যার সবকিছুতেই
অধিকার স্বরুপ ভাগ বসাবো তারটায়
তার আগেই একটা ডিমে ভাগ বসাইলে
কি হইবো?
– হোয়াট?
– কিছু না।
– উল্টো পাল্টা কিছু বলবে না কিন্তু।
– তাড়াতাড়ি খান তারপর চলুন।
– আচ্ছা।
.
তারপর ফ্রেস হয়ে, খাওয়া শেষ করে
ওকে নিয়ে বের হলাম। আবার রাস্তায়
এসে, যখন গাড়িতে চড়বো তখন,,
– এই একটা রিক্সা ডাকুন তো।
– সিএনজিতে যাব।
– না, রিক্সায় যাব।
– রিক্সায় কেন?
– এমনি।
– আইচ্ছা।
.
– আমি নিশ্চিত এ মেয়ের কোনো
বাজে ধান্দা আছে, নাহলে এসব অদ্ভুত
ধরনের ব্যবহার করে কেন? তারপর বাধ্য
হয়ে একটা রিক্সা ডাকলাম। রিক্সায়
উঠে আমি একটু চেপেই বসলাম। যাতে
ওর সাথে বেশি ছোয়া না লাগে।
ডিজিটাল মেয়ে, কি থেকে আবার
কি বলবে ঠিক নেই।
.
– এই আপনি এতো চেপে বসলেন কেন?
– এমনি।
– হুহ ( একটু খানি আমার কাছে আসলো)
– এই কি করছো? ওদিকে যাও।
– আর জায়গা নেই,, তাই দুজন একসাথেই
বসবো।
– এই দেখো বড়দের মতো পাকনামী
করবে না।
– আমি ছোট নাকি?
– হুম।
– এই দেখুন ফাজলামো করবেন না
কিন্তু, আমি ডিপ্লোমায় পড়ি,, সো
আমি বাচ্চা মেয়ে নই।
– বাব্বা,,
– হু।
.
তারপর ঝামেলা টা কলেজে রেখে
আসলাম। আর আমি বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে শরীর টা একটু ভালো
লাগছে,, তাই ছাদে গেলাম,, ছাদের
ফুল গাছ গুলোতে জল দিতে। জল দেওয়া
শেষে হেডফোন লাগিয়ে ওখানেই
বসে পড়লাম। হালকা বাতাস আসছে
তাই। খুব ভালো লাগছে। এভাবে দুপুর
হয়ে গেল। যখন ১ টা বাজে তখন আমার
ঘর থেকে কি যেন ভাঙার শব্দ এলো।
.
শব্দটা এতো জুরে হইছে যে, আমার
হেডফোন ভেদ করে কানের কাছে
চলে এলো, তাই দৌড়ে নিচে গেলাম।
গিয়ে দেখি আমার পছন্দের ফুলদানি
যেটা কয়েক দিন আগে কিনে এনে
টেবিলে রেখে দিছিলাম ওটা ওই
দিয়া ভেঙে দিছে।
.
– এটা কি হলো?
– ভালই হইছে।
– ভাঙলে কেন এটা?
– বেশ করছি।
– ভালভাবে কথা বলো।
– আমাকে রেখে চলে আসলেন কেন?
– আমি কি তোমার জন্য ওখানে
দাড়িয়ে থাকবো?
– হ্যাঁ হ্যাঁ থাকবেন।
– হোয়াট??? কেন থাকবো?
– কারণ, আমি,,
– কি?
– কিছু না।
– শুধু শুধু আমার পছন্দের ফুলদানি টা
ভেঙে দিলে!!
– আপনি জানেন আমি একা আসার সময়
কতগুলো বদমাশ ছেলে রাস্তায় আমার
দিকে তাকিয়ে ছিলো আর কি যেন
বলছিল।
– তাকাবেই তো। এতো সুন্দর হইছো
তারা কি তোমার দিকে না
তাকিয়ে ৭০ বছরের বুড়ির দিকে
তাকাবে নাকি??
– আপনিও বলছেন এ কথা??
– বলবো না তো কি করবো,,, হিজাব বা
বোরকা পরে চলতে পারো না।
– আচ্ছা, তাহলে এরপর ওগুলোই পড়বো
( মাথা নিচু করে বললো)
– যাও এখন,
– আচ্ছা।
.
তারপর ওকে নিচে পাঠিয়ে দিলাম।
যত্তোসব, নিজের প্রতি কেয়ার নেই,
আমার সাথে রাগ দেখায়। প্রত্যেক
মেয়েরেই উচিত রাস্তায় বোরকা বা
হিজাব পরে চলা। কারণ তাতে ওদের
নারিত্ব বজায় থাকে। অন্যথায়
রাস্তায় পোলাপাইনে চেয়ে
থাকবোই।
আর যখন হিজাব ছাড়া বের হয় তখন
ছেলে গুলো তাকিয়ে থাকে তখন
ওদের দোষ দেয়। ওদের কোনো দোষ
থাকে না। কারণ সুন্দর দেখলে সবাই
তার দিকেই তাকিয়ে থাকে।
.
নারী হলো সৌন্দর্যের অন্যতম। তাই
তাদের যতটা সম্ভব নিজেকে ঢেকে
রাখা উচিত, নয়তো নিজেকে অন্যর
কাছে বিলিয়ে দিতে হয়। তাই যতটা
সম্ভব হিজাব পরে বা ধর্মীয় নীতি
চলে রাস্তায় চলা উচিত। নাহলে
হিতের বিপরীত হবে।
.
এগুলো ভাবতে ভাবতে বিছানায় বসে
পড়লাম। খুব রাগ হচ্ছে ওর উপর,
কোথাকার কোন মেয়ে, দুদিন
আমাদের বাসায় থেকেই আমার
জিনিস ভাঙচুর করছে। মা ও কিছু বলে
না,, কিন্তু আদর করে ওকে অনেক। আর
মার আদর পেয়েই ও একেবারে মাথায়
চড়ে বসছে।
.
এভাবে চলে গেল ছয়মাস।
এখন আমার মতো একটা পাওয়ার ফুল
শয়তানও ওই পেত্নীটার কাছে হার
মানতে বাধ্য।
কারণ এখন মার পিছু ছেড়ে আমার
পেছনে থাকে। সবসময় এখন আমার
পেছনে ঘুরঘুর করে। যতটা সময় অফিসে
থাকি ততটা সময় শান্তি পাই।
বাড়িতে আসলেই দিয়া এসে ঘ্যানর
ঘ্যানর শুরু করে দেয়।
.
আর পারা যায় না এ মেয়েটাকে
নিয়ে। সবসময় বিরক্ত করে। কি চায় ও?
আমাকে কেন শুধু বিরক্ত করে। মা এসব
দেখে তবুও কিছু বলে না,, আরও ওর
সাথে তাল মেলায়, খুব রাগ হয় তখন।
.
এখন আবার তুমি করে বলা শুরু করছে।
সাহস খুব বেড়ে গেছে। রাত ১২ টার সময়
ফোন দিয়ে বলে,,, এই চলো না একটু
ছাদে যাই
তখন ইচ্ছে করে নিচ তলায় গিয়ে,,
দিয়াকে তুলে নিয়ে দুতলা ছাদে
থেকে ছুড়ে নিচে ফেলে দেই।
যত্তোসব উটকো ঝামেলা। খুব রাগ হয় ওর
উপর।
.
তবুও কিছু বলতে পারি না। কারণ ওর
পিছনে আমার বাবা মা আছে,, একটু
কিছু উচুঁ গলায় বললেই,, মার কাছে
গিয়ে আরও বেশি করে বানিয়ে
বানিয়ে বলে,, তারপর মা আমাকে
আচ্ছা করে বকে দেই,, সেইজন্য কিছু
বলতে পারছি না।
.
শুক্রবার বিকেলে বাসার সামনে
একটা ছোট বাগান আছে সেখানে
বসে আছি। কোথা থেকে যেন দিয়া
এসে হাজির। একটা হলুদ শাড়ি পড়া। খুব
সুন্দর লাগছে ওকে, অন্য দিনের থেকে
হাজার গুণ বেশি সুন্দর,, কারণ এর আগে
কখনো ওকে শাড়ি পড়া অবস্থায়
দেখিনি তাই।
.
– এই শুনো, আমাকে কেমন লাগছে?
– ভালো।
– শুধু ভালো।
– একদম পরীর মতো।
– সত্যিই? ( খুশিতে লাফিয়ে উঠলো)
– হুম।
– এইজন্যই তো আমি তোমাকে এতো ____
– এতো কি?
– না কিছু না।
– বলো।
– ভয় করে,, পরে বলবো।
– আচ্ছা।
– চলো ঘুরতে যাব।
– না।
– কেন?
– আমার সাথে তুমি ঘুরতে যাবে কেন?
– বারে,, তাতে কি হইছে?
– অন্যরা কি ভাববো,, যে আমি বউ
নিয়ে ঘুরতে বাইর হইছি।
– হিহিহি, ভাবলে ভাববেই, সমস্যা
কি? একদিন আগে আর পরে তো বউ
হবোই।
– মানে!!!
– কিছু না, চলো তো এখন।
– আমি যাব না, ব্যস।
– কেন যাবে না,,, চলো না প্লিজ।
– বলছি না যাব না ( ধমক দিয়ে বললাম)
.
ধমক দিয়ে বলার পর আর কিছু বলছে না,,
চুপচাপ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।
চোখ দেখে বোঝা যায়, লাল হয়ে
গেছে, এখনই কেদে দিবে,, আর তখনই
আমার এক কলিগের কল আসলো,,,
মেয়েটাও আর সময় পাইলো না,, এখন কল
দিয়ে বসছে,, এমনেতেই মোড খারাপ।
.
তারপর কলটা ধরে অফিসের কাজ নিয়ে
কথা বলতে বলতে দিয়ার থেকে দূরে
চলে গেলাম। আর দেখি ও আমার
দিকে তাকিয়ে আছে।
ফোনে কথা বলা শেষে,
ফোন রুমে বিছানার উপর রেখে
বাথরুমে গেলাম।
.
বাথরুম থেকে এসে আমার বস কে একটা
কল দিব, তাই ফোনের কাছে গেলাম,,
একি ফোন কই গেল? যেখানে রাখছি
সেখানে নেই,, আমার বিছানার
পাশে রাখা মগ থেকে বুদবুদের শব্দ
শুনতে পেলাম। ওটার কাছে গিয়ে
দেখি,, আমার ৩০ হাজার টাকার
ফোন,, পানিতে পরে সাতার কাটছে।
.
ও মাই গড, এটা কি হলো? কে করলো এ
কাজ? ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়লাম।
বাইরে থেকে হাসির শব্দ শুনতে
পেলাম,, গিয়ে দেখি দিয়া। বুঝতে
পারলাম ওই করছে এ কাজ।
.
ঠাস করে একটা, রাগের বশে জোরে চড়
দিলাম। খুব বেড়ে গিয়েছে ও। তারপর
দেখি আমার চোখের দিকে
তাকালো,, তারপর কান্না করতে
করতে চলে গেল। আমার চোখ তখন
রাগে লাল হয়ে গেছে।
.
তারপর আর সেদিন আমার সামনে
আসেনি।
তারপরের দিন একবার না দুইবার সামনে
পড়ছিল কিন্তু কিছু বলেনি,, আরও
আমাকে এড়িয়ে চলে গেছে। এতে
দিনে তাহলে শিক্ষা হইছে। আমিও
আজ একটু শান্তি পাইলাম।
.
এক সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু এখনো ও
আমার সাথে কথা বললো না,, আমার
সামনেও আসলো না। আসলেও আরও
এড়িয়ে চলে যেত। সেদিন মারা বোধ
হয় ঠিক হয়নি। এখন খুব খারাপ লাগছে।
যে মেয়ে সবসময় আমার পিছনে পরে
থাকতো আমাকে বিরক্ত করতো, আজ
এতোদিন হয়ে গেল একটা কথাও
বলেনি। খুব মিস করছি এখন পাগলীটার
পাগলামী গুলো।
.
ভাবলাম কাল একটা ওর জন্য অফিস
থেকে আসার সময় গিফট আনবো আর
তারপর ওকে দিয়ে সরি বলবো
.
সকালে উঠে ওদের কারও কোনো
সাড়াশব্দ পেলাম না। তাই আমি শুধু
অফিসে চলে গেলাম। বিকেল ৫টায়
অফিস থেকে আসলাম,,, গিফট টা
পিছনে লুকিয়ে বাসায় ঢুকে দিয়ার
রুমের দিকে গেলাম, “”রুমে গিয়ে
দেখি কেউ নেই।
মনে বাইরে ঘুরতে গেছে,,, মা কে
বলে দেখি, কই গেছে ওরা?
.
মার রুমে গিয়ে দেখি চুপ করে বসে
আছে খাটের উপর,,,
– মা দিয়া কই গেছে?
– ওরে দিয়ে কি করবি?
– বলো তো।
– চলে গেছে।
– কই গেছে?
– আমাদের বাসা ছেড়ে অন্য জায়গায়।
– মানে!!!
– আজ দুপুরে গেছে।
– কি বলছো তুমি?
– হুম, জানিস বাবা মেয়েটাকে একদম
নিজের মেয়ে ভেবেছিলাম,,,
ভাবছিলাম তোর বউ করে সারাজীবন
এখানেই রেখে দিব। কিন্তু কোনো
কারণ না বলেই হুট করে চলে গেছে।
দিয়ার নাকি আর এ বাসায় ভালো
লাগে না।
– ওহ্,, কিন্তু আমাকে বলার প্রয়োজন
মনে করলো না।
– আমি কি করবো বল?
.
ধীর পায়ে আমার রুমে গেলাম। গিয়ে
দেখি আমার বিছানার উপর ভাঙা
জোড়া দেওয়া আগের সেই ফুলদানি
টা। আর ওটার ভেতর একটা কাগজ,,
পড়তে বসলাম
.
প্রিয় নীল বাবু,,
জানি না তুমি আমাকে কি ভাবো,,,
কিন্তু আমি তোমাকে নিয়ে
ভালবাসার কথা ভাবতাম। আমি
তোমাকে সেই প্রথম থেকেই
ভালবাসি। কিন্তু কখনো বলিনি,,
ভাবছি তুমিই আমাকে বলবে। তাই
আমি সবসময় তোমাকে বিরক্ত করতাম,
তোমার কাছে যাওয়ার জন্য। যাতে
তুমি আমাকে ভালবাসো। কিন্তু
এতদিনে আমার একবারও মনে হয়নি তুমি
আমাকে ভালবাসো। আর যেদিন
আমাকে মারলে, সেদিন আমি
একেবারে শিউর হইছি,, তুমি আমাকে
একটুও ভালবাসো না, শুধু ঘৃণা করো। তাই
ভাবলাম ভালবাসার মানুষের ঘৃনা
নিয়ে কয়দিন তার সামনে থাকা যায়।
চলে যাওয়াই ভালো। তাই তোমাকে
না বলে চলে আসলাম। এতদিন অনেক
বিরক্ত করছি প্লিজ ক্ষমা করে দিও,, আর
কোনো দিন তোমার সামনে আসবো
না। ভালো থেকো।
ইতি,,
তোমার জন্য পাগলী হইছিলাম,,,
বিরক্ত করণী দিয়া।
.
ওটা পড়ে কেন যেন এখন খুব কষ্ট হচ্ছে।
যে মেয়েটা আমাকে এতো
ভালবাসে আর আমার একটু ভালবাসা
পাওয়ার জন্য সবসময় আমার পেছনে ঘুরঘুর
করতো আর আমি তাকে এভাবে
অবহেলা করছি,,, এখন আমার নিজের
উপরই খুব ঘৃনা হচ্ছে।
.
এখন কই পাব ওকে।।।
.
এভাবে ২ সপ্তাহ চলে গেল। তবুও ওকে
পাচ্ছি না। অনেক খুজলাম,, খুব মিস
করছি ওকে। আমিও এখন ভালবেসে
ফেলছি।
তারপর মাথায় আসলো, মার ফোনে
দিয়ার নাম্বার আছে।
.
নাম্বার খুজে বের করে আমার টা
দিয়ে কল দিলাম। একটু সময় রিং হওয়ার
পর, ধরলো,,,
– হ্যালো দিয়া।
– আপনি কে?
– নীল।
– ফোন দিছেন কেন?
– একটু দেখা করো প্লিজ।
– ক্ষমা তো চেয়েই নিছি। আবারও
মারতে চান।
– এভাবে বলো না প্লিজ। দেখা করো
একটু।
– দেখা করে কি করবেন?
– আগে আসো।
– আচ্ছা।
.
তারপর জায়গা বলে দিলাম কই আসবো।
ভাগ্য ভালো পাগলী রাজি হইছে
আসতে নয়তো আমি হয়তো মরেই
যেতাম।
.
তার পরের দিন কয়েক টা গোলাপ ফুল
নিয়ে হাজির হলাম আমাদের দেখা
করার জায়গায়। দেখি ও আগেই আসছে।
– দিয়া এভাবে চলে আসছো কেন?
– এমনি! ( নিচু স্বরে, আস্তে করে)
– আমাকে ভালবাসো এখনো?
– ইয়ে মানে!
– বলো।
– হুম।
– ফিরে আসবে আমার কাছে?
– কিন্তু আপনি তো ভালবাসেন না।
– আপনি হলাম কবে? আগে না তুমি করে
বলতে।
– সরি।
– আর কে বলছে আমি তোমাকে
ভালবাসি না।
– আপনার ব্যবহারেই বুঝছি।
– ইচ্ছে করছে এখন আরেক টা থাপ্পড়
দেই।
– দিতে সমস্যা কই?
– চুপ,,,,
আই লাভ ইউ ( হাটু গেড়ে প্রপোজ
করলাম)
– ফাজলামো করেন?
– হোয়াট ফাজলামো হ্যাঁ?
– এইযে আমাকে ভালবাসেন।
– এতে ফাজলামোর কি আছে।
– আচ্ছা ভালো নাই বাসলাম, বিয়ে
করবো চলো।
– বিয়ে কেন?
– এমনি।
– কিন্তু,
– কোনো কিন্তু নয় (হাতটা ধরলাম)
পাগলী জানো এ কয়দিন কত কষ্টে
ছিলাম?
– কেন কষ্টে ছিলা হ্যাঁ? ( কান্না সুরে)
– তোমাকে ছাড়া।
– তাহলে মারছিলে কেন? না মারলেই
তো আর আসতাম না।
– ফোন চুবানি দিছিলা কেন?
– ওই মেয়ের সাথে কথা বলছিলা তাই।
– বাব্বা এতো রাগ?
– অনেক ভালবাসি, তাই কারও সাথে
আর কথা বলতে দিব না, হু। ( বুকে মাথা
রেখে কাদতেঁ লাগলো)
– এই পাগলী কাঁদছো কেন?
– আর মারবে না তো?
– বিয়ে করে নেই তারপর দেখা যাবে।
– শয়তান আমি তোমার বউ হবো না।
– তাহলে,,,
– আমি নীলের বউ হবো, নীল ভালো।
তুমি পচা।
– হিহিহি, পাগলী একটা।
– তোমার।
– বাসায় চলো।
– তুমি যাও,, আমি একা যেতে পারবো।
– জ্বী না,,, তোমাকে সোজা আমার
বাড়ি নিয়ে যাব।
– মা কে তো বলি নাই।
– পরে ফোন করে বলবে আমি আমার
বরের বাড়ি চলে এসেছি, তুমি
তোমার বিয়াই বাড়ি চলে আসো।
– পাগল একটা।
– চলো।
– আচ্ছা।
– হাতটা ধরি?
– ধরেই তো আছো।
– আরও শক্ত করে।
– ব্যথা যেন না পাই।
– আচ্ছা।
.
অতঃপর বিয়ে ছাড়াই বউ নিয়ে বাড়ি
আসলাম
# গল্পটা কেমন লাগলো যানাবেন
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com