Breaking News

লাজুক মেয়ে পর্ব ১

দারিয়ে দারিয়ে জিলাপি বানানো দেখতেছি ছোট
বেলা মানে যখন ৪/৫বছর একটু একটু বুঝতে
শিখেছি।জন্মের পর থেকে বাপ কে জানিনা মা
কে জিজ্ঞেস করলে রেগে যেতো বেশি
আড়ি ধরলে পিঠে ধরাম ধরাম কিল বসাতো।এদিক
সেদিক ঘুরে যখন আবার বস্তিতে ফিরতাম চটের
বেড়ার ফাক দিয়ে দেখতাম মা বসে বসে কাদছে।
রোজ একটা শ্বব্দ সব চেয়ে বেশি শুনি সেটা
হলো টোকাই মাঝে মাঝে কিছু লোকের কথা
খুব ভালো লাগে।খাবার কিংবা ৫টা টাকা চাইলে কি সুন্দর
করে বলতো শালা আমি কি টাকার গাছ।তখন রাগো হয়
আবার ভাবি টাকা দেয়নি ত কি হয়েছে আমার বোন
থাকলে নিশ্চয় বিয়ে করতো।বোন নেই তাতেই
শালা বলে বোন থাকলে নিশ্চয় আরো কিছু ডাক
শুনতাম।
মতি মিয়ার জিলাপির দোকানের সামনে দারিয়ে আছি।
এক কর্মচারী খুব যত্ন করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিলাপি
বানাচ্ছে।খুব লোভ হচ্ছে কিন্তু আমি ত টোকাই
ইচ্ছেকে সাথে সাঘে দাফন করার কারিগর এটা
আমাদের ধর্ম।
গত বছর এক সাহেব একটা পুরাতন সার্ট দিছিলো।
এখন যায়গায় যায়গায় ছিরে গেছে।ছিরে গিয়ে
ভালোই হয়েছে বাতাস লাগে সহজেই।
রেললাইন ধরে হাটছি গত সাপ্তাহে মা মইরা গেছে
বুকে ব্যাথা উঠছিলো।পাশে বসে বসে বিলাপ
করে কাঁদছিলাম অনেক মানুষ পাশ দিয়ে যাচ্ছে সবাই
একবার কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে
যাচ্ছে।কয়েক বার রক্ত বমি করেছে তবু কেও
এগিয়ে আসেনি।
এমন সময় ঝরঝর করে বৃস্টি শুরু হয়ে গেলো
বস্তির সব ঘর গুলির চালই উড়ে গেলো আমার চুল
বেয়ে পানি পরছে।বৃস্টি কমার সাথে সাথে মায়ের
শরিল টাও ঠান্ডা হয়ে গেলো।খুব কেঁদেছিলাম
কেও এগিয়ে আসেনি।আজ আমরা প্রত্যেকেই
দর্শক কেও পানিতে পরে হাবুডু বু খাচ্ছে আমরা
সেল্ফি তুলি।কেও আগুনে পরে গেছে আমরা
শুধু হায় হায় করেই শেষ।
এই ছেলে এই এদিকে আসো। পিছনে তাকিয়ে
দেখি একটা মাঝ বয়সি মহিলা দুই হাত ভরতি বাজার একা
একা নিতে পারছেনা।আশে পাশে কোন রিক্সাও
নেই।
এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলাম।আমারে
ডাকতাছেন?
হ্যা আমার একটা কাজ করে দিতে পারবা?
কি কাজ কন
আমার সাথে একটু বাজার গুলি নিয়ে চলো টাকা
দিবোনি।আইচ্ছা দুই হাতে প্রায় বেশিরভাগ আমিই
বয়ে চলছি।
রোদ উঠেছে আজ ঘেমে নেয়ে একাকার।
এই ছেলে নাম কি তুমার?
আমার নাম রাজা
কিহ এইটা কোন নাম হইলো?
কেন আমরা টোকাই হইতে পারি কিন্তু নাম গুলা উচা
মানুষ এর।
বাহ স্কুলে যাস না?
না খাইবার পাইনা দুই বেলা আবার স্কুল।
তোর বাপে কি করে?
বাপ কেডা জানিনা তই বাপে নাকি নেশাটেশা করতো
আমার জন্ম হওনের পর নাকি আরেক বিয়া করে
মায়রে তালাক দিছে।
অহ তোর মা কি করে
নাই কয়দিন আগেই মইরা গেছে।
নানান কথা বলতে বলতে একটা ৫তলা বাসার সামনে
এসে দারালো দারোয়ান দেখেই হাত উচা করে
সালাম দিলো।হাত থেকে বাজার গুলি নিয়ে আমারে
চইলা আইতে কইলো।মহিলা ধমক দিলো যে আমি
কি যেতে বলছি।
আমি বসে আছি একটা ছেঁড়া ছোফার একপাশে গা
দিয়ে মনে হয় গন্ধ বের হচ্ছে বিকেল হয়ে
গেছে এখনো নাওয়া খাওয়া হয়নাই খিধায় পেট চুচু
করছে।
মাথা নিচু করে বসে আছি।
এই ছেলে নাও বেলের শরবত খাও।মাথা তুলে
দেখি এক মেয়ে দারিয়ে আছে আমার চেয়ে দু
এক বছরের বড়।
হাত থেকে শরবতের গ্লাস টা কাপা কাপা হাতে নিলাম।
কিছু জিজ্ঞেস না করেই ডক ডক করে খেয়ে
নিলাম।পেট কুকু করে উঠলো সারাদিন পর পেটে
কিছু পড়লো।
আমি এখন কি চলে যাবো।
মেয়েঃনা আম্মু বলছে তুমার সাথে কিছু কথা আছে
বসে থাকতে বলছে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রায় আধঘন্টা বসে থাকার পর মহিলা আসলো।
ঘেমে গেছে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুচতে মুচতে
বললো হ্যারে তোর কি সত্যিই ভালো কোন নাম
নেই।
না আমার একটাই নাম।
শুন আজ থেকে তুই এই বাসায় থাকবি মাঝে মাঝে
কাজকাম করবি তোর খালু বেশিরভাগ সময় বাহিরে
থাকে দারোয়ান বেশি সুবিধার না।দারোয়ান কে
ডেকে আমি যে থাকবো তার সব কিছু বুঝিয়ে
দিলো।
স্টোর রুমে থাকার যায়গা হলো।জালি ফ্যান লাগানো।
নিচে তোষক বিছানো বসে মনে হলো আমি
বেহেস্তে চলে আসছি।নরম বিছানা জিবনে প্রথম
বার শুইলাম।
একটা টেবিল ঘড়ি দিয়ে গেছে মেয়েটা।
শুনো
হ্যা বলেন
আম্মু বলছে তোমার নাম সিপন ঠিক আছে?
হুম
মেয়েটি চলে গেলো আমি ভাবছি মহিলাটির কথা
রাস্তার ছেলেকে আশ্রয় দিলো কেন?
নিশ্চয় তার মন টা অনেক ভালো।
রাত ৯টা সিপন, সিপন ডাক শুনলাম কয়েক বার কিন্তু সিপন
টা কে?
একটু পরেই কারো ছায়া দেখলাম দরজায় কারো
ছায়া পড়েছে।আস্তে আস্তে দরজা দিয়ে উকি
দিলো।দেখে নিলো আমি কি করছি।সিপন আম্মু
ডাকছে আসছোনা কেন?
অহ আচ্ছা আমাকে ডাকছে। আমি ভাবলাম অন্য
কাওকে।
মেয়েটি হিহি করে হেসে দিলো একটা দাতে
পোকা লাগছিলো।হাসি টা খুব সুন্দর মুক্তাঝরানো
হাসি।
হাসলেন যে?
হুম হাসবো না ত কি করবো?
হুম তোমার নাম সিপন আর তুমি ভাবো অন্যকে
ডাকছে হিহিহি।
মেয়েটির পিছু পিছু গেলাম বড় টেবিলে নানান
রকমের খাবার সাজানো।৬টা চেয়ার মানুষ মাত্র
দুইজন। সিপন শুন ইনি হলো তোর খালু আমাকে
খালাম্মা ডাকবি।আর ও হলো সাথী ঠিক আছে?
হুম ঠিক আছে।
ভদ্রলোক ঃশুনো সিপন ভালো ভাবে থাকবা।কাল
সকালে গিয়ে চুল কেটে আসবা একটা ব্যাগ এগিয়ে
দিলো।খুলে দেখি জামাকাপড়। এগুলা তুমার বুঝছো
যাও গোছল করে আসো তারপর কথা হবে।
.
.
.চলবে

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com