গল্পঃ- হাই (High) পর্বঃ- ০২
কিন্তু আমি মিফতাকে দেখে আকাশ থেকে পরলাম! কিছুক্ষণ আগের মিফতাহ আর এখনকার মিফতাহ'কে মিলাতে পারছি না। কোনো ভাবে ই না।
চুলের ধরন বদলে গিয়েছে। চোখের সামনে থেকে কিছু চুল কাটা কিন্তু কিছুক্ষণ আগে ও কাটা ছিলো না! হাসি বদলে গিয়েছে! ব্যবহার সহ সব।
মৃদু হেসে বললোঃ-
- থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ। ভিতরে আসেন না।
আমি ভিতরে গিয়ে অবাক চোখে মিফতাহ'র খাওয়া দেখছি। মনে হচ্ছে সাত দিন না খেয়ে আছে। অর্ধেক খেয়ে বললোঃ-
- আপনার খিদে পায় নি?
- না।
- আরেহ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে খিদে পেয়েছে। খান না, এতো লজ্জার কী আছে?
- বললাম না আমি বেশি খাই না।
- যাহ বাবা। না খেলে নাই। আমার খিদে আছে আমি খাবো।
দুইটা আপেল। চারটে কলা। দুই বাসন ভাত। সাথে তরকারি তো আছেই। একাই সাবাড় করে দিলো। আমি শুধু হা করে তাঁকিয়ে দেখলাম। খাওয়া শেষ।
আমি বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। তখন ই মিফতাহ হাত ধরে বললোঃ-
- কোথায় যান?
- বাহিরে।
- কেনো?
- ঘুমাবো।
- এখানে ঘুমাবেন না?
- তুমি না আলো ছাড়া ঘুমুতে পারো না?
- অভ্যাস করে নিবো। সমস্যা কী?
আমি বাইরে গেলাম না। বাসন দুটো টেবিলে তুলে রাখলাম। মাথায় ঢুকছে না এই কয়েক মুহূর্তে মেয়েটা এমন আকাশ পাতাল বদলে গেলো কেনো?
রুমের লাইট বন্ধ করতে ই বললোঃ-
- আমার ভয় করছে তো।
- তাহলে লাইট জ্বালাই?
- না থাক।
- আচ্ছা।
আমি চুপচাপ শুয়ে আছি। চিন্তায় পরে গেলাম। কোনো মানসিক রোগী বিয়ে করলাম না তো? না কী মেয়েটার উপর ভূতপ্রেত আছর করেছে? কে জানে?
মিফতাহ আবারো বললোঃ-
- এই, কথা বলছেন না কেনো?
- কী বলবো?
- যা ইচ্ছা। আচ্ছা একটা গল্প বলেন।
- পারি না।
- আপনি কী আমাকে ভয় পাচ্ছেন না কী?
- না ভয় পাবো কেনো?
- আপনার গলার কণ্ঠ শুনে ই বুঝা যাচ্ছে ভয় পাচ্ছেন।
কী বলবো? আমার সত্যি সত্যি ই ভয় লাগছে! কিন্তু এই কথা বললে ই বিপদ। আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে সকাল হোক। উত্তর দিচ্ছি না বলে মিফতাহ আমার কলার ধরলো!
ধরে বললোঃ-
- ন্যাকামো করেন না? আপনি কী মেয়ে মানুষ না কী?
- আবার কী ন্যাকামো করলাম?
- তাহলে অবলা একটা মেয়ে। রাতের অন্ধকারে ভয় পাচ্ছে। তাঁকে একটু সাহায্য করা যায় না?
- কীভাবে করবো?
মিফতাহ একটু নরম স্বরে বললোঃ-
- বুকে নিয়ে ঘুমাবেন।
কথাটা বলে মনে হলো লজ্জা পেলো! চোখ মুখ দুহাত দিয়ে ঢাকলো মনে হয়। আমার ভয় আরো বেড়ে যাচ্ছে। বিড়াল মারার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু এখন দেখছি কাহিনী উল্টো!
বিড়াল ই আমাকে মারছে! আমি ভয়ে ভয়ে মিফতাহ'কে বুকে নিলাম। মেয়েটা লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। আমার মনে হলো হেলিকাপ্টারের পাখা ঘুরলো!
তারপর কিছুক্ষণ পরপর একেকটা অদ্ভুত প্রশ্ন করতে শুরু করলো! দশ মিনিট পরপর ঠিক! বলতে না বলতে প্রশ্ন করে বসলোঃ-
- এই, আপনি কয়টা প্রেম করেছেন?
- জানি না। কয়েক ডজন তো হবে ই।
- বাহ।
তারপর আবার চুপ। আরো দশ মিনিট যাওয়ার পর বললোঃ-
- এই যে, আপনি মনে হয় আজকে গোসল করেন নি না?
ভাবলাম গা থেকে মনে হয় গন্ধ বেরোচ্ছে। সেজন্য বললো। অবশ্য গন্ধ বেরোবার কথা ই। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘেমে গিয়েছি। গন্ধ বেরোলে তা অস্বাভাবিক কিছু না।
বললামঃ-
- কেনো? শরীর থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে না কী?
- না।
- তাহলে?
- আপনি খুব পেটুক।
- কীহ? খেলে তুমি আর নাম হলো আমার।
রীতিমতো আবারো চুপ। কার্টুনের মতো ঘুমুচ্ছে। একবার এপাশ ওপাশ ও করছে না। এদিকে আমি দম ফেলতে পারছি না। নিদারুণ যন্ত্রণায় পরে গেলাম।
এই ঐতিহাসিক রাতের মিফতাহ'র শেষ বারের মতো বললোঃ-
- আমার খুব ভালো লাগছে।
- কেনো?
- আপনি আপনি থেকে তুমি'তে নামলেন।
আমি আমতাআমতা করলাম। মাকে শুনাতে গিয়ে কখন যে তুমি করে বলা শুরু করেছি তা মনে ই নেই। তুমি করে বললে মন্দ কী? শুধু ভূতপ্রেত না হলে ই হয়।
মেয়েটা এমনি তে শুকনা-টুকনা ই। কিন্তু গা'য়ে শাড়ি সহ ভিবিন্ন বধূ সাজের কারণে মনে হচ্ছে দুটো আটার বস্তা আমার বুকে ঝাঁপটি মেরে আছে।
এরকম দম বন্ধ অবস্থায় রাত কাটলো। সকাল সকাল চোখের পাতা খুলতে ই দেখলাম মিফতাহ পোশাক পরিবর্তন করে ফেলেছে! অথচ এখনো আমার বুকে!
মাঝ রাতে আবার উঠে শাড়ি খুলে এই পোশাক পরলো না কী? ভাবতে না ভাবতে মিফতাহ ঘুম থেকে উঠে পরলো। সে কী! দেখি চুলের কাটিং ও দেখি আগের মতো!
চোখ খুলতেই যেনো ভূত দেখেছে। লাফ দিয়ে উঠে বললোঃ-
- আপনি এখানে কী করেন?
এই প্রশ্ন শুনে আমি বেহুঁশ! বললামঃ-
- বিড়াল মারি।
- বিড়াল কোথায় পেয়েছেন?
- একটু আগে উঠে পালিয়েছে।
- আপনি না বাইরে ঘুমিয়েছিলেন? ভিতরে আসলেন কীভাবে?
এ তো দেখি সাপের পাঁচ পা! রাতে কতো কাহিনী হয়ে গেলো! এখন কী না বলে, ভিতরে আসলেন কীভাবে? বললামঃ-
- রাতে যে চার জনের খাবার একা খেয়েছো তা কী মনে নেই?
- কীহ? পাগল না কী? খিদায় আমার পেট যায়। আর না কী আমি চার জনের খাবার খেয়েছি! ডাক্তার দেখান আপনি। মাথায় সমস্যা আছে আপনার।
এবার মনে হচ্ছে মানসিক রোগী ই বিয়ে করেছি। ঘটক বাবু এবার বাড়িতে আসুক। উনার এক দিন কী আমার এক দিন। কী কাজটা করলেন উনি?
আমার মতো সহজ সরল একটা ছেলের কপালে এমন মানসিক বিকারগ্রস্ত মেয়ে জুটিয়েছে। সে কী চাপা আর গুণ গেয়েছিলেন রাত দিন! এই হলো নমুনা!
রাগ করে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুললাম। খুলে দেখি আরেক কাহিনী! এবার মনে হয় আমার সত্যিই ডাক্তার দেখাতে হবে। পাবনায় একটা সিট দরকার। চোখ মুখে সব অন্ধকার দেখছি! এ সম্ভব নয়!
..
এটা অনেক বড় গ্রুপ, সব পর্ব গল্প না পাইতেই পারেন, তাই Friend request পাঠাইতে পরেন।।।
এটা ভাইবেন না আমি গল্প পোষ্ট করব না।।।আমি সব পর্ব পোষ্ট করব।।।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com