গায়ের রঙ কালো সাদা দুটোই আল্লাহ’র সৃষ্টি।
রোমানার গায়ের রংটা কালো। এই কালো গায়ের রংটাই তার জন্য যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলেজে পাশ করার আগে পর্যন্ত তার বিয়ে ভেঙ্গেছে সাতবার। আর তার কারণও রোমানার গায়ের রং। রোমানা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা এতে তার কিসের দোষ। কালো যে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সাদাও সেই আল্লাহ’র ই সৃষ্টি। তবুও কেন তাকে বর্ণ বৈষম্যের শিকার হতে হয় বারবার। ক্লাসেও অন্য মেয়েরা তার সঙ্গে একদম কথা বলেনা। কিছু বললেও এড়িয়ে চলতে চায়। ক্লাস মিটরা বাদ শিক্ষকরাও তাকে খুব একটা স্নেহের চোখে দেখতোনা।
আজ আবার রোমানাকে দেখতে আরেকটি পাত্র আসার কথা। সংখ্যা হিসেবে তাকে দেখতে আসা অষ্টম পাত্র। তাই বেশ ভালো করেই আয়োজন চলছে রোমানাদের বাড়িতে। যে পাত্রটি রোমানাকে দেখতে আসার কথা তার অবশ্য আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু আগের বৌটা অজ্ঞাত কারণে মারা গেছে। তাই আজ সে রোমানাকে দেখতে আসছে।
যথা সময়েই পাত্রপক্ষ আসলো। কিন্তু এবারে কিছুটা অন্যরকম আভাস পাওয়া গেল। এবারের পাত্রটা রোমানার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বয়সের। বেঁটে আর টাক। তার কথা তাকে নগদ দুইলাখ টাকা দিলে প্রতিবন্ধী মেয়েকেও সে বিয়ে করতে রাজি।
পাত্রপক্ষের বিদায়ের পর রোমানাদের বাড়িতে আলোচনা শুরু হয়। পাত্র বলেছে দুইলাখ টাকা দিলে সে বিয়ে করতে রাজি। রোমানার বাবা তাই চিন্তা করছে কিছু জমি বিক্রি করে পাত্রের চাহিদা পূরণ করবেন। কিন্তু রোমানার মা এই বিষয়ে একেবারে নাখুশ। মেয়ে কালো হয়েছে বলে কি পঁচে গেছে নাকি। রোমানাও যৌতুক দিয়ে বিয়ে করতে নারাজ। এই সব তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে রোমানার বাবার মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল, “তুই কালো হয়ে জন্মেছিস যখন। তোর মূল্যও কারো কাছে নেই।”
কথাটা রোমানার বেশ খারাপ লাগে।
,
" রোমানা রাতে সুয়ে সুয়ে বলছে হে আল্লাহ, তুমি কেন আমাকে কালো করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছো!
লোকেরা আমায় নিয়ে মা-বাবাকে কটাক্ষ করতে দ্বিধা করেনি।। ভাইবোনদের কে জিজ্ঞেস করত এই কালো প্যাচা কি তোর বোন! ওরা লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিত। তাদের কাছে কোন উত্তর ছিল বলার।
..
স্কুলে সামনের ব্রেঞ্চে বসা আমার নিষেধ ছিল। একা পিছনের ব্রেঞ্চে বসতে হয় যেন আমার গায়ের রং অন্য কারোর গায়ে না লাগে। আচ্ছা, এটা কি কোন ছোঁয়াচে রোগ! না তো! তাহলে কেউ আমার সাথে মিশে না কেন! কথা বলতে চায় না কেন? এটা কি আমার দোষ ছিল যে আমি কালো! টিভিতে দেখায় ক্রিম মাখলেই মানুষ সাদা হয়ে যায়। তাহলে আমি কেন সাদা হই না! আমি কি এতটাই কালো!!!
..
বয়সের চেয়েও দ্বিগুন বার পাত্রপক্ষ দেখতে এসে একি কথা বলে যায় "কালা কাউয়া কে লাইটের নিচে বসালেও দেখা যাবে না আর বিয়ে করতে বসছে"! কালো বলে কেউ আমাকে নিতেও চাচ্ছে না আবার নিজের কেউ রাখতেও চাচ্ছে না। আমি কালো বলে কি আমার বেঁচে থাকাও দায় পড়বে!
পুরোটা রাত রোমানার ঘুম হয়নি। বিচানায় এপাশ ওপাশ করতে করতেই সূর্য উঠে গেছে পুব আকাশে। বাবার বলা কথাটির জন্যেই রোমানার ঘুম হয়নি।
তার শুধুই মনে হচ্ছে সে তার পরিবারে বোঝা বা এমন এক জিনিস যার মূল্য কারো কাছে নেই।
রোমানা আস্তে করে উঠে গিয়ে টুলটা নিয়ে ফ্যানের নিছে দাঁড়ালো। তারপর টুলে উঠে তার ওড়নাটা ফ্যানের সাথে বেঁধে ফাঁস তৈরি করলো। সে আত্মহত্যা করবে। যে মানুষের মূল্য কারো কাছে নেই তার বেঁচে থাকার অধিকারও নেই…
না সে যাত্রায় রোমানার আর আত্মহত্যা করা হয়নি। তার মা তাকে ঐ অবস্থায় দেখে ফেলে। মায়ের ডাকে রোমানা আর সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেনি সেদিন। সেদিন মা মেয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল। মা তার মেয়েকে অনেক বুঝিয়ে ছিল, কালো হয়ে জন্মানোটা অপরাধ নয়, কালো সাদা দুটোই আল্লাহ’র সৃষ্টি।
কিন্তু রোমানার তা কিছুতেই বুঝে আসছিল না। তাই মেয়েকে বুঝানোর জন্য রোমানার মা তাকে একটা প্রতিবন্ধি স্কুলে নিয়ে যান। আর সেখানে কিছু অন্ধঁ প্রতিবন্ধী শিশুকে দেখিয়ে বলেন, “তুমি নিজে চিন্তা করে দেখ, এই প্রতিবন্ধী শিশুদের চেয়ে তুমি অসহায় নও। তোমার কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তোমার শুধু গায়ের রং ই কালো।”
মায়ের উপদেশ বুঝতে পেরে রোমানার চোখে আবেগে পানি চলে এসেছিল সেদিন।
এরপরেই রোমানা বিয়ের বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আর পুলিশে ভর্তি হয়।
আজ সে পুলিশের উচ্চপদে চাকুরী করে। গায়ের রং কালো বলে তার পেশা তাকে অবনতি দেয়নি। বরং তার মেধার কারণে উন্নতি করেছে প্রতিটা পজিশনে।
আজ ঐ লোক গুলো রোমানাকে ম্যাডাম বলে ডাকে যারা তাকে কালো বলে অবজ্ঞা করতো….
না তবে এখনো রোমানা বিয়ে করেনি। এখন অবশ্য চাইলেই বিয়ে করতে পারে। তবুও সে এমন একজন মানুষের অপেক্ষায় আছে, যার কাছে কালো সাদা দুটোই সমান।।
.
Post টা পরে আপনারা যদি কিছু বলতে চান comment করে জানাবেন.
.
Post পরে আপনার মন কে ছুয়ে থাকলে share করে আপনার বন্ধু দের কে পরার সুজোগ করে দেন
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com