মিষ্টি ভালোবাসার গল্প টু ইন ওয়ান
সকালবেলা ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ ফোনের বিরক্তকর আওয়াজে ঘুমটা ভাঙ্গলো।
ভাবতে লাগলাম কে এই সকাল সকাল ফোন দিলো।
আজ তো আমার ছুটির দিন আর অনেকেই জানে।
কে হতে পারে এতো সকালে ফোন দেওয়ার জন্য।
এইসব ভাবতে ভাবতে মোবাইলের দিকে তাকাতেই ফোনটা কেটে গেল।
আর চেক করে দেখলাম এই নাম্বার থেকে টানা ২৪ টা মিসকল আসছে।
কিন্তু এটা তো অপরিচিত নাম্বার আর আমি মনে হয় নাম্বারটা চিনিও না।
আবার হতে পারে এটা চেনা কেউ হয়ত খুব দরকারে ফোন দিলো।
এই ভেবে ফোনটা ব্যাক করতে যাবো আর সাথে সাথে এই নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
তাই আর দেরি না করেই ফোনটা রিসিভ করলাম।
-- হ্যালো
-- ওই ফোনটা ধরতে তোমার এতো সময় লাগে।
রাতে কোন মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলে ঘুমিয়েছ যে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছো।
-- কে বলছেন??
-- তোমার যম।
-- ঠিক চিনতে পারলাম না।
-- তোমার চেনার দরকার নাই তবে আমি তোমায় চিনি। আর তোমার বেপারে আমি সবই জানি।
-- কিভাবে চিনো আর কি কি জানো?
-- তোমার ছবি দেখার কারনে আমি তোমাকে চিনি আর জানি বলতে।
তুমি মতিউর, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তুমি তোমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
আর আজ তোমার ছুটির দিন।
.
আর সব থেকে বড় কথা হলো তুমি বিয়ে করবে না বলে জেদ ধরে আছো।
তুমি এতো কিছু কি করে জানো আর এইসব তোমাকে কে বলল?
বাকিটা না হয় দেখা হলেই জানবে। এখন ৩০ মিনিটের মাঝে রেডি হয়ে নদীর পারে আসো।
আর নদীর পাড় এসেই আমাকে একটা ফোন দাও।
আমি কেন আসব তোমার কথায়? আর কে হও তুমি যে তোমার কথা আমাকে শুনতে হবে।
তোমার ভবিষ্যৎ হোম টিচার আমি। এবার প্রশ্ন না করে তারাতারি চলে আসো।
মনে রেখো মাত্র ৩০ মিনিট,
এর থেকে যদি ১ মিনিটও বেশি হয় তবে তোমার একদিন কি আমার যত দিন লাগে।
-- শুনো হ্যালো....
আর কোন কথা না বলতে দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো। কি আজব ফাজিল মেয়েরে বাবা।
আমি চিনি না কিন্তু আমাকে চিনে। নিজেকে তো এখন সেলিব্রিটি লাগছে।
কারন আমার ফলোয়ার যে বার হয়ে গেল।
কিন্তু প্রশ্ন হলো আমাকে কি করে চিনে। আমি তো কোন স্পেশাল লোক নই।
যাই আগে ফ্রেশ হয়ে নেই তারপর ভাববো যাবো কি যাবো না।
যাবো না যাবো না করেও চলেই গেলাম।
তাছাড়া আজ আমার ছুটির দিন তাই একটু ঘুরে আসাও হবে।
যেতে যেতে প্রায় ৪০ মিনিটের মত লেগে গেল।
বলছিল ৩০ মিনিট থেকে যেন ১ মিনিটও বেশি না হয়।
আর এখন তো পাক্কা ১০ মিনিটই বেশি হয়ে গেল।
দেখি কি করে ওই মেয়ে, তাই মোবাইলটা বের করে ফোন দিলাম।
কিন্তু ওই পাশ থেকে বলতে লাগল।
আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। "
কি আজব মেয়েরে বাবা ১০ মিনিট লেট করলাম বলে ফোন অফ করে রেখে দিলো।
তবে এখন আফসোস হতে লাগল যদি আরো ১০ মিনিট আগে আসতাম তাহলে ওরে দেখতে পারতাম।
তাছাড়া ওই মেয়েটার নামটাও জানি না। তবে কন্ঠটা কিন্তু হেব্বি সুইট ছিলো।
এইসব ফালতু কথা চিন্তা করতে করতে একাই নদী দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসতে লাগলাম।
কি নদীর দিকে তাকিয়ে কি নদীর ঢেউ গুনা হচ্ছে? ( হঠাৎ পাশ থেকে একটা মেয়ে বলল)
-- আপনি?
-- আমার নাম হ্যাপি। আপনাকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে কথা বলতে আসলাম।
কারন আমিও একা নদীর পাড়ে ঘুরতে আসছি।
কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার নামটা জানতে পারি?
-- আমি মতিউর।
-- সুন্দর নাম। আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
-- কি??(অবাক হয়ে)
-- হুমম ঠিকই শুনছেন।
-- কি বলেন মাত্র তো আমাদের প্রথম দেখা হলো আর প্রথম দেখায়ই বন্ধু হতে চান।
-- বন্ধু হতে বুঝি দিন বা মাস লাগে। মনটা পরিষ্কার থাকলেই চলে।
-- হা হা হা ওকে আমরা বন্ধু। তাছাড়া আপনার কথা বলার স্টাইলই কিন্তু খুব সুন্দর।
-- এই যে বন্ধুকে আপনি করে বলতে নাই। তুমি করে বলতে হয়।
-- ওকে
-- আচ্ছা আমি এখন চলে যাবো অনেকক্ষন হলো আসছি।
যদি তোমার নাম্বারটা দিয়ে দিতে তাহলে মাঝে মাঝে কথা হতো আর
আমাদের বন্ধুত্বটাও চলতে থাকত।
-- ( পরে আমি আমার নাম্বার দিলাম)
-- ওকে রাতে কথা বলে। আমি আসি পরে ফোনে কথা হবে।
-- ওকে টা টা
পরে হ্যাপি চলে গেল আর আমিও কিছুখন দাড়িয়ে থেকে চলে আসলাম।
বাড়িতে এসে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। হঠাৎ মা রুমে আসলো....
-- কিরে কখন আসলি?
-- এই তো কিছুক্ষন হবে।
-- তোর সাথে কিছু কথা ছিলো?
-- হুমমম বুঝছি তো সেই বিয়ে বিয়ে বিয়ে নিয়ে কথা তো।
-- তোরে যে কত করে বলছি বিয়েটা করে নে এটা কি বুঝতে পারস না।
-- মা আমি এখন বিয়ে করব না।
-- মতিউর বাবা শুনো আমার বয়স হয়েছে। আজ আছি তো কাল নেই।
কে বলতে পারে কখন কি হয়ে গেল।
-- থাক মা তুমি আর ইমোশনাল সিরিয়ালের ডায়লগ দিয়ো না।
আমি ভেবে দেখি।
-- শুনে রাখ আমি আমার বান্ধবীকে কথা দিয়েছি ওর মেয়ের সাথেই তোর বিয়েটা দিবো।
কথা যখন দিয়েই দিয়েছ এখন আর কি বলার। যাও কথা সামনে এগিয়ে নাও।
আজ আমি আর তোর বাবা মেয়ের বাড়ি গিয়ে তোর বিয়ের তারিখ পাকা করে আসব।
-- ওকে
বলেই মা চলে গেল। আগে শুনতাম ছেলেরা বিয়ের জন্য পাগল হয়
আর আমার বেলায় হলো উল্টা।
আমাকে উল্টা বিয়ের জন্য জোর করা হচ্ছে।
কি কপাল আমার যে বিয়ে করতে চাইছি না তবুও আমাকে জোর করছে।
হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো তবে সকালে যেই নাম্বারের কারনে ঘুম ভাঙ্গছিল ওইটা না। এটা অন্য একটা নাম্বার থেকে ফোন আসছে।
-- হ্যালো কে?
-- আমি হ্যাপি, চিনতে পারছেন?
-- হুমমম বলো।
-- কি করো এখন?
-- বাশঁ নেই। তুমি কি করো?
-- মানে?
-- মানে বাড়ি থেকে আমাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাই না।
-- কেন বিয়ে করতে কিসের ভয়। কাউকে ভালবাসো নাকি।
-- আরে না তবে আমার মতে পৃথিবীতে দুই ধরনের লোক থাকে।
এক হলো জীবিত আর দুই হলো বিবাহিত।
-- আরে কি বলো এইসব?
-- হুমমম বউ মানে হলো এক ধরনের টিচার। বিয়ের পরে ওর মন মত চলতে হয়।
আর সব কিছুতে নাক গলায়।
-- তাহলে কি বিয়ে করবে না?
-- এটা না করে কি উপায় আছে?
--আচ্ছা যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে কি কখনো দেখেছো?
-- না তো...
-- হয়ত ওই মেয়েটা তোমার ভাবনার বিপরীত হতেও পারে।
তাছাড়া হতেও পারে মেয়েটা তোমাকে ভালবাসে।
তুমি বিয়ে নিয়ে যা ভাবছ হয়ত মেয়েটি এটা ভুল প্রমান করে দিলো।
হুমমম ঠিকই বললে। আচ্ছা আমি কি তোমার সাথে আগে কখনো মোবাইলে কথা বলেছি।
আচ্ছা মতিউর আমার না একটা দরকারি কাজ আছে এখন রাখি পরে একসময় কথা হবে।
-- ওকে বায়
হ্যাপির কথা গুলো কেমন যেন মনে দাগ কাটলো।
ওর সাথে কথা বলে মায়ের পছন্দের মেয়ের সাথে দেখা করতে খুব মন চাইছে।
তাছাড়া হ্যাপির কথা গুলো কেমন যেন পরিচিত কন্ঠ লাগলো।
রাতে শুয়ে শুয়ে লেপটপে অফিসের কাজ করছিলাম।
তখনই মা আসলো। ও আজ বিকেলে তো আমার বিয়ের পাকা কথা বলতে গিয়েছিল।
হয়ত তারিখ দিয়ে এসেছে। এইসবই বলবে....
-- কিরে বাবা কি করিস?
-- তেমন কিছু না। বলো কি বলবে?
-- বিকেলে তোর বাবাকে নিয়ে আমার বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিলাম আর
বিয়ের তারিখ ঠিক করে আসলাম। আগামী সপ্তাহে তোর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।
অফিস থেকে ১ সপ্তাহের ছুটি নিয়ে রাখিস।
-- ওকে
বলেই আম্মু চলে গেল আর আমি ভাবতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত তাহলে আমি
বিয়ের পিরিতে বসতে যাচ্ছি। তখন সেই সকালে ঘুম ভাঙ্গানোর নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
ইশ মনেই ছিল না সকালের কথা। তাই আর দেরি না করে ফোনটা রিসিভ করলাম।
-- হ্যালো
-- মেয়েদের সাথে তো ভাল করেই কথা বলতে পারো।
-- মানে?
-- আজ নদীর পাড়ে দেখলাম তো। দেরি করে এসে আমাকে না খুজে
অন্য মেয়ের সাথে কত্তো কথা। আবার মোবাইল নাম্বারও আদান প্রদান করলে।
ওই কে তুমি যে আমার সাথে এই ভাবে কথা বলো।
আমার বেপারে তো সবই জানো তাহলে হয়ত এটাও জানো আজ আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
হুমম না জানার কি হলো। তাও আমার সাথেই বিয়ে ঠিক হয়েছে।
কি?? (আমি অবাক হয়ে গেলাম তাই এতো সকালে ফোন দিয়ে শাসন করছিল)
হুমম
-- তুমি মোবাইল বন্ধ করে রাখছিলে কেন?
-- দেখতে তুমি কি করো?
-- তা কি দেখলে?
-- বলছিনা দেরি করে আসলে তোমার খবর আছে। তোমার একদিন কি আমার যত দিন লাগে।
-- মানে?
-- অপেক্ষা করো আর ১টা সপ্তাহ তো আছে বিয়ের। বিয়েটা হয়ে যাক তার পরেই তোমার মজা বুঝাবো।
-- কি?
আর কোন কথা না বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
কি আজব মেয়েরে যখন ইচ্ছা ফোন দিয়ে শাষন করব।
আবার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে আমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলছি।
অনেক কাজের চাপে দেখতে দেখতে ১ টা সপ্তাহ কেটে গেল।
এর মাঝে আমি হ্যাপিকে ফোন দিলাম কিন্তু ও ফোনও ধরল না।
আর সব থেকে অবাকের বিষয় হলো আমার যার সাথে বিয়ে তার নামটা আজও
আমার অজানাই রয়ে গেছে। তাই এটা জানতে বিয়ের দিন সকালে মায়ের কাছে গেলাম।
মা রান্না ঘরে কাজে ব্যস্ত....
-- মা শুনো....
-- কি হলো?
-- আমার সাথে যার বিয়ে হচ্ছে তার নামটা কি??
আমার প্রশ্ন শুনে রান্না ঘরের সবাই হাসতে শুরু করলো। আর আমিও
পরলাম একটা হাসির পাত্র হয়ে। তাই আর উত্তর না শুনেই নিজের রুমে আসলাম।
আমাকে বর সাজিয়ে গাড়িতে করে মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো।
আমাকে একটা রুমে নিয়ে বসানো হলো। মনে হচ্ছিল কেউ জোর করে আমাকে কুপাবে।
অনেক ভয়ও হচ্ছিল। জীবনে চাকরীর জন্যও হয়ত এতো ভয় পাই নি।
কি কপাল আমার শুধু ভয় আর ভয় নিয়ে আমার দিন গুলো কাটতে লাগলো।
অনেকটা সময় পার করে বিয়ের সকল নিয়ম শেষ করে বউ নিয়ে বাড়ি আসলাম।
এর মাঝে একটা বারও মনে হয় আমি ওর দিকে তাকাই নি।
শুধু আমার তেজপাতা ভবিষ্যৎ নিয়ে কল্পনা করতে লাগলাম।
বাড়িতে এসে দেখি সবাই বউ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরল তাই আমি ছাদে চলে গেলাম।
আর তখনই হ্যাপি ফোন দিলো।
এক সপ্তাহ আমি ওরে অনেক ফোন দিছি কিন্তু ধরেই নি।
-- হ্যালো।
-- কি ব্যাপার বিয়ে করে ফেললা আর বউয়ের সাথে এখনো একটা কথাও বললে না??
-- তুমি কি করে বুঝলে আজ আমার বিয়ে গেছে?
-- তুমি না বলেছিলে আগামী সপ্তাহে তোমার বিয়ে।
--কিন্তু কোন দিন বিয়ে এই তারিখ তো বলি নাই।
-- পিছনে তাকাও তাহলে সব সন্ধেহ দূর হয়ে যাবে?
আমি সাথে সাথে পিছনে তাকালাম আর বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম।
এটা কেমনে হলো এতো হ্যাপি।
-- তুমি??
-- হুমম আমি তোমার বন্ধু হ্যাপি আর আমিই তোমার বিয়ে করা দর্জাল বউ।
-- (অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলাম)
-- কি হলো এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?
-- আমাকে আগে বলো নি কেন তুমি দুইজন না একজনেই?
-- যদি প্রথমেই সব বলেই দিতাম তাহলে কি আর তোমার মনে বিয়ে সম্পর্কে কি
মানে আছে তা জানতে পারতাম। শুনো জীবিত আর বিবাহিত এটা কিছু না।
সব মেয়েরা চায় তার স্বামী তার মনের মত হোক।
তার কথা শুনে তাই আমিই চাইছিলাম তুমি আমার কথা শুনো।
কিন্তু তোমার খারাপ হবে এমন কিছুই আমি চাইবো না।
--(ওর কথা শুনে আমি পুরু বাক্যহীন হয়ে গেলাম)
-- সরি (বলেই ও কান্না করতে শুরু করলো)
-- আরে বোকা কাদছ কেন? আমি কথা দিচ্ছি তোমার মত করেই আমি চলব
আর আমারই তো ভাল হলো বন্ধুর মতই তো একটা বউ পেলাম।
একজনের মাঝে দুইজনকে খুজে পেলাম মানে two in one।
তুমি বন্ধুও আবার বউও। আর কোন কথা না বলে হ্যাপি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আর আমাদের জীবনের নতুন পথ চলা শুরু হলো।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com