অন্য রকম ভালোবাসা
কলেজের প্রথম দিন,কলেজে ডুকতে কিছু মেয়ে একটা ছেলেকে কান ধরাচ্ছে। আমি সামনে দিয়ে যেতে আমাকে ডাক দিলো-
-এই এই এই যে এই শুনো?
-জি আমাকে বলছেন।
-হ্যাঁ তোমাকে বলতেছি।
-জি বলেন।
-ডাকতেছি। না শুনে চলে যাচ্ছ কেন?
-আপনে তো এই এই করে কাকে ডাকছেন। আমি তো এই এই না।
-নাম কি?
-আরিফ।
-কলেজে নতুন এসেছো?
-হ্যাঁ।
-যাও কলেজে যাও।
তারপর আমি কলেজে চলে আসলাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, বড় লোক বাবার একমাএ মেয়ে।নাম নিলিমা। দেখতে সুন্দর, বড় লোক বাবার মেয়েরা এমনিতে সুন্দর হয়। সুন্দর না হলে ও নিজেকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে পারে। কলেজটা তার বাবার টাকা দিয়ে চলে। তাই তাকে সবাই ভয় পায়। বড় লোক বাবার মেয়ে টাকার গরমতো থাকবেই। কলেজে নতুন তেমন কারো সাথে আমার পরিচয় নাই। কলেজে যাওয়া আসার মাঝে এভাবে কলেজের দিন গুলো কাঁটতে লাগলো। কিছু দিন হলো একটা মেয়ের সাথে ভালো বন্ধুত্ব হলো। নাম বৃষ্টি। ওর সাথে বসে বসে মাঝে আড্ডা দিই। এর মাঝে নিলিমা কলেজ শেষে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ও আমাকে বললো-
-দাঁড়াও তোমার সাথে কথা আছে।
-জি বলেন।
-এখানে না আমার পিছু পিছু আসো।
-আমার এখন কিছু কাজ আছে।
-কাজ পরে করতে পারবে। আসতে বলেছি আসো।
উপাই না দেখে ওর পিছু পিছু আসলাম। একটা কেন্টিনে এসে বসলাম। কিছুক্ষণ পর নিলিমা বললো-
-মেয়েটার সাথে তোমার কি সম্পক?
-কোন মেয়ে?
-যার সাথে বসে বসে আড্ডা দিলে।
-ও, সে তো বৃষ্টি।
-আমি কখন বললাম রোদ।
-আরে ওর নাম বৃষ্টি।
-আমি জানি , ওর সাথে তোমার কি সম্পক?
-ও আমার ফ্রেন্ড।
-না অন্য কিছু?
-না সত্য ফ্রেন্ড।
-তুমি ওর সাথে কথা বলবে না?
-কেনো?
-আমার ভালো লাগেনা।
-কথা বলবো আমি আপনার ভালো লাগবে না কেনো?
-তুমি আমাকে আপনে আপনে করে বলছো কেনো?
আমি কি তোমার বড়?
-না মানে।
-আমি বলছি কথা বলবে না, বলবে না।
এরপর আর কিছু না বলে চলে গেলো। আমি ও চলে আসি। পরদিন যথা সময় কলেজে আসি। নিলিমার দিকে তাঁকাতে বুঝতে পারলাম ও সারা রাত মনে হয় ঘুমায় নাই চোখ গুলো বড় বড় হয়ে আছে, মনে হয় কাঁদছে। আমি কিছু না বলে, কলেজের পরে বৃষ্টির সাথে আড্ডা দিতেছি। একটু পরে নিলিমা আমার সামনে এসে বললো-
-আরিফ শোন তোমার সাথে আমার কথা আছে?
আমি বৃষ্টির দিকে তাঁকিয়ে বললাম-
-দোস্ত তোরা বস আমি আসতেছি।
আমি নিলিমার পিছু পিছু হাঁটা শুরু করলাম।নিলিমা বললো-
-তোমাকে না বৃষ্টির সাথে কথা বলতে না করছি?
-তোমার সমস্যা কোথাই, আমি ওর সাথে কথা বললে।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-কি?
-সত্য,আমি তোমাকে প্রথম দেখাতে ভালোবেসে ফেলেছি।
-তোমার কি মাথা ঠিক আছে?
-কেনো?
-আমি একজন সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তুমি কোথাই আমি কোথাই।
-আমি এত কিছু জানিনা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-আমাকে ভালোবাসলে তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া কিছুই দিতে পারবো না। তুমি কষ্ট পাবে।
-ভালোবাসা দিলেই হবে।
-অভাবে পরলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাবে।
-তখনকার টা তখন দেখা যাবে। তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না সেটা বলো?
-কিন্তু।
-কিন্তু কি, আমি দেখতে খারাপ?
-তা না,,,,আমি তোমার যোগ্য না?
-এত যোগ্য অযোগ্য হিসাব করে ভালোবাসা হয় না।
এ ভাবে তাদের ভালোবাসা শুরু হয়। পরদিন আরিফ নিলিমাকে একটা গোলাপ ফুল দেয়। নিলিমা বলে-
-আমার জন্য প্রতিদিন একটা করে গোলাপ নিয়ে আসবে।
-প্রতিদিন আনতে হবে?
-হুম প্রতিদিন।
-ওকে।
কলেজে আসা যাওয়া গুরতে যাওয়া আড্ডা দেওয়া এভাবে তাদের কলেজ জীবন শেষ হয়। পড়ালেখা শেষ করে আরিফ চাকরি খুঁজতে থাকে। অনেকগুলো ইন্টারভিউ দেয় কোথাও চাকরি পায়না, চাকরি যেন সোনার হরিন হয়ে গেছে। আরিফ হতাসায় ভুগতেছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা। নিলিমার সাথে আরিফের প্রতিদিন বিকালে দেখা করে।প্রতিদিন নিলিমার জন্য আরিফ একটি করে গোলাপ ফুল নিয়ে আসে। এভাবে আড্ডা দিয়ে বাড়ি চলে যায়। কিছু দিন যাওয়ার পরে নিলিমা বললো-
-বাবা আমার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, তুমি বাবাকে যেয়ে আমাদের বিয়ের কথা বলো
-যেয়ে কি বলবো?
-যেয়ে বলবে আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি, ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।
-তোমার বাবা যদি জিজ্ঞেস করে,,,আমি কি করি, আমি বলবো বেকার, তাহলে তোমাকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে তাই না। কোন বাবা তার মেয়েকে বেকার ছেলের কাছে তুলে দিবে না।
-তুমি কবে চাকরি পাবে? আমি কিছুতো বুঝতেছি না।
এভাবে কিছু দিন যাওয়ার পর নিলিমা আরিফকে জরুলি দেখা করতে বললো-
-কি ব্যাপার জরুরি তলব?
-আমার ফুল কোথাই?
-তুমি জরুরি আসতে বললে তাই মনে নাই।
-এখন যেয়ে নিয়ে আসো।
আরিফ পেছন থেকে ফুলটা বের করে নিলিমাকে দেয়-
-খুশি তো?
-অনেক।
-কি যেন বলার জন্য ডাকছিলে?
-বাবা আমার জন্য পাএ ঠিক করে পেলেছে?
-তোমার মতামত কি?
-আমি বাবাকে না করছি বাবা আমার কথা শুনতেছে না। -এখন কি করবে?
-চলো পালিয়ে যাই।
-কি বলছো এসব, একে তো আমি বেকার, আর তোমার বাবা তোমাকে বাইশ বছর ধরে তোমার সব প্রয়োজন মিটিয়ে আসতেছে, তাকে কষ্ট দেওয়া কি ঠিক হবে?
-তা হলে আমাকে তুমি ভুলে যাও,,পারবে ভুলতে?
-না, পারবো না।
এখন থেকে চলে যাওয়ার পর নিলিমা আরিফকে ফোন করে কান্না শুরু করে দেয়
-হ্যালো,,, কাঁদছো কেনো?
-আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা (কান্না জরিত কন্ঠে)
আবার কান্না শুরু করে দিলো
-কেঁদো না প্লিজ।
নিলিমা কান্না করতে থাকে। একটু পরে ফোনটা কেটে যায়। নিলিমা আরিফকে পরদিন ফোন করে বললো-
-আমার বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে।
-কবে বিয়ে।
-আগামী সপ্তাহ, তুমি আমার সাথে দেখা করতে পারবে?
-কখন?
-আজ বিকালে?
-ওকে।
আরিফ বিকেলে নিলিমার সাথে দেখা করতে এসে এক টুকরি গোলাপ ফুল নিয়ে আসলো। নিলিমা বললো-
-এতগুলো ফুল কেন?
-তোমার বিয়ের পর তো তোমাকে আর ফুল দিতে পারবোনা।তাই ফ্রিজে রেখে দিবে প্রতিদিন আমার পক্ষ থেকে একটা একটা নিয়ে নিবে।
-আমি তোমাকে কি দেবো?
-তোমার বড় একটা ছবি আমাকে দিবে?
-কেন?
-তোমাকে তো দেখতে পাবোনা, তাই তোমার ছবির সাথে সুখ দুঃখের গল্প করবো।
এরপর নিলিমা আরিফের হাতে বিয়ের কাট ধরিয়ে দিয়ে বললো-
-আগামী সাত তারিখ আমার বিয়ে।
এ বলে নিলিমা চলে গেলো। বিয়ের দিন নিলিমা আরিফ কে ফোন করে বললো-
-হ্যালো।
-হ্যালো, তুমি আমার বিয়েতেে আসবেে না।
-না।
-কেন?
-তোমার বিয়ে আমি সহ্য করতে পারবো না।
-তুমি কোথাই?
-রুমে আছি।
-তুমি থাক আমি আসতেছি।
এ বলে মোবাইল কেটে দিলো।নিলিমা আরিফের রুমে আসলো-
-তুমি এখানে কেন? তোমার না আজ বিয়ে?
-বর ছাড়া বিয়ে হবে কেমন করে?
-মানে?
-বিয়ের কাট দেখেছো?
-না?
-দেখো।
-এ তো আমার নাম।
-জি তোমার নাম। বাবাকে সবকিছু বলাতে বাবা রাজি হয়ে গেলো। তোমার চাকরির ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
এরপর আরিফ ও নিলিমার বিয়ে হয়ে যায়। তাদের সুখের সংসার চলতে থাকে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com