Breaking News

সমাপ্তি

> কোথায় তুমি? (মৌ)
- আরেকবার ভেবে দেখ। (হৃদয়)
> তুমি ভেবে দেখ। ভালবাস তো?
- খুব।
> তাহলে আর ভাবতে হবে না। আমি আসতেছি।
- আচ্ছা। সাবধানে এসো।
.
আজ মৌ হৃদয়ের সাথে পালাবে। ২বছরের সম্পর্ক হঠাৎ মৌয়ের ছোট ভাই সিফাত জেনে যায়। সিফাত মৌয়ের ২ বছরের ছোট। তবুও মৌ তার ছোট ভাইকে খুব ভয় পায়। কারণ সে অত্যন্ত রাগি ও বদমেজাজি। সিফাত ব্যাপারটা জানার পর বাবাকে জানায়। অতঃপর তারা মৌয়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। আগামীকাল পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে। বিয়ের আসর থেকে পালানোর চেয়ে এক্ষুণি পালানো ভাল হবে বলে মনে করে মৌ। তাইতো এতদিন একদম চুপচাপ থেকে হঠাৎই পালানোর প্ল্যান করেছে। মৌয়ের পারিবারিক অবস্থা বেশ ভাল। এলাকায় তাদের বেশ সুনাম আছে। অন্যদিকে হৃদয় সামান্য কর্মজীবী। মৌ জানে তার বাবা কখনোই হৃদয়কে মেনে নিবে না।
.
অন্যদিকে হৃদয় মৌকে নিয়ে পালাতে চায় না। আবার মৌকে হারাতেও চায় না। নিরুপায় হয়ে পালাতে হচ্ছে।
.
মৌ যথাস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর হৃদয়কে কল করে বন্ধ পেল। মৌয়ের মনে অজানা ভয় কাজ করতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল হৃদয়ের কোনো খবর নেই। মোবাইলটাও অফ। সময় যত অতিবাহিত হতে লাগল মৌয়ের অস্থিরতা তত বাড়তে লাগল। প্রায় ২ ঘন্টা হয়ে গেছে কিন্তু হৃদয়ের কোনো খবর নেই। মৌ রাস্তায় বসে পরলো এবং কাঁদতে লাগল। ভাবতে লাগলো এভাবে হৃদয় তাকে ধোকা দিতে পারলো?
.
কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর মৌ উঠে দাঁড়ালো। হঠাৎ হৃদয়ের কণ্ঠ শুনে পিছে তাকালো। হৃদয় হাপাতে হাপাতে বলল
- স্যরি। আসতে লেইট হয়ে গেছে। তোমার ভাইয়ের লোকেরা মেসের বাইরে পাহারা দিচ্ছিলো। তাদের ফাঁকি দিয়ে আসতে দেরি হয়ে গেছে।
মৌ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল,
> মোবাইল অফ কেন?
হৃদয় পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখল অফ। ব্যাটারি লুস তাই দৌড়ে আসার সময় অফ হয়ে গেছে। অনেক পুরাতন নোকিয়া ১১০০ মডেল।
> তোমাকে কতবার বলেছি একটা মোবাইল কিনতে। কিন্তু কিনলে না। আজ এই মোবাইলের জন্য কতবড় ক্ষতি হত জানো?
- বাদ দাও এসব কথা। তাড়াতাড়ি শহর ত্যাগ করতে হবে।
> হুম চল।
.
অতঃপর দুজনে পাড়ি জমালো দূর অজানা শহরে। পালানোর সময় মৌ বেশ কিছু টাকা নিয়ে এসেছিল। সামান্য কিছু হৃদয়ের কাছেও আছে। তা দিয়েই নিজেদের নতুন জীবন শুরু করে। প্রথমে বিয়ে, তারপর ভাড়া ঘর নিয়ে কিছু আসবাবপত্র দিয়ে তাদের ছোট সংসার শুরু করলো। প্রথম দুমাস তাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। হৃদয় চাকরির খোঁজে পাগলের মত এদিক সেদিক ছুটতে লাগল। তবুও পেল না। দুমাস পর একটা জব পেল। খুবই সামান্য বেতনের। মৌ তাতেই এডযাস্ট করে চলতে লাগল। হৃদয় বুঝে যে মৌ অনেক কষ্ট করছে। কারণ মৌ হল ধনী ঘরের মেয়ে। জীবনে কখনো কষ্টের ছাপ দেখেছে কিনা সন্দেহ।
.
মৌ আগের তুলনায় অনেক শুকিয়ে গেছে। সংসারের চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারে না। হৃদয় মাঝেমাঝে নিজেকে গালমন্দ করে। কেন মাটির ঘরে থেকে সোনার ঘরের স্বপ্ন দেখলি? এক রাতে হৃদয় মৌয়ের কষ্টের কথা ভেবে কেঁদে যাচ্ছে। মেয়েটার কত ধৈর্য্য! সব কষ্ট নিজের মধ্যেই দাফন করে রাখে। নিজে না খেয়ে থাকলেও হৃদয়কে বুঝতে দেয় না। হৃদয়ের গুনগুন কান্নার শব্দে মৌ ঘুম থেকে জেগে উঠলো।
.
> এই তুমি কাঁদছ কেন?
হৃদয় তাড়াতাড়ি চোখ মুছে বলল, কই নাতো।
> দেখ একদম কান্না করবা না। তুমি যদি ভেংগে পর তাহলে আমার কি হবে?
- কেন আমার মত পোড়া কাপালের সাথে এলে? কত কষ্টই না করতে হচ্ছে তোমাকে!
> আমার কোনো কষ্ট নেই। তোমাকে দেখলে আমরা সব কষ্ট শেষ হয়ে যায়। শুনো, যতই কষ্ট হোক অসত্ পথে যাবা না। এখন ঘুমাও।
মৌ হৃদয়কে ঘুম পাড়িয়ে দিল।
.
এক সকালে বাবা, মা ও ভাইয়ের কথা মনে করে মৌয়ের চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। তা দেখে হৃদয় বলল
- সব সহ্য হয় শুধু তোমার চোখের পানি সহ্য হয় না। আমি তোমার যোগ্য নই। তোমাকে সুখে রাখতে পারছি না।
মৌ চোখের পানি মুছে বলল
> ও কিছু না। পরিবারের কথা মনে পরলো তাই।
- বিয়ে তো হয়েই গেছে। চল ফিরে যাই।
> পাগল নাকি? সিফাত দেখলেই মেরে ফেলবে। তবে যাব একদিন।
- কবে?
> যখন সিফাতকে মামা বলার মত কেউ আসবে তখন। তবে তার আগে আমাদের পরিস্থিতি ভাল করতে হবে।
- আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।
.
হৃদয় তার বেতনের সবটুকুই মৌয়ের হাতে তুলে দেয়। অন্যদিকে মৌ আশেপাশের প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরক
ে পড়ায়। তাদের দুজনের আয় দিয়েই সংসারের খরচ চলছে। কিছু টাকা জমিয়ে মৌ একটা সেলাইয়ের মেশিন কিনলো।
.
- আর কত কষ্ট করবে? সারা বিকাল স্টুডেন্ট পড়াও। এখন আবার সেলাইয়ের কাজ? আর আমি অপদার্থ কিছুই করতে পারছি না।
> উফফ! তুমি কিন্তু ইদানিং বেশিই কথা বল। আরে আমি এসব আমাদের ফিউচারের জন্য করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন তুমি অনেক বড় হবে। চেষ্টা চালিয়ে যাও।
.
অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কেটে গেল বেশ কিছুদিন। আজ হৃদয় অনেক খুশি। তার এতদিনে কষ্ট আজ সফল হয়েছে। এক বড় কোম্পানিতে ভাল পদে চাকরি পেয়েছে। Appointment লেটারটা পকেটে করে নিয়ে বাসায় এসে দরজায় বাড়ি দিল। পাশের বাসার মহিলা চাবি দিয়ে বলল, "মৌ এই চিঠিটা তোমাকে দিতে বলেছে।" হৃদয় দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল তালা লাগানো। চিঠিটা নিয়ে হৃদয় বাসায় ঢুকলো। চিঠিটা পড়ে হৃদয়ের মনে হল তার দুনিয়াটা কেউ ভেংগে চুরমার করে দিয়েছে।
.
চিঠিটা,
"দেখ হৃদয়, আবেগ কখনো বাস্তবতার সাথে লড়াই করে জিততে পারে না। আমাদেরকে তা মেনে নেয়া উচিত। তোমার সংসার করে আমি এটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। এই কিছু মাসে আমি যতটা কষ্ট করেছি তা আমি আমার জীবনে কখনোই করিনি। এতদিন আবেগে ছিলাম। তাই কষ্ট পেতে পেতে জর্জরিত হয়ে গেছি। সহ্য করার ক্ষমতা আর নেই। তাই চলে গেলাম। যদি ভালবেসে থাকো তবে আমাকে তোমার মুখ আর দেখাবে না। তোমার সাথে কাটানো এইদিন গুলো আমি আর মনে রাখতে চাই না। তাই নতুন করে জীবন শুরু করব। তুমিও কর। ভাল থেকো।
ইতি
মৌ।"
.
চিঠিটা পড়ার পর হৃদয় অজ্ঞান হয়ে গেল। চোখ খুলে নিজেকে পাশের বাসার রুমে আবিষ্কার করে। নিজ রুমে এসে হাড়ি-পাতিল এবং এটা-সেটা ধরে হৃদয় অনেক কান্নাকাটি করলো। আশেপাশের লোকজনও বিশ্বাস করতে পারছেনা যে মৌ এমন করেছে। ঘরের প্রতিটি জিনিসে যেন মৌয়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। হৃদয় সারাদিন ঘরের মাঝে বসে মৌ মৌ বলে হাউমাউ করে কান্না করে।
.
৩ মাস পর,
মৌয়ের সাথে বসবাস করা শহরটি ছেড়ে হৃদয় অন্য একটি অজানা শহরে এসে নতুন করে বসবাস শুরু করেছে। পুরাতন সবকিছু মুছে ফেলেছে কিন্তু মৌকে মুছতে পারেনি। আজও প্রতিরাতে হৃদয় মৌ বলে চিত্কার দিয়ে উঠে। মেসের বন্ধুরা হৃদয়ের জীবনী শুনে তারাও কান্না করেছে। ভাগ্য কখন ঘুরে যায় তা কেউই জানে না। নতুন শহরে এসে হৃদয় ১০ লাখ টাকার লটারি পেয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে শেয়ারে ব্যবসা শুরু করে। আজ হৃদয় মোটামুটি ভাল পর্যায়ে আছে।
.
সেই রাতের অজানা ঘটনাটি হলঃ-
মৌ সেলাইয়ের মেশিনে কাজ করছে। দরজায় টোকা পরলো। মৌ এসে দরজা খুলে দেখল তার বাবা ও ভাই সহ কিছু লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। মৌ অবাক ও ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল
> ত…তো…তোমরা!!!
~~ চুপচাপ আমাদের সাথে চল নয়তো হৃদয় এলে ওকে মেরে তোকে নিয়ে যাব। এখন তোর ইচ্ছে কোনটা সেটা বল। (সিফাত)
মৌ জানে তার বাবা ভাই যা বলে তাই করে। তাই মৌ বাধ্য হয়ে সিফাতের কথা অনুযায়ী হৃদয়ের উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লিখে পাশের বাসায় দিয়ে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বাবা ও ভাইয়ের সাথে চলে গেল। কিছুদিন পর তারা মৌয়ের বিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু মৌ রাজি হল না। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে অসুস্থ হয়ে পরলো। ডাক্তার দেখানোর পর জানা যায় যে মৌ দু মাসের কনসিভ হয়েছে। মৌয়ের বাবা ছিল অত্যন্ত জেদী। তিনি ভ্রুণটি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু সিফাতের জন্য পারলো না। সিফাত বুঝলো যে একটি ভ্রুণ নষ্ট করা আর একটা হত্যা করা সমান। সিফাত সেই শহরে এসে হৃদয়কে অনেক খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি। তবে নিরাশও হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় লোক লাগিয়ে দিয়েছে।
.
কিছুদিন ধরে হৃদয় মৌকে খুব মিস করছে। মৌকে একপলক দেখার তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছে। কিন্তু মৌকে দেখতে হলে সেই পুরানো শহরে যেতে হবে। তাছাড়া চিঠিতে মৌ বলেছিল তার মুখ আর না দেখাতে। এতদিনে মৌ নিশ্চয়ই নতুন সংসার শুরু করেছে। এটা ভাবতেই হৃদয়ের বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো, চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো যে দূর থেকে হলেও মৌকে একপলক দেখবে। হৃদয় কাউকে না জানিয়ে ব্যবসায়ের নাম দিয়ে পুরাতন শহরে চলে এলো।
.
পুরাতন শহরে এসে এক হোটেলে উঠলো। সেখানে পুরানো এক বন্ধু ইয়াসিনের সাথে দেখা হলো। ইয়াসিন হল ডাক্তার। দেখা হবার সাথেসাথেই ইয়াসিন হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে বলল, "মন খারাপ করিস না। কিছু মেয়ে অত্যন্ত নিষ্ঠুর হয়। এদের কাছে স্বামী বাচ্চা কোনো কিছুরই মূল্য থাকে না।" হৃদয় বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "বাচ্চা?" বন্ধুটিও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কেন? তুই জানিস না?"
.
অতঃপর হৃদয় যা শুনলো তাতে হৃদয়ের মাথায় রক্ত উঠে গেল। দু মাস আগে ইয়াসিন যে হাসপাতালে রোগি দেখে সেই হাসপাতালে মৌ এসেছিল abortion করানোর জন্য। কথাটা শুনে হৃদয় মনে মনে মৌকে অত্যন্ত ঘৃণা করতে লাগলো। নিজের সুখের জন্য একটা মেয়ে কিভাবে একটা নিষ্পাপ জীবন মেরে ফেলতে পারে? মা হয়ে কিভাবে এটা পারলো? না না এসব মেয়ে মা নয়। এরা হল এমন মেয়ে যারা নিজের সুখ ব্যতীত অন্যকিছু ভাবতেই পারে না। তাইতো স্বামীর সংসার ছেড়ে পালিয়েছে। নবাগত সন্তানটিকেও সরিয়ে দিয়েছে। কারণ সন্তানটি সুখের মাঝে চলে আসবে। নিজের মনকে হৃদয় এসব বলতে লাগল আর হাটতে লাগল হোটেলের দিকে। হৃদয় সিদ্ধান্ত নিলো সে ফিরে যাবে। মৌয়ের মত মেয়ের চেহারা দেখাও পাপ হবে।
.
দুদিন পর…………
মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পরে আছে মৌ। সামনে রক্তাক্ত ছুরি হাতে একটি কাঠের চেয়ারে বসে মৌয়ের দিকে হিংসাত্মক ভাবে তাকিয়ে আছে হৃদয়। সেদিন হোটেল থেকে বের হবার সময় এক দম্পতি ও তাদের সন্তানকে দেখে হৃদয়ের মন আগুনের মত জ্বলে উঠলো। মৌকে উদ্দেশ্য করে মনে মনে বলল, "আমাকে ধোকা দিয়েছ তবুও ভুলে গিয়েছিলাম, মাফ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমার সন্তানকে খুন করেছ। এর কোনো ক্ষমা নেই। একটি নিষ্পাপ প্রাণকে যে খুন করেছে তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।" হৃদয় খবর নিয়ে জানতে পারলো একটা অনুষ্ঠানে মৌয়ের পুরো পরিবার যাচ্ছে কিন্তু মৌ যাচ্ছে না। হৃদয় বুঝলো ভাগ্য তার সহায় হয়েছে তাইতো এমন একটি সুযোগ পেয়েছে। হৃদয় সুযোগ বুঝে মৌকে ক্লোরোফর্মের মাধ্যমে অজ্ঞান করে বাড়ি থেকে তুলে এক নির্জন পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে এসেছে। বাড়িটা জঙ্গলের মধ্যে। ভাঙ্গাচুরা ও অনেক পুরাতন। আগে মাঝেমাঝে হৃদয় ও তার বন্ধুরা মিলে এখানে আসতো।
.
কিছুক্ষণ পর মৌ ধীরে ধীরে চোখ খুলল। নড়াচড়া করার মত শক্তি তার নেই কারণ এখানে আনার পর যখন মৌয়ের জ্ঞান ফিরেছিল তখন একটি ভারি লোহার খন্ড দিয়ে সজোরে বেশ কয়েকটি আঘাত করা হয়েছিল। মৌ ভেবেছিল এই হয়তো তার জীবনের শেষ মুহূর্ত। কিন্তু এখন চোখ খুলে সামনে হৃদয়কে দেখে মনে বাঁচার আশা জাগল। কিন্তু হৃদয়ের হাতে রক্তাক্ত ছুরি ও মুখে বিভত্স হাসি দেখে মৌ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। হৃদয় চেয়ার থেকে উঠে মৌয়ের কাছে এসে বলল,
- সুখ! সুখে থাকার খুব ইচ্ছে তাই না? আজ তোকে জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ দিব। আর সেটা হল তিলে তিলে মৃত্যুর সুখ।
.
হৃদয়ের কথা সুখে মৌ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মৌ মুখ দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ করতে লাগল। কারণ তার মুখ ও হাত পা বাধা।
- নাহ আজ তোকে কথা বলার সুযোগ দিব না। তোর মায়ায় পরে বাবা হিসেবে হারতে চাই না। তোর একটুও কি কষ্ট হয়নি ওরকম নিষ্পাপ একটা জীবন অচিরেই মেরে ফেলতে? এত সুখ দিয়ে কি করবি? জানিস দুনিয়ায় সত্যিকারের সুখ কোথায়? যখন সন্তান মা বলে ডাক দিয়ে কোলে ঝাপ মারে। কিন্তু তোর মত পাষাণ ও লোভী মেয়েরা এটা বুঝে না।
কথা গুলো বলে হৃদয় তার হাতের রক্তাক্ত ছুরিটা দিয়ে মৌয়ের ডান হাতের রগ কাটতে লাগল। তীব্র যন্ত্রণায় মৌ কাতরাতে লাগল। নিজেকে বাঁচানোর জন্য ছটফট করতে লাগলো।
.
হাতের রগ কাটার পর হৃদয় বলল
- খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? আমারও কষ্ট হয়েছিল যখন শুনেছিলাম তুই আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছিস। নিশ্চয়ই আমার সন্তানেরও খুব কষ্ট হয়েছিল। এখন চোখে সুখ দেখতে পারছিস না?
.
এবার হৃদয় মৌয়ের চার হাত পায়ের সবকটা রগ কেটে দিল। তারপর হাতের বাধন খুলে দিয়ে বলল
- তোর ছটফটানি দেখে মনটা শান্তি পাচ্ছে।
মৌ মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। শরীর এতই দুর্বল যে উঠার শক্তি পর্যন্ত নেই। মৌয়ের চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসছে। আজ তার সাথে তার সন্তানেরও মৃত্যু হতে যাচ্ছে তাও তার আপন মানুষটার হাতে। মৌ ভাবতে লাগলো হৃদয় কেন এমন করলো? একটিবারও কেন কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দিল না?
.
হৃদয় ছুরিটা পরিষ্কার করে, সব এভিডেন্স মুছে ঘর থেকে বের হতে লাগল। যাওয়ার আগে শেষবারের মত মৌয়ের দিকে তাকালো। দেখলো মৌ এক হাতে পেট ধরে আছে আর অন্য হাত হৃদয়ের দিকে বাড়িয়ে অস্পষ্ট ভাবে কিছু বলতে চাইছে। হৃদয়, "সুখে থাকো" বলে চলে গেল।" হৃদয় তার শহরে এসে আগেরমত স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করতে লাগলো। মনের সবচেয়ে বড় তৃপ্তি সন্তানের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পেরেছে।
.
এদিকে মৌয়ের লাশ পঁচে যখন দুর্গন্ধ বের হতে লাগল তখন আশেপাশের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। তারপর মৌয়ের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। মৌয়ের চেহারা তেমন একটা নষ্ট হয়নি। তাই সনাক্ত করতে বেশি কষ্ট হয়নি। মৌয়ের ভাই সিফাত মনে করল এটা তার বাবার কাজ। তাই সে তার বাবাকে ত্যাগ করে দূর শহরে চলে এলো।
.
ভাগ্যক্রমে একদিন হৃদয়ের সাথে সিফাতের দেখা হয়ে গেল। সিফাত হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে সব বলে দিল।
~~ আমি ভাবতেও পারিনি যে বাবা এমন জঘন্য একটি কাজ করবে। আমার একটা ভুলের জন্য আমি আমার আদুরে বোন, বাবা-মা সব হারালাম। আর আপনি আপনার স্ত্রী ও আগত সন্তানকে হারিয়েছেন। আপনাকে মুখ দেখানোর সাহস আমার নেই। পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন।
.
সিফাত কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। হৃদয় সেখানেই নির্বাক হয়ে বসে পরলো। মনে মনে বলল, একি করলাম আমি? নিজ হাতেই নিজের স্ত্রী সন্তানকে মেরে ফেললাম? কেন আমি একটিবারের জন্য মৌয়ের কথা শুনিনি? কেন কেন?
.
সেদিনের পর থেকে হৃদয়ের মুখ থেকে আর শব্দ বের হয়নি। আজ হৃদয় নির্বাক হয়ে পাগলের মত এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করে। যখন কোনো শিশু দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
.
রাগের মাথায় নেয়া সিদ্ধান্ত সবসময়ই কাঁদায়। রাগের মাথায় সিফাত ও তার বাবার নেয়া সিদ্ধান্তের কারণে হৃদয়-মৌয়ের সাজানো সংসারের সমাপ্তি ঘটে। রাগে মাথায় প্রতিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে হৃদয়ের হাতে তার স্ত্রী ও সন্তানের জীবনের সমাপ্তি ঘটে। সত্য জানার পর হৃদয়ের স্বাভাবিক জীবনের সমাপ্তি ঘটে। সবকিছুর মূলে রয়েছে রাগ। আমাদের উচিত রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়া। নিজেদের রাগ বর্জন করে ভাল থাকি ও রাখি।


No comments

info.kroyhouse24@gmail.com