অসহায় ভালবাসা
তখন ছেলেটি পড়তো ক্লাস ৯ এ।
আর মেয়েটি ক্লাস ৮ এ।
অসম্ভব সুন্দরী ছিল মেয়েটি।
মেয়েটির হাসি, কথা, চলাফেরা সব
কিছুই ভালো লাগতো ছেলেটির। মেয়েটি যখন হাসতো ছেলেটি পৃথিবীর
সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু
মেয়েটির হাসির দিকেই চেয়ে থাকতো।
একটি মেয়ের হাসি কিভাবে এতো সুন্দর
হয়? কিছুতেই ভেবে উঠতে পারেনা
ছেলেটি। ছেলেটি খেয়াল করলো মেয়েটি একা একা
থাকতেই বেশি পছন্দ করে। স্কুলে
মেয়েটি অবসর সময়ে মাঠের এক কোণে
গাছতলায় বসে বই পড়তো।
টিফিনের সময় মেয়েটি লাইব্রেরিতে
যেয়ে গল্প-কবিতার বই পড়তো। ছেলেটি সব সময় মেয়েটি কে চোখে
চোখে রাখতো। যদিও মেয়েটি এর
কিছুই বুঝতো না। মেয়েটি যখন
লাইব্রেরিতে একা একা বসে বই পড়তো,
ছেলেটিও তখন মেয়েটির পিছু পিছু
লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়তো। তবে বই পড়ার চেয়ে মেয়েটির দিকেই
বেশি তাকিয়ে থাকতো।
মেয়েটি খুব মনযোগ দিয়ে বই পড়তো, তাই
তার দিকে কেউ তাকাচ্ছে
নাকি তাকাচ্ছে- না এতো কিছু খেয়াল
করতো না মেয়েটি। মেয়েটি যখন লাইব্রেরি থেকে চলে আসতো
ছেলেটিও মেয়েটির পিছে পিছে
চলে আসতো। তবে মেয়েটি কে কিছুই
বুঝতে দিতো না। ধিরে ধিরে ছেলেটি
মেয়েটির প্রতি আরো দুর্বল হতে লাগলো।
একদিন মেয়েটি কে না দেখে সে থাকতে পারতো না। শত
বাধা থাকলেও ছেলেটি স্কুলে
ছুটে আসতো মেয়েটি কে এক নজর দেখার
জন্য। একদিন মেয়েটি কে না
দেখলে যেন একটা দিন্ই অসম্পুর্ণ থেকে
যেত ছেলেটির। মনে মনে মেয়েটি কে ভীষন ভালবেসে পেলে সে।
কিন্তু মনের কথা গুলো
মেয়েটি কে বলা হয়ে ওঠে না।
ছেলেটির মাঝে সব সময় একটা ভয় কাজ
করে। যদি মেয়েটি তাকে একসেপ্ট না
করে? ছেলেটি কিছুতেই থাকতে পারবে না মেয়েটি কে ছাড়া।
ছেলেটির সব স্বপ্ন, সব আশা
শুধু মেয়েটী কে ঘিরেই। এভাবেই একটি
বছর কেটে যায়.. . এখন
ছেলেটি ক্লাস ১০ এ উঠেছে। আর
মেয়েটি ক্লাস ৯ এ। গত একটি বছর ছেলেটি মেয়েটি কে শুধু পাগলের মত
ভালবেসে যাচ্ছে। কিন্তু তার
ভালবাসার কথাটা এখনো মেয়েটি কে
বলা হয় উঠেনি। ইতিমধ্যেই মেয়েটি
বুঝে গেছে ছেলেটি তাকে ভালবাসে।
মেয়েটি সব বুঝেও না বুঝার বান করে থাকে... .
কিছুদিন পর... ছেলেটি ডিসাইড করলো আজ
মেয়েটি কে তার
ভালবাসার কথা জানাবে। ছেলেটি বুকে
সাহস নিয়ে স্কুলে আসে।
এসেই মেয়েটি কে খুঁজতে থাকে সে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না
মেয়েটি কে সে। হঠাৎই মেয়েটি কে
মাঠের এক কোণে বসে থাকতে দেখে সে।
মেয়েটি একা একা বসে বই পড়ছিল।
ছেলেটি খুব ভয়ে ভয়ে
মেয়েটির পাশে এসে বসে। মেয়েটি ছেলেটি কে দেখেই উঠে চলে
যাচ্ছিলো। ছেলেটি খুব সাহসের সাথে
মেয়েটি কে ডাক দেয়।
মেয়েটি দাঁড়ায়। ছেলেটি মেয়েটির
কাছে গিয়ে বলতে শুরু করে তার
মনের কথা গুলো। মেয়েটি কিছুই বলতেছে না। শুধু মন দিয়ে ছেলেটির
কথা গুলো শুনে যাচ্ছে। ছেলেটির কথা
শেষ হলে মেয়েটি কিছু না বলেই সেখান
থেকে চলে যায়। আর ছেলেটি অবাক হয়ে
মেয়েটির চলে
যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সেদিন রাতে ছেলেটির একটুও ঘুম
হয়নি। সারা রাত শুধু মেয়েটি কে নিয়ে
ভেবেছে... . .এরপর দুই দিন
মেয়েটি স্কুলে আসেনি। এই দুই দিন
মেয়েটি কে না দেখে ছেলেটি
পাগলের মত হয়ে গেছিল.. . তৃতীয় দিন মেয়েটি স্কুলে আসে। ছেলেটি
এসে মেয়েটি কে মাঠের এক কোণে সেই
গাছতলে বসে বই পড়তে দেখে। ছেলেটি
ভয়ে ভয়ে মেয়েটির কাছে এসে বসে।
মেয়েটি ছেলেটি কে
দেখে ব্যাগ থেকে একটা চিরকুট বের করে ছেলেটির হাতে ধরিয়ে
দিয়ে মেয়েটি চলে যায়। মেয়েটি চলে
যাওয়ার পর ছেলেটি
চিরকুটটা খুলে পড়তে থাকে। যাতে লেখা
ছিল " আমি তাকেই
ভালবাসবো যে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। ভালো তো সবাই বাসতে
পারে, কিন্তু অপেক্ষা করতে পারে কয়
জনে?" চিরকুটটা পড়ে ছেলেটি বুঝতে
পারে মেয়েটি কে পেতে হলে তাকে
অপেক্ষা করতে হবে।
তারপর থেকে ছেলেটি মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করে...
. এর মাঝেই ছেলেটির এস এস সি
পরীক্ষা চলে আসে। আর মেয়েটি
ক্লাস ১০ এ উঠে। ছেলেটির এস এস সি
পরীক্ষা শেষ হল। কলেজে ভর্তি
হল ছেলেটি। এভাবে আরো একটা বছর কেটে যায়। এই সময়ের মধ্যে
ছেলেটি মেয়েটি কে মনে মনে
ভালবেসে যাচ্ছে এবং অপেক্ষা করে
যাচ্ছে মেয়েটির জন্য। . মেয়েটির এস
এস সি পরীক্ষা শেষ হল।
মেয়েটি কলেজে ভর্তি হল ফাস্ট ইয়ারে। আর ছেলেটি সেকেন্ড ইয়ারে
উঠলো.. . হঠাৎ একদিন ছেলেটি মেয়েটি
কে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে
থাকতে দেখলো। যেন কারো জন্য অপেক্ষা
করছিল মেয়েটি। ছেলেটি
লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটি কে ফলো করতে লাগলো। হঠাৎই একটি ছেলে
বাইক নিয়ে এসে মেয়েটির সামনে
থামলো। মেয়েটি একটি হাসি দিয়ে
বাইক এর পিছনে উঠে ছেলেটি কে পেছন
থেকে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর সেখান থেকে তারা চলে গেল। আর এদিকে ছেলেটি শুধু তাদের
চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তারা অনেক দুরে চলে গেল।
সেখান থেকে তাদের ঝাপসা দেখা
যাচ্ছিল। ছেলেটি হঠাৎই বুকের
মাঝে বেথা অনুভব করলো। ছেলেটির আর বুঝতে বাকি রইলো না যে
মেয়েটি অন্য কাউকে ভালবাসে। কিন্তু
কার জন্য এতো দিন অপেক্ষা করলো
ছেলেটি? কাকে এতো ভালবাসলো সে?
কাকে নিয়ে স্বপ্ন
দেখেছিল? কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ছেলেটির চোখে জল চলে
আসে........
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com