ভালোবাসার প্রকারভেদ
-অরণ্য শোন?
-বল
-আমার বিয়ের কথা হচ্ছে।
-ওহ!ছেলে কি করে?
-ইতালি থাকে।
-তাহলে আমার কাছে বিয়ে দিতে তোর বাবা
মায়ের আপত্তি হবার কথা না।
-কেন?তোর যোগ্যতা কি?
-আমি বাংলাদেশে থাকি।
-ফাজিল একটা।
-হ হ অই ছেলে ওখানে গিয়ে ইতালির সরকার
প্রধানের সাথে ডিনার করে। থালা বাসন
মাজে না তো!
-তুই কি করিস? তুই কি করিস?
-আমি মাস্টার্স কম্পলিট করে চাকুরী করব।
-কত টাকা বেতন পাবি?
-তোর বাপ মা টাকাটাই দেখছে তাহলে? ঠিকই
আছে যার যেমন দৃষ্টিভঙ্গি।
-কি বললি তুই? শোন তোর চেহারা আমাকে
দেখাবি না আর।
.
রুপার কথায় আহত হই আমি। অভিমান করে দূরে
দূরে থাকি।একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে
চোখাচোখি হয়,ফুলতে থাকি দুজনেই।চারটা
ক্লাস পেরিয়ে গেলে দুপুর নাগাদ আমাদের
এক ব্যাচ জুনিয়র ইরা আসে আমার কাছে
নোটের জন্য। আমি নোট দেয়ার আশ্বাস দিয়ে
মেয়েটাকে বিদায় করলেই,রুপা এসে রাগে
ফুলেফেপে একাকার!
.
-মেয়ে দেখলেই হুশ থাকে না তোর। তাই না?
-মেয়ে আসলো কোথা থেকে?
-ও! তবে কে আসছিল একটু আগে? হিজড়া?
-ইরা আসছিল, নোটের জন্য।
-আহা! নোটের জন্য! অই শোন। আবার অই মেয়ে
যদি তোর সামনে আসে ওড়না ঠিকমতো
রাখতে বলবি,বলে দিলাম।
-তোর এত জ্বলে কেন? হু? তুই তো ইতালি যাবি
আর আমাকে তোর সামনে আসতে বারণ
করছিস।
-আমার থেকে দূরে থাকলেই তো তোর সুবিধা।
ইরার সাথে বদমাশি করতে পারস আর
মেয়েটাও এসে বলবে ভাইয়া ভাইয়া আপনি
এত ভাল কেন(ব্যঙ্গ করে)
-আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করব(রেগে গিয়ে)
-রাগ করিস কেন? বিয়ের কথা হলেই তো বিয়ে
হয়ে যায় না। মেয়েদের তো এমন কত রকম
বিয়ের কথাই হয়।
-তা ঠিক।
.
দুজনেই চুপচাপ কিছুক্ষণ। তারপর রুপা একটু নত
হয়েই বলে,
.
-আচ্ছা,আমাদের বাচ্চা হলে কার মতন হবে
রে?
-আমার মতন।
-তুই তো কাইল্যা! আমার মতন ফর্সা হবে।
-কি! আমি দেখতে কালো?
-আমার কাছে দাঁড়ালে তো কালোই লাগে।
-তুই তো বয়লার মুরগির মতন সাদা। শোন
আমাদের জুনিয়র আমার মতন হবে দেখতে।
-নাহ। আমার মতন দেখতে আর তোর মতন
মেরিটরিয়াস।
-ওয়াও! হ্যোয়াট এ কম্বিনেশন!কয়টা হবে রে?
-একটা।
-ধ্যাত!এত্তোগুলা হবে। তোকে আম্মু আম্মু করে
ডাকবে সারাদিন আর জ্বালাতন করবে খুব।
আমার হয়ে আমার জুনিয়রগুলো তোকে মজা
দেখাবে।
.
রুপা এবার আমার ডান হাতে ওর সমস্ত শক্তি
একত্র করে চিমটি কাটে। দাগ হয়ে যায়
হাতের ওপর। আমি তাড়াতাড়ি সেখানে
আমার ঠোঁটের আলতো ছোঁয়া দেই,তীব্র ব্যথায়
ইশ! ইশ! করতে থাকি....
.
-ভালো হয়েছে।
-কি ভালো হয়েছে? সরকারি মাল পেয়েছিস?
ব্যথা লাগে না আমার?
-এই জন্যেই তো দিয়েছি।আমি বাসায় গেলেও
যেন আমার কথা মনে থাকে তোর।
-তাই বলে এত জোরে দিবি?
-না হলে তো আমি চোখের আড়াল হলেই
নিশির কথা মনে পড়বে তোর।
-জ্বী না। সকালের রাগটা তুই সুদে আসলে
পুষিয়ে নিলি। ভাবছিস, বুঝি না কিছু?
-ভাল করছি।
-তোদের এই এক সুবিধা। যেখানে সেখানে
ছেলেদের গায়ে হাত তুলতে পারিস। আর
আমরা তা পারি না।
-তুই দিস না মনে হয়?
-আড়ালে দেই।
.
দশ বছর পর আমাদের ডিপার্টমেন্টের
এ্যালমোনাই,প্রোগ্রামটা শেষের দিকেই।
রুপাকে বললাম,
-হাতে চিমটি কেটে দিবি না?
রুপা সজল চোখে এবার তাকাল আমার দিকে।
-অরণ্য, আমাকে তুই আর কত অপরাধী করবি?
-কেন? কি করেছি আমি?
-আমি তো বিয়ে করে সংসার করছি। তুই বিয়ে
করছিস না কেন? নিজেকে অপরাধী মনে হয়
খুব।
-করব তো।
-আর কবে?
-সবে ৩৩ আমার। তোর স্মৃতিগুলো ভুলতে দেখি
আর কতদিন লাগে আমার?
-ক্ষমা করে দিস আমায়।
-নারে। অভিযোগ নেই কোনো।
-অভিযোগ নেই বলেই নিজেকে অপরাধী মনে
হয় খুব, অভিযোগ থাকলে তো বেঁচেই যেতাম।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com