বখাটে ছেলে
মনে হলো কোনো এক মেয়ের গলার কন্ঠ আমার কানে আসছে সামনের দিক থেকে। তাকিয়ে দেখলাম একটি মেয়ে আমাকে ডাকতেছে একটি গাড়ির ভেতর থেকে। দূর থেকে কতো সুন্দর লাগতেছিলো মেয়েটিকে। পাশে গিয়ে বললাম
-(আমি) :- জি বলেন।
-(মেয়েটি) :- আপনি আমাদের কলেজের ড্রেস পরে আছেন, তারমানে আপনি আমাদের কলেজেই পরেন। কিন্তু আজকেতো এক্সাম? আপনি এক্সাম দিবেন না?
[আমিতো মেয়েটির দিকে তাকিয়েই ছিলাম, এতো সুন্দর করে উপর ওয়ালা মেয়েটিকে বানিয়েছেন]
-(মেয়ে) :- Hello, কথা বলছেন না যে?
-(আমি) :- হুম, আমি আপনাদের কলেজে পড়ি। আর এক্সাম দিব তো
-(মেয়ে) :- বাহ..!! এইখানে বসেই কি এক্সাম দিবেন? তা উয়াইফাই দিয়ে দিবেন নাকি ব্লুটু দিয়ে দিবেন
-(আমি) :- হাহাহা, আরে না না ঘাড়ি পাচ্ছিলাম না তো তাই বসে রইলাম
-(মেয়ে) :- তো এখন কি ঘাড়িতে আসবেন নাকি দাওয়াত দিয়ে তুলতে হবে?
(তারপর আমি গিয়ে গাড়িতে বসলাম। বসার পর বললাম)
-(আমি) :- আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি আজকে না থাকলে হয়তো আমি পরিক্ষা দিতেই পারতাম না? আর আমার মায়ের সপ্নও পূরন করতে পারতাম না। যাই হউক Thank you very very much.
-(মেয়ে) :- হুম, ঠিকাছে আর Thanks দিতে হবে না।
[ আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম, কিছুতেই চোখ ফিরাতে পারছিলাম না]
-(মেয়ে) :- Hello - কি দেখছেন এইভাবে তাকিয়ে?
-(আমি) :- ওহ সরি, নাহ কিছুনা। ভাবছিলাম আমাকে যে আপনি হেল্প করলেন সেটার রিন কিভাবে শুধ করব?
-(মেয়ে) :- আরে থাক থাক আর রিন শুধ করতে হবে না।
-(আমি) :- আচ্ছা, আমাকে যে এতো বড় উপকার করল তার নামটা কি আমি জানতে পারি?
-(মেয়ে) :- হুম অবশ্যই, আমি রিম - আপনি?
-(আমি) :- আমি বাবুল
-(রিম) :- হাহাহাহাহা
[এই কি হলো? মেয়েটি এইভাবে হাসতেছে কেন? তাহলে কি আমি কোনো ভুতের ঘাড়িতে উঠে পড়লাম? এইভাবে হাসার কারণ কি? হাসিটা অবশ্য সুন্দর কিন্তু কারণ ছাড়াতো মনে হয় ভুতেরাই হাসে ]
-(আমি) :- কি হলো হাসছেন কেন?
-(রিম) :- না সরি কিছুনা। আচ্ছা গ্রাম থেকে এসেছেন মনে হয়?
[এখন বুঝতে পারলাম মেয়েটি কেন হাসছিলো]
-(আমি) :- হুম। উন্নত মানের পড়ালেখার জন্য শহরে এসেছি।
-(রিম) :- Oh Good, নাইস টু মিট ইউ।
-(আমি) :- Thanks. সেইম টু ইউ।
[তারপর কথা বলতে বলতে কলেজে চলে গেলাম, কলেজে গিয়ে এক্সাম দিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে মেয়েটির কথা ভাবছিলাম। মনে মনে মেয়েটিকে খুজছিলাম, কিন্তু পেলাম না। কলেজ থেকে বের হয়ে সকালের কথা মনে করছিলাম আর ভাবতেছিলাম কি ভালো একটা মেয়ে? হয়তো অন্যের উপকার করতে খুব ভালোবাসে? ]
তারপর রিক্সায় উঠে বাসায় চলে আসলাম। প্রতিদিন কলেজ থেকে এসেই মায়ের সাথে কথা হয় তাই মাকে কল দিব বলে পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইল নাই। একি আমার মোবাইল কোথায় গেল? দুইদিন হয়নি মোবাইল কিনলাম আর তার মধ্যেই হারিয়ে ফেললাম? হঠাৎ মনে হলো মোবাইলে একটা কল দেই তাই বাসা থেকে বের হয়ে বাসার সামনের করিম চাচার দোকানে গিয়ে উনার মোবাইল দিয়ে আমার মোবাইলে একটা কল দিলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরতেছে না? অবশেষে কেটে গেল। আবার ট্রাই করলাম রিং হচ্ছে...হুম এইতো কেউ একজন রিসিভ করলো
-(আমি) :- আসসালামু আলাইকুম, কে বলতেছেন?
(ওদিক থেকে একটি মেয়ের কণ্ঠে জবাব আসল)
-(মেয়ে) :- আপনি কি বাবুল?
(আরেহ কণ্ঠটাতো খুব পরিচিত মনে হচ্ছে?)
-(আমি) :- জি, কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
-(মেয়ে) :- আরে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন আমায়? আমি রিম বলছি। আপনি কলেজে যাওয়ার সময় আপনার ফোন আমার গাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন?
-(আমি) :- ওহ আচ্ছা আপনি? তাইতো কন্ঠ পরিচিত পরিচিত লাগছিলো। না আপনাকে ভুলিনাই আসলে মাকে কল দিব বলে ফোনটা খুজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিলাম, যাই হউক আমিতো ভাবছিলাম চুরি হয়ে গেছে?
-(রিম) :- হুম কালকে কলেজ এসে ফোন নিয়ে নিয়েন।
-(আমি) :- আচ্ছা ঠিকাছে।
এই কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
রাত্রে ঘুমাতে গিয়ে খুব বেশি মিস করতেছিলাম রিমকে। তাহলে কি আমি রিমের প্রেমে পড়ে গেলাম? না না এ হতে পারে না, এখন এইসবে জরিয়ে নিজের পড়ালেখা নষ্ঠ করতে চাইনা, তাছাড়া আমি গরিবের ছেলে আর রিম বড়লোকের মেয়ে আমার আর রিমের মধ্যে রাত দিন তফাৎ। ওর সাথে আমার কি রকম হবে? নানা এসব কি ভাবছি আমি? এই কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেও পারিনি।
পরেরদিন কলেজে চলে গেলাম, অন্যদিনের মতো আজকে আর রিক্সা পেতে দেরি হলোনা। কলেজে গিয়ে আবিরকে খুজছিলাম কিন্তু আবির মনে হয় এখনো কলেজে আসে নি? মনে মনে রিমকেও খুজছিলাম কিন্তু রিমকেও পেলাম না। তাই কলেজের গেইটের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম, খানিকটা অপেক্ষা করার পর দেখি রিমের গাড়ি আসতেছে। গাড়ি পার্ক করে রিম গাড়ি থেকে বের হলো কিন্তু একি রিমের সাথে আবিরও গাড়ি থেকে বেড় হচ্ছে। তাহলে কি আমার মতো আবিরও লিফট পেয়েছে?এদিকে রিম আর আবির দুইজন আমার দিকেই আসতেছে। রিম কিছু বলার আগেই আবির আমাকে বলল
-(আবির) :- কিরে দুস্ত, আজ আমার আগেও এসে পড়লি যে?
-(আমি) :- আজকে বাসা থেকে বের হয়েই রিক্সা পেয়ে গেছি।
(এমন সময় রিম বলল)
-(রিম) :- এই নিন আপনার মোবাইল।
-(আমি) :- Thank You.
-(রিম) :- হুম,Welcome.
-(আবির) :- আরে তরা দেখতেছি একজন আরেকজনকে আগের থেকেই চিনিস? আর বাবুল তোর মোবাইল রিমের কাছে কিভাবে গেল?
(আবিরকে সব খুলে বললাম) আর বলালাম
-(আমি) :- কিন্তু তুই রিমকে চিনিস কিভাবে?
-(আবির) :- রিমতো আমার ছোট বেলার বন্ধু। সেই ক্লাস 1 থেকে আমাদের পরিচয়।
-(আমি) :- ওহ, ভালোইতো। কিন্তু তুইতো আমাকে রিমের কথা কখনো বললি না?
-(আবির) :- মনেই ছিলো না।
[এই বলে আমরা এক্সাম দিতে চলে গেলাম কলেজে। কিন্তু আমি মনে হয় রিমের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। এক্সামের সময়ও ওর কথা মনে হয়। তাহলে কি সত্যি আমি রিমের প্রেমে পরে গেছি?]
পরিক্ষা দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম, আড্ডা শেষে আবিরকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম কলেজ থেকে। আবির আমাকে কিছু একটা বলতেছিলো কিন্তু আমার মনতো রিমের ভালোবাসার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। রিমের কথা ভাবতে ভাবতে হাঠছিলাম হঠাৎ মনে হলো আমার নাকে আর কপালে ব্যথা করতেছে। হয়তো কেউ একজন লাটি দিয়ে আঘাত করছে। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা কারেন্টের পিলার আমার সামনে। মনে হয় এইটায় ধাক্কা খাইছি। কিন্তু চারিদিক থেকে হাসা হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে কেন? তাকিয়ে দেখলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসতেছে। এদিকে আবিরও হাসছিলো। আমি আর কাউকে কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রিক্সায় উঠে বাসায় চলে আসলাম। ভাবছিলাম এইগুলা কি হচ্ছে আমার সাথে? কেনইবা আমি রিমের কথা মনে করছি? রাত্রে ঘুম আসছিলোনা রিমের কথাই মনে হচ্ছিলো। তাহলে কি আমি আবিরকে সব কিছু বলে দিব? কিন্তু আবির কি ভাববে আমায় নিয়ে? এইসব ভেবে ভেবে কখন ঘুমিয়ে পরি বুঝতেই পারিনি।
পরদিন কলেজে গিয়ে দেখি রিম আর আবির একসাথে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। আমি পিছন থেকে আবিরকে ডাক দিলাম।
-(আমি) :- এই আবির, শুনছিস?
(দুই জনই পিছন দিকে তাকালো)
-(রিম) :- হাই
-(আমি) :- হ্যালো।
-(আবির) :- কিরে? কিছু বলবি?
-(আমি) :- হুম তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
-(আবির) :- হুম বল,কি বলবি?
-(আমি) :- রিম আপনি ক্লাসে যান আমরা আসতেছি।
(আমার কথা শুনে রিম ক্লাসে চলে গেল)
-(আমি) :- আবির দুস্ত, কিভাবে যে কথাটা তোকে বলব? যদি রাগ করিস?
-(আবির) :- যেভাবে কথা বলতেছিস মনে হচ্ছে আমি একটা মেয়ে আর আমাকে প্রপোজ করছিস? হাহাহা
-(আমি) :- দূর ব্যাটা, ফাজলামি করিস নাতো। আমি মরছি টেনশনে আর তুই ফাজলামি করতেছিস?
-(আবির) :- কি বলবি তাড়াতাড়ি বল, এদিকে এক্সাম শুরু হতে চলেছে।
-(আমি) :- হুম, আমি একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।
-(আবির) :- হুম আমি জানিতো, আর তাও জানি মেয়েটি কে। রিম তো তাই না রে?
-(আমি) :- তুই জানলি কিভাবে?
-(আমি) :- রিমের সাথে পরিচয়ের পর থেকে তুই অন্যরকম হয়ে গেছিস। সারাদিন অন্য মনস্ক থাকিস, তুই আজ পর্যন্ত কলেজে আসার পর কোনো মেয়ের দিকে তাকালি না কিন্তু রিমের দিকে হা করে তাকিয়ে তাকিস। আর কালকে অন্য মনস্ক হয়ে কারেন্টের পিলারের সাথে ধাক্কা খেলি?
[বাহ আবিরতো তুলনার চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান, নিজের উপর প্রাউড ফিল হচ্ছে আবিরের মতো বন্ধু পেয়ে]
-(আবির) :- দুস্ত তুই চিন্তা করিস না, আমিতো আছি। একটু অপেক্ষা কর। আস্তে আস্তে সব হবে। তোদের রিলেশনও আমি করে দিব।
-(আমি) :- I Love You দুস্ত।
(এই কথা বলে দিলাম আবিরের গালে জোড়ে একটা চুম্মা)
-(আবির) :- আবে শালা, কি করলি এইটা, কেউ দেখলে আমাদের কি ভাববে, গেয় ভাববে শালা। আর চিন্তা করিস না। চল এখন এক্সাম দিতে যাই।
( মনে মনে ভাবছিলাম বাহ আবিরকে বলার আগেই সে নিজ থেকেই বলে দিল আমাদের রিলেশন করিয়ে দিবে)
তারপর এক্সাম দিতে চলে গেলাম।
কোনোরকম সব এক্সাম দিয়ে দিলাম। মোটামুটি ভালই হয়েছে। রিমের প্রেমে না পড়লে হয়তো আরও ভালো হতো।
এদিকে এক্সাম পরে কলেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
অনেক গভীর রাত, ঘুম আসেনা রিমের কথা ভেবে ভেবে। আজ দুইদিন হয়ে গেল কলেজ বন্ধ। দুইদিন ধরে রিমকে দেখিনি। খুব মিস করছিলাম একা একা বসে। কি করব এখন? মনে হচ্ছে কেউ কল দিছে?
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আবিরের কল। ভাবছিলাম রিম কল দিছে কিন্তু তা হলো না। ফোন রিসিভ করলাম।
-(আমি) :- হ্যালো, দুস্ত কেমন আছিস?
-(আবির) :- শালার ব্যাটা, সালাম দিতে ভুলে গেছিস।
-(আমি) :- মনটা ভালো নাই দুস্ত।
-(আবির) :- ভাবিস না আছিতো আমি। শুন কাল একবার কপি শপে দেখা করিস সিরিয়াস মেটার কিন্তু।
-(আমি) :- আচ্ছা ঠিকাছে।
(এই বলে ফোনটা রেখে দিলাম)
রিমের কথা ভাবছিলাম, ভাবতে ভাবতে সপ্নে চলে গেলাম। আমি আর রিম একে অপরকে হাত ধরে নদীর পার দিয়ে হাঠছিলাম। একসময় গল্প করতে করতে রিম আমাকে ধাক্কা দিয়ে নদীর পানিতে ফেলে দিল। আর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কি বেপার শরিলে ব্যাথা করতেছে কেন? তাকিয়ে দেখলাম আমি বিচানা থেকে নিচে পরে গেছি। মোবাইল হাতে নিলাম সময় দেখার জন্য। কিন্তু এদিকে আবির ২ টা কল দিছিলো একটু আগে আর অন্য একটি নাম্বার থেকে প্রায় ১৫ টি কল এসেছে। আমি প্রথমে আবিরকে কল দিলাম। আবির ফোন রিসিভ করেই ভাষণ শুরু করে দিলো।
-(আবির) :- ___________________________চলবে
[ ৩য় পাঠ আসছে খুব তাড়াতাড়ি । আগের পাঠ যারা পড়েন নাই তারা আমার টাইমলাইনে গিয়ে পড়ে নিতে পারেন। ধন্যবাদ, সেই সব পাঠকদের যারা এতো কষ্ঠ করে গল্পটা পড়েছেন, আশা করি আগামীতে আরও ভালো ভালো গল্প আপনাদের উপহার দিতে পারব। সবার দুয়া চেয়ে গল্পের ২য় পাঠ শেষ করলাম, ৩য় পাঠ যদি খুজে না পান তাহলে আমার টাইমলাইনে পাবেন, আমাকে এড দিতে পারেন। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি,ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ]
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com