আমার বয়স যখন মাত্র ষোল বছর
আমার বয়স যখন মাত্র ষোল বছর। তখন বিয়ে করি এক ১৩ বছরের মেয়েকে।
বাবা মার ইচ্ছেতেই বিয়ে হয়েছিল আমাদের।
নিজেই লুঙ্গি সামলে রাখতে পারতামনা, রাতে ঘুমুলে গিট্টু দিতাম। অথচ সেই আমি তখন চেষ্টা করতাম ছোট্ট বউটাকে শাড়ি পরিয়ে দিতে।
নিজেই পেতামনা পকেট খরচের টাকা,অথচ বউয়ের জন্য আচার কিনতে হত।
খুব সুন্দর ছিলো দিনগুলি। ভালবাসা যেন অজান্তেই তৈরি হয়েগেল মনের ভিতর। প্রথম কেউ বলতে সেই ছিল আমার জীবনে।
সে ছিল খুব ছোট, হাসত খেলত। বাবা মা তার কান্ড দেখে হাসতেন।
আমিও হাসতাম এইভেবে যে এটাই আমার বউ।
ছোট্ট মিষ্টি সোনা বউ। সারাদিন হৈহুল্লোড়ে
থেকে যখন রাতে সে বলত মাথা ব্যাথা করছে,মাথা টিপে দিতাম। পা দুটোও টিপে দিতাম। আমার বউতো, আমিই তো তার সব। আজ অবুজ কালতো বুঝবেই।
তখন আরোবেশি ভালবাসবে আমাকে।
দিন যেতে থাকলো। বউয়ের বয়স যখন
সতের, এখন আর সে হাসেনা খেলেনা। এখন
অনেক কিছুই বোঝে সে।শ্বশুর বাড়িতে
গেলে একাকি থাকতাম আমি।
সে আমায় বলত, তুমি আমার সাথে বেড়ুবেনা,আমার লজ্জা করে।
কিছু বলতামনা, কষ্ট লুকিয়ে রাখতাম।
আসার সময় বায়না ধরত তাকে রেখে যেতে।
রেখে আসতাম। বাড়ি এসে প্রতিদিন ফোন করতাম তাকে। প্রতিটা কলই ওয়েটিং থাকত। মেসেজ গুলোর উত্তর না পেয়ে লজ্জায় আর মেসেজ করতামনা। তিনমাস পর যখন শ্বশুরবাড়ি যেতাম বউয়ের
প্রথমবাক্য ছিলো তিনদিন থেকে চলে যাবে।
রাতের আধারে চুপিচুপি তার ফোনটা অন করে
দেখতাম প্রতি মিনিটে কারো প্রেমময় মেসেজে চাপা পরেছে আমার মেসেজগুলো।
কষ্ট পেতে থাকলাম আমি। সবাইকে বলে শাসন
করাহল তাকে।সেই থেকেই শুরু।
তারপর আমার বউয়ের বয়স যখন উনিশ,আমার বয়স তখন বাইশ। একটা মেয়ে এল কোলজুড়ে।
আনন্দের সীমা ছিলনা আমার, আমার পরিবারের। তারপর মেয়ের বয়স যখন মাত্র ছমাস। আধো আধো দুএকটা শব্দে ডাকে আমার মেয়ে। যখনি বাবা
বলে ডাকদিত কলিজা যেন ঠান্ডা হয়েযেত আমার। বউ তখন অন্য দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত। তখনো ফোনে কথা বলত বুঝতাম।আমার প্রতি দুর্ব্যবহারই সেটা প্রমাণ করেদিত। কিন্তু মেয়ের কথাভেবে কিছু বলতামনা।
তারপর এলো সেদিন, যেদিন আমি কেঁদেছিলাম। স্বামী হয়ে তার দুটো পা জড়িয়ে ধরেছিলাম। ভিক্ষে চেয়েছিলাম মেয়ের মা ডাকার অধিকার। কিন্তু সে আমাকে ত্যাগ করে চলেগেল। ৩ টা ৩৮ মিনিটে সই করলাম ডিভোর্স পেপারে। সে নতুন ভালবাসার মানুষকে নিয়ে চলে গেল অনেক দুরে। মা হারা হল আমার মেয়েটা।
আমার মেয়ের বয়স যখন দশ বছর। নিজ হাতে তাকে আমি শাড়ি পরাতাম। ও যখন কাঁদত মার জন্যে ওকে কোলে তুলে নিজেও কাঁদতাম। মার অভাব কি কখনো পুরনহয়?। নিজের মাকে ডাকতে গিয়ে কান্না আসত আমার।আমার মেয়ের যে মা নেই। ও ডাকবে কাকে?
রান্না করতাম, সাজিয়ে দিতাম নিজে। আমি আর মেয়ে এই আমার দুনিয়া।
এই আমার পৃথিবী। আর বিয়ে করিনি। কারন ভালবাসতাম তাকে, তখনো এখনো।
মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। আমি আবার একা হয়ে যাবো।
মেয়ের অনিচ্ছা সত্বেও ওর মাকে খবর দিয়েছি। কাল এসেছিলো সে।
অনেকদিন পর দেখলাম তাকে। ছমাস তিনদিন, বাইশ মিনিট কম চব্বিশ বছর পর দেখলাম।
কল্পনায় ভেবেছিলাম এখনো সেই ছোট্টই আছে। কিন্তু নাহ, আমার মতই চুলে পাক ধরেছে ওর।
দুটো ছেলের মা আজ ও।
আমি সেদিন ভালোবাসার কাছে হার মেনে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেমন আছো?
আজো কি তোমার মাথা, পা ব্যাথা করে? সে শুধু মাথা নেড়েছিল।
কি বুঝিয়েছে তা দেখতে পাইনি। কারন চোখ দুটো তখন জলে ভেজা ছিল।
তাছাড়া বয়স তো আর আগের মত নেই। কিন্তু আমার মেয়ে দেখা করেনি ওর সাথে।
পর্দার আড়াল থেকেই একটা প্রশ্ন করেছিল আমার মেয়ে,
আমার বাবার চব্বিশটা বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন কি?
যদি না পারেন তাহলে এসো না কোনদিন। আমার বাবাই আমার মা।
আমি প্রাউডফিল করি বাবা ডেকে। আপনাকে মা ডাকার কোন ইচ্ছে নেই আমার।
মেয়েরা এমনই হয়..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com