Breaking News

ভালবাসার সত্তি ঘটনা (জীবন থেকে নেয়া )

জীবন থেকে নেয়া



[প্রথমেই বলে রাখি এটা বানানো বা কাল্পনিক গল্প না পুরোটাই বাস্তব তাই হয়ত আমার অন্য সব গল্পের মত পড়ে মজা পাবেন না।]




 ______ দূর ছাই আজও নুসরাতকে একা পেলাম না বুঝলামনা প্রত্যেকদিন সাথে করে বান্ধবীটাকে নিয়ে আসতে হবে কেন। আবার কালকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমার পরিচয়ই তো দেয়া হল না আমি সাইফ এবার SSC পরীক্ষা দিচ্ছি আর নুসরাত ৯ম শ্রেণিতে পড়ে। প্রায় গত ২০দিন ধরে প্রপোজ করার জন্য সুযোগ খুজতেছি কিন্তু একা পাচ্ছি না আর সাথে যে বান্ধবীটাকে নিয়ে আসে ওটাকে বেশ সুবিধার মনে হয় না তার উপর আবার আমার স্কুলেরই এক স্যারের মেয়ে। পরে যদি আবার আমার নামে বিচার দেয় এই ভয়তে ও সাথে থাকলে প্রপোজ করতে যেতে পারছি না। আরও ১০-১২দিন ঘুরলাম কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না।

 এলাকার এক জুনিয়র ভাই ছিল বন্ধুর মতই সব সময় এক সাথে থাকতাম ওর কাছে সব কিছু সেয়ার করতাম এই বিষয়টাও সেয়ার করলাম ও বলল দেখি ভাই কিছু করতে পারি কিনা দেখতে দেখতে SSC পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। পরীক্ষা জন্য ব্যাস্ত হয়ে পরলাম আর নুসরাতেরআশা ও প্রায় ছেড়ে দিলাম। পরীক্ষা শেষে হঠাৎ একদিন ছোট ভাই ফোন দিয়ে বলল.... রাব্বী→ভাই কাজ সাইরা ফালাইছি আমি→কি করছ? রাব্বী→ভাই নুসরাতকে বলছি তুমি তারে পছন্দ কর আমি→তো নুসরাত কি কইল? রাব্বী→ভাই তোমারে দেখা করতে কইছে আমি→আমি পারুমু না এর পর থেকে নুসরাতকে দেখলে ভয়ে ভয়ে থাকতাম কি না কি বলে তাই ওকে দেখলেই দূরে দূরে থাকতাম পরীক্ষা শেষ তাই কোন কাজ নেই সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে,ক্রিকেট খেলে সময় কাটাতাম হঠাৎ করে শহরের কিছু বড় ভাই সিদ্ধান্ত নিল এবারের পহেলা বৈশাখে ৫দিন ব্যাপি মেলা এবং কনসার্টের আয়োজন করবে মনে মনে ভাবলাম যাক তাহলে সময়টা ভালই কাটবে। 

বিকালে মেলা এবং রাতে কনসার্ট। ১ম দিন বিকালে বন্ধুবান্ধবের সাথে অন্য একটা মেলায় গেলাম রাতে কনসার্টে এসে দেখলাম নুসরাত ওআসছে। দুটো বন্ধুকে সাথে নিয়ে ওর পিছনেই দাড়ালাম যতক্ষণ কনসার্ট দেখেছি তার চেয়ে নুসরাতকে বেশি দেখেছি বিষয়টা নুসরাতও খেয়াল করেছে তাই কিছুক্ষণ পর পর পিছনে তাকাত। কনসার্ট শেষে বাসায় ফেরার সময় ছোট ভাইকে দিয়ে একটা গোলাপ পাঠালাম আর নববর্ষেরর শুভেচ্ছা জানালাম। 

পরের দিন ছোট ভাইকে দিয়ে খবর পাঠাল গোলাপ খুজে পায়নি তাই খালিহাতেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। দেখতে দেখতে ৪দিন কেটে গেল আজ কনসার্টের শেষ দিন তাই আজ আমার ফোন নম্বর নিয়েছে। ৪-৫দিন কেটে গেল কিন্তু কোন খবর নেই ২১ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করেই একটা অচেনা নম্বর থেকে ম্যাসেজ আসল "ডিনার করেছেন" এর পর থেকে শুরু যখনই ফ্রী থাকত ফোন দিত/ম্যাসেজ করত। অন্য সকল রিলেশনশিপের মতই আমাদের রিলেশনশিপটাও এগুতে থাকল এমনকি অন্য সব রিলেশনশিপের চেয়ে আমাদের রিলেশনশিপটা ভালোই চলছিল। আমাদের উপজেলা শহরটা তেমন বড় না বিধায় শহরের ৮০% লোকই পরিচিত ছিল তবুও এই মানুষদের চোখ ফাকি দিয়ে ফুসকা খাওয়া,দুজনে মিলে ঘুরতে যাওয়া,প্রত্যেকদিন দেখা করা,বৃষ্টিতে ভেজা সবই চলত। নুসরাতেরর বাসাটা ছিল রাস্তার পাসে আর ঠিক রাস্তার পাশেই ওর রুমের একটা জানালা ছিল এমন অনেক রাত্রি কেটেছে এই জানালায় দাড়িয়ে সারা রাত কথা বলেছি। আমি আমার বাসায় বলতাম বন্ধুর বাসায় ঘুমোতে যাই কিন্তু বন্ধুর বাসায় না গিয়ে সারারাত নুসরাতেরর সাথে কথা বলতাম ফজরের আযান দিলে নামাজ পড়ে বাসায় এসে ঘুমাতাম।


 তবে মাঝে মাঝে ওর পাগলামির কারনে রাগ করতাম কিন্তু কোন বার একদিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। ভালোই কাটছিল দিনগুলো দেখতে দেখতে প্রায় দেড় বছর কেটে গেল। নুসরাতের SSC এবং আমার HSC প্রায় চলে এসেছে মূল সমস্যাটার সৃষ্টি হয় নুসরাতের টেস্ট পরীক্ষার কিছুদিন আগে। নুসরাতের এলাকায় এক বড় ভাই ছিল যিনি নুসরাতকে পছন্দ করত যেটা আমিওযানতাম এবং বড় ভাই ওযানত আমার সাথে নুসরাতের রিলেশন আছে তবুও তিনি নুসরাতকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে ভালবাসার কথা বলত। বড় ভাই একটা রাজনীতিক দলের স্থানীয় নেতা ছিল তাই তেমন কিছু বলার ও সুযোগ ছিল না। হঠাৎ করে একদিন বড় ভাইয়ের সাথে নুসরাতের ফ্যামিলির সাথে কিছু ঝামেলা হয় এক পর্যায়ে তিনি আমার সাথে নুসরাতের রিলেশন আছে এটা নুসরাতের বাসায় বলে দেয়।

 এরপরে প্রায় ১মাস নুসরাতের ফ্যামিলি আমার সাথে নুসরাতের কোন যোগাযোগ করতে দেয়নি আমি যোগাযোগের চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করতে পারিনি। এমনকি প্রাইভেট,স্কুল,মার্কেট সব যায়গায় ওর সাথে কেউ না কেউ পাহারা দিত যাতে আমি যোগাযোগ না করতে পারি। হঠাৎ একদিন রাতে নুসরাত আমাকে ফোন দিয়ে যানতে চাইল আমি ওকে ভালবাসি কি না যদি ভালবাসি তাহলে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে। আমি ওকে বুঝালাম ১৭-১৮ বছর বয়সে একটা ছেলের জীবন কেবল শুরু হয়,লেখাপড়া শেষ করতে করতে আরও ৮-১০বছর সময় লাগবে। কিন্তু ও কিছুই বুঝতে চাইল না ওর কথা একটাই আমার মা-বাবাকে ওর ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে। এই ঘটনার পরে আমার মাথায় কোন কাজই করছিল না আর কোন বন্ধু-বান্ধবকেও বিষয়টা জানাইনি। এক সপ্তাহ চিন্তা ভাবনা করলাম কিন্তু কিছুই হল না অন্যদিকে নুসরাত সকাল/বিকাল ফোন দিয়ে একই কথা কতদূর আগাইছি। আমি নুসরাতকে বললাম আমাকে ৬ মাস সময় দাও দুজনের পরীক্ষা শেষ হোক তারপরে না হয় বাসায় জানাই কিন্তু ও তাও মানল না শেষে কিছু করতে না পেরে ২-৩ টা কাছের বন্ধুকে বিষয়টা বলি কিন্তু ওরাও কোন সমাধান দিতে পারে না।

 সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেই আমার বাসায় জানাব কিন্তু বাসায় বলার মত সাহস করতে পারছি না। দিন-দিন নুসরাত আরও বেশি চাপ দিচ্ছে। আমাকে দিয়ে হবে না তাই একটা বন্ধুকে দিয়ে বাসায় ফোন দিয়ে সব জানালাম। ভয়ে ভয়ে বাসায় গেলাম আল্লাহই জানে আমার অবস্থা কি হয়। বাসায় আসার পরে আম্মা কিছু বললো না এমনকি আমার সাথে কোন কথাই বলল না এভাবে ২দিন কেটে গেল হঠাৎ করে আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়ল। (আম্মার একটু হার্টে সমস্যা আছে বেশি টেনসন করলেই হার্টবিট বেড়ে যায়) আরও ২দিন এভাবে কেটে গেল ৩য় দিন বিকালে আম্মা মোটামুটি সুস্থ হল এরপরে আম্মা এবং আমার এক আন্টি আমার রুমে আসল বুঝলাম হয়ত কিছু বলবে তাই আমিই বললাম আন্টি কিছু বলবা। আন্টিঃ বস কথা আছে। আমিঃবল ~তোর সাথে নুসরাত নামে কারো সাথে সম্পর্ক আছে? ~হ্যা ~তারমানে যা যা শুনছি সব সত্য ~হুম ~আমি তোর আব্বা/আম্মা দুজনের সাথে কথা বলছি তারা তোকে ২টা অপশন দিয়েছে যেকোন একটা বেছে নিবি ~কি অপশন? ~হয় তোর আব্বা আম্মাকে ভুলে যাবি না হয় নুসরাতকে এখন তুই চিন্তা কর কি করবি আমি আর কিছু না বলে বাসাথেকে বাহিরে চলে আসলাম। বাসা দিয়ে এটা বলছে কাউকে আর এই কথা বললাম না ৩-৪দিন অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু আব্বা আম্মার মন পাল্টাতে পারলাম না। 

এরপরে অনেক চিন্তা করলাম কিন্তু চিন্তা করে একটাই উত্তর পেলাম আমি বাস্তবতার কাছে হেরে গেছি। পরেরদিন আমার জন্মদিন ছিল আর এদিনই নিজেকে নিজে জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা দিলাম। বিকালে নুসরাতকে ফোন দিলাম কিন্তু ও তখন বাসায় ছিল না রাতে আমাকে ফোন দিল ~হ্যা ফোন দিয়েছিলা কিছু বলবা? ~নুসরাত এটাই তোমার সাথে আমার শেষ কথা আমার পক্ষে এই মুহূর্তে কিছু করা সম্ভব না এরপরে প্রায় ৪৫মিনিট আমাকে বিভিন্ন খারাপ কথা বলছে আমি আর কিছুই বলিনি। ওর কথা শেষে শুধু এতটুকুই বলছি ভাল থেক এই কথাটার উত্তরটাও একটা খারাপ ভাষায় দিয়েছে।যাক আমাকে খারাপ ভাবলেও আমার বাবা,মাকে তো কেউ খারাপ ভাবেনি এটাই আমার শান্তনা। এভাবেই তিলেতিলে গড়া কিছু স্বপ্ন কাচের মত ভেঙ্গে গিয়েছে। ভাঙ্গবেই না কেন উপকার করার মানুষ না থাকলেও আপকার করার মানুষের অভাব নেই।


এই ঝামেলাটার সময় ৩-৪টা বন্ধু ছাড়া সাহায্য করার মত কাউকে পাশে পাইনি এমনকি যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি তাকেও পাইনি। সবশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে এটাই বলতে চাই আমার মত ১৭-১৮বছর বয়সে কেউ স্বপ্ন দেইখো না তাহলে হয়ত স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাবে। উৎসর্গঃকিছু কাছের বন্ধুদের।



 লেখাঃA.h. Shuvo(সেই ছেলেটা)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com